যত দিন হাসিনা ভারতে থাকবে, তত দিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না: সারজিস
Published: 29th, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘যত দিন শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত থাকবে, তত দিন সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। দেশটি (ভারত) যদি সম্পর্ক ভালো করতে চায়, তাহলে প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের সঙ্গে সম্মান ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক হতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌর শহরের চোরঙ্গী মোড়ে আয়োজিত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘এই বাংলাদেশ শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর কোনো দেশের দাসত্ব করার দেশ নয়। প্রয়োজনে আরও জীবন দিব, রক্ত দিব; কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব কোনো দেশের কাছে বিকিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। নিজের দেশ নিজের মা। ফলে দেশকে নিজের বুক দিয়ে আগলে রাখতে হবে।’
‘পুশ ইন’ নিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে ভারত তাদের এজেন্ট ও সাধারণ নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা তাদের একটা ষড়যন্ত্র। শুধু বিজিবি নয়, আপনারা সবাই সীমান্তের একেকজন সীমান্তরক্ষী। যুবসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। কোনো আপস নয়, সর্বদা লড়াই চলবে।’
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বাংলাদেশের টাকা লুটপাট করা হয়েছে আর ভারতের আদানিদের পকেট ভারী করা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে খুনি হাসিনার পরিবার ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের কাছ থেকে লক্ষকোটি টাকা পার্সেন্টেজ নিয়েছে। এই চুরির টাকা দিয়ে তারা আজ দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আমার-আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। টাকা চুরি না করলে তারা আজ কীভাবে দেশের বাইরে আলিশান জীবন যাপন করছে।’
পথসভায় সারজিস আলমের সঙ্গে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাসের খান, চিকিৎসক মাহমুদা মিতু, সাদিয়া ফারজানা, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম, সংগঠক রাসেল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ দিনব্যাপী লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলায় এনসিপি নেতাদের একাধিক পথসভা ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
সেই পুরোনো ‘কালপ্রিটরাই’ আবার প্রশাসনে ফিরে এসেছে: সারজিস
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে আমরা একদিন রাস্তায় নেমেছিলাম, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরাই আবার ফিরে এসেছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে।’
আজ রোববার বিকেলে শেরপুরের থানা মোড় এলাকায় আয়োজিত পথসভায় সারজিস আলম এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি সিস্টেম একসময় ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ এবং সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর দখলে ছিল। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই পুরোনো কালপ্রিটরাই নতুনরূপে আবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফিরে এসেছে।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ভূমি অফিস থেকে সদর হাসপাতাল, থানা থেকে পৌরসভা—প্রতিটি জায়গায় কিছু লোক এখনো আছে, যারা জনগণের সেবক না হয়ে শোষক হয়ে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সেই প্রতিরোধের রাজনীতি করি; যারা দেশ ও জনগণের স্বার্থে ক্ষতিকর, তাদের মুখোশ টেনে ফেলাই আমাদের লক্ষ্য।’
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা আর কাউকে অন্ধভাবে পীর মানব না। কেউ ভালো করলে বলব ভালো, কিন্তু খারাপ করলে সে যে–ই হোক, তার বিরুদ্ধেও আমরা কথা বলব। আমাদের বিবেক আমরা আর দল, মার্কা, গোষ্ঠী কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক রাখব না।’
‘পুশ ইন’ ইস্যুতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, পুশ ইন করতে হলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের করুন, শেখ হাসিনাকে করুন। সাধারণ জনগণকে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়া চলবে না।
পথসভায় নাহিদ বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে যে গণ–অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল, তাতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে দিল্লিতে পালিয়ে যান। এখন দিল্লি আওয়ামী লীগের শত শত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছে। অথচ শেরপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত সাধারণ জনগণকে বাংলাদেশে পুশ ইন করার চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, সীমান্তে কোনো পুশ ইন ও হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কারও বিরুদ্ধে এখনো কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। বরং আওয়ামী লীগের দোসররা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে বসে আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গোপালগঞ্জে দেখেছি কীভাবে সন্ত্রাসীরা ছোবল মারতে চেয়েছিল। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, শুধু গোপালগঞ্জ নয়, বাংলাদেশে কোথাও মুজিববাদকে দাঁড়াতে দেব না।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘যারা এখনো প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ও এমপিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন—তাঁদের বিরুদ্ধেও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মো. লিখন। সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুবশক্তির সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম।
পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) প্রীতম সোহাগ, কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম খান পাঠান প্রমুখ।
পথসভার আগে শেরপুর সরকারি কলেজের সামনের সড়কে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করা হয়। পদযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ে পথসভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়। পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা জামালপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।