পুলিশ অফিসার হিসেবে জার্নিটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল: বাঁধন
Published: 4th, June 2025 GMT
২০০৯ সালে ঢাকার আজীমপুরে ঘটে যাওয়া একটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা নিয়েই নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। ঈদে মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটি। মুক্তি উপলক্ষে আজ বুধবার এফডিসিতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সিনেমাটির ট্রেলার প্রকাশ করা হয়।
নির্মাতা সানি সানোয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, পূজা এগনেস ক্রুজ অভিনেতা ফারুক আহমেদ, শরীফ সিরাজসহ সিনেমার কলাকুশলীরা।
খুন রহস্যে ঘেরা একটি বিরল সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত কাহিনীর উপর ভিত্তি করে নির্মিত সিনেমায় একজন পুলিশের তদন্ত অফিসার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে নারী চরিত্রের এরকম অনবদ্য উপস্থাপনের পরিকল্পনায় মুগ্ধ হয়ে আমি সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হই। আমার ধারণা এবার ঈদে অসংখ্য সিনেমার ভিড়ে ‘এশা মার্ডার’ ভিন্নতা পাবে সানী ভাইয়ের গল্প বলার ধরণ এবং উপস্থাপন কৌশলের জন্য। এছাড়া আমি জীবনের প্রথমবার পুলিশ চরিত্র অভিনয় করেছি। আমার এই জার্নিটা ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। আমরা সবাই মিলে গল্পটি দারুণভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করি হলে গিয়ে দর্শক সিনেমাটি দেখবেন।’
ঈদে সিনেমা নিয়ে জীবনের প্রথম প্রেক্ষাগৃহে হাজির হচ্ছেন বাঁধন। অন্য সব সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া নিয়ে চিন্তিত নন তিনি।
অভিনেত্রীর কথায়, “অন্য সিনেমার জন্য নার্ভান না, নিজের সিনেমা নিয়ে নার্ভাননেস কাজ করছে। মানুষ সিনেমাটি কীভাবে নেনে সেটা মনে করে কিছুটা ভয়ও কাজ করছে। তবে আমি একটি কথা বলতে চাই, ঈদে আরও অনেক সিনেমা আসবে। আপনারা সিনেমা হলে গিয়ে বাকী সিনেমা দেখেন। সেই সঙ্গে ‘এশা মার্ডার’ সিনেমাটিও দেখেন। বাঁধন পুলিশ অফিসার হিসেবে কেমন সেটা জানতে হলে প্রেক্ষাগৃহে আসতে হবে।”
অভিনেতা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি এই সিনেমায় থানার ওসি চরিত্রে অভিনয় করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো সিনেমার যারা ছিলেন তারা গল্পের কারণে সবাই ভালো অভিনয় করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, সিনেমার গল্পটা দারুণ। যেহেতু এবার ঈদে আরও বেশ কয়েকটি সিনেমা আসছে সেবগুলো সিনেমার সঙ্গে দর্শক আমাদের সিনেমাটি দেখবেন বলে আশা করি।’
সিনেমার নাম (এশা) ভূমিকায় অভিনয় করা পূজা এগনেস ক্রুজ বলেন, “এ রকম বাণিজ্যিক সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে (এশা ) অডিশনে টিকার পরপরই আমি পরিপূর্ণ ‘এশা’ হয়ে উঠার জন্য পরিচালক সানী সানোয়ার ভাইয়ে পরামর্শে প্রায় ৬মাস ব্যাপী নানা ধরণের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমি ছাড়াও এই সিনেমার অনেক শিল্পীকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এরকম সুসংগঠিত আয়োজন এবং কাহিনীর শৈল্পিক জার্নি সিনেমাটিকে বিশেষ উচ্চাতায় নিয়ে গেছে বলে আমার বিশ্বাস।”
‘এশা মার্ডার’ সিনেমায় আরও শতাব্দী ওয়াদুদ, সুষমা সরকার, নিবির আদনান, হাসনাত রিপন, সরকার রওনক রিপন, শিল্পী সরকার অপু, এ কে আজাদ সেতু, ইশিকা সাকিন, সৈয়দ এজাজ আহমেদ প্রমুখ।
এছাড়া বিশেষ একটি চরিত্রে দেখা যাবে মিশা শওদাগর ও সুমিত সেন গুপ্তকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাইকেল কেন অগ্রাধিকারে নাই!
হাসান একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। প্রতিদিন তিনি সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। এটি কোনো শখের বিষয় নয়; প্রয়োজনের তাগিদে সাইকেল চালান। এরকম অনেকেই প্রতিদিন সাইকেল চালানোর মাধ্যমে অর্থ সাশ্রয় করে চলছেন, যা অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে নানাভাবে; পরিবেশে দূষণ ও যানজট কমছে। তারপরও সাইকেল চালানোর জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেই; নেই আলাদা সাইকেল লেনও।
দেশে প্রতিবছর কত সাইকেল বিক্রি হয়? সাইকেল আমদানিকারক ও নির্মাতাদের সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বাইসাইকেলের স্থানীয় বাজার ১ হাজার ৮০০ কোটি থেকে দুই হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে ৪০ শতাংশ বাইসাইকেল। সাইকেল একটি নিরাপদ বাহন হলেও ঢাকার রাস্তায় যারা এটি চালান তাদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। সাইকেলচালকদের জন্য কোনো ধরনের লেন নেই পার্কিং-এর ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু মানুষ মনে করেন, এটি একটি গরিবের বাহন।
অপরদিকে মোটরসাইকেল এখন সর্বত্র। দেশের একটি ইংরেজি পত্রিকার তথ্য বলছে, দেশের মোট বিক্রির হওয়া মোটরসাইকেলের ৩৫ শতাংশ হচ্ছে উচ্চগতির; অর্থাৎ ১৫০ সিসি। মোটরসাইকেলের প্রসার ঘটাতে সরকার অনেক নীতিসহায়তা দিয়েছে; যার মাঝে অন্যতম হলো ২০১৮ সালের মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা। এর লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এই শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। অপরদিকে আমরা যদি বাইসাইকেল শিল্পের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, আমাদের বাংলাদেশ এই খাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইকেল রপ্তানি করছে। অথচ এই খাতের জন্য কোনো বিশেষ নীতিমালা নেই। বিগত সরকার মোটরসাইকেল উৎপাদন এগিয়ে নিতে অনেক কর সুবিধাও দিয়েছে।
আর বাইসাইকেলশিল্প নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের করা এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে উৎপাদিত সাইকেলের অধিকাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয় আর ওই সব যন্ত্রের ওপর অনেক কর আরোপ করা আছে; যার ফলে উৎপাদিত পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি গত অর্থবছরে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হয়েছে; যার কারণে দেশে সাইকেলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। শুধু তাই নয়, সিপিডির করা সে গবেষণা আরও বলছে, এই শিল্পের জন্য অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে ওয়েল্ডিং গ্যাস। সে গ্যাস আমদানি করতে হলে দুই স্তরের অনুমতি নিতে হয়; যা এই শিল্পের জন্য অনেক বড় বাধা হিসেবে কাজ করে।
এক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার করা গবেষণা থেকে জানা যায়, ঢাকার মোট যাতায়াতের ৭৬ শতাংশ হয়ে থাকে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে। ঢাকার রাস্তার গড় প্রশস্ততা ৮ থেকে ২০ ফুটের মাঝে। এরকম একটি শহরে স্থান সংকুলানের কারণে যানজট কমাতে ও যাতায়াতের গতিশীলতা ধরে রাখতে বাইসাইকেল হতে পারত একটি ভালো সমাধান। ঢাকার মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল নয়; বাইসাইকেল বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে তার উল্টো।
এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। বাইসাইকেলকে যাতায়াতের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সরকার যদি কিছু নীতিসহায়তা দেয় তাহলে দেশের মানুষ অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে এ বাহনটি ব্যবহার করতে পারবে। আশার কথা হলো, ঢাকা উত্তরের প্রশাসক সম্প্রতি একটি ঘোষণা দিয়েছেন, ঢাকার মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে সাইকেল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এরকম আরও কিছু পদক্ষেপ যেমন– সাইকেল তৈরির জন্য যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয় তার ওপরে আরোপিত কর এবং মূল্য সংযোজন কর কমানো। এ সব পদক্ষেপের ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিক্রি উভয় বাড়বে। পাশাপাশি ঢাকা শহরসহ সব স্থানে একটি বাইসাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করতে হবে। সেই নেটওয়ার্ক অনুযায়ী লেন বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন বাইসাইকেল চালকরা নিরাপদে চলতে পারেন।
তালুকদার রিফাত পাশা: পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.com