ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদুল আজহার গুরুত্ব অপরিসীম। এর ঐতিহাসিক ভিত্তি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের আদর্শ। তিনি যখন আল্লাহর আদেশে তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে উদ্যত হন, তখন আল্লাহ তাঁর খাঁটি নিয়ত দেখে পুত্রের পরিবর্তে একটি পশু পাঠিয়ে সেই কোরবানি কবুল করেন। সেই ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ মুসলমানরা পশু কোরবানি করে থাকেন।
শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির সংজ্ঞা হলো জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের মধ্যে যেকোনো এক দিন ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু পশু জবাই করা। এ আমলকে ইসলাম ‘কোরবানি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কোরবানি কার ওপর ওয়াজিব? একজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলমান, যিনি কোরবানির নির্ধারিত সময়ে সাহেবে নিসাব হন, অর্থাৎ যাঁর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের অর্থ, ব্যবসার পণ্য অথবা সঞ্চয় থাকে—তাঁর ওপর কোরবানি ওয়াজিব। এ সম্পদ এক বছরের জন্য সংরক্ষিত থাকতে হয় না, বরং নির্দিষ্ট সময়কালে যাঁর কাছে থাকে, তিনি ‘সাহেবে নিসাব’ হিসেবে গণ্য হন।
নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইয়ের পর মলমূত্র, রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমলকোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ, আয়াত ৩৭)
এখানে স্পষ্ট যে কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ভক্তি ও আত্মসমর্পণের প্রকাশ। শুধু রীতিনীতি নয়, বরং আন্তরিকতা ও ন্যায়ের বোধ কোরবানিকে অর্থবহ করে তোলে।
ঈদের দিনের আমল হলো খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ফজরের নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা, সকালে গোসল করা, মিসওয়াক করা, সম্ভব হলে নতুন জামা অথবা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা, আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় ফিরে আসা, আসা-যাওয়ার সময় তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) বলা, খোলামাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা।
কোরবানির পশু মুসলমান নারী–পুরুষ সবাই জবাই করতে পারেন। নিজের কোরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে জবাই করতে না পারলে উপযুক্ত যেকোনো কাউকে দিয়ে জবাই করাতে পারেন। জবাইয়ের সময় নিজে উপস্থিত থাকতে পারলে ভালো।
আকিকা হলো একটি বা দুটি ছাগল। সুতরাং গরু, মহিষ বা উটে অংশ হিসেবে যেভাবে কোরবানি দেওয়া যায়; সেভাবে একটিকে সাতটি ধরে অংশ হারে আকিকাও করা যায়। কোরবানি ও আকিকা একসঙ্গে করতে কোনো বাধা নেই।
কোরবানির গোশত সম্ভব হলে তিন খাতে বণ্টন করা ভালো। এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য, এক ভাগ গরিব পাড়া–প্রতিবেশীর জন্য এবং এক ভাগ নিজ পরিবারের জন্য। (তিরমিজি)
যদি একাধিক ব্যক্তি একটি পশুতে শরিকে কোরবানি করেন; তবে প্রথমে প্রত্যেকের অংশ আনুপাতিক হারে সমবণ্টনে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। খুশিমনে কেউ কম নিলে বা কাউকে নিজের থেকে বেশি দিলে দোষ নেই। সব অংশীদার একমত হলে গরিবদের জন্য যতটুকু ইচ্ছা রেখে দিতে পারেন। তবে যার যার অংশ থেকে যার যার মতো আলাদা দেওয়া উত্তম ও নিরাপদ। কারণ, সবার প্রয়োজন সমান নয় এবং সবার মনমানসিকতা এক নয়।
ওয়াজিব কোরবানি ছাড়া ছোট–বড় জীবিত–মৃত যে কারও পক্ষ থেকে যে কেউ নফল কোরবানি আদায় করতে পারেন। এতে উভয়েই সওয়াবের অধিকারী হবেন। নারী যদি সামর্থ্যবান বা সাহেবে নিসাব হন, তাঁর জন্যও কোরবানি ওয়াজিব। শিশুদের ওপর কোরবানিসহ কোনো ফরজ–ওয়াজিব প্রযোজ্য নয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ফরজ ইবাদত। তাই যত্রতত্র রাস্তাঘাটে বা পথের ধারে কোরবানির পশু জবাই করা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইয়ের পর মলমূত্র, রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ষ ক র ক রব ন র আল ল হ র জন য আকব র
এছাড়াও পড়ুন:
এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় জাতি হতাশ: মির্জা ফখরুল
থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজ। ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বারবার বিএনপি বলে এসেছে দ্রুত নির্বাচন চায়। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু নিঃসন্দেহে বিএনপি শুধু নয়, এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণায় গোটা জাতি হতাশ হয়েছে।’
এরআগে শুক্রবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন দলটির নেতারা।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চোখের চিকিৎসা নিতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।