প্রতিবারের মতো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় এবারও মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী বন্ধুকের ফাঁকা গুলির মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোর থেকে দলে দলে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন মাঠে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশপথে তাঁদের প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হয়।

শহরতলির শোলাকিয়া গাছবাজার এলাকার মো. আলী আকবর বলেন, ‘দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এ মাঠে নামাজ আদায় করে আসছি। এবারও নামাজ আদায় করতে পেরে অনেক খুশি। তবে প্রতিবছরই ঈদুল আজহায় ঈদুল ফিতরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা কম হয়। তাই ঈদুল আজহাতেও যাতে মাঠভর্তি মুসল্লির সমাগম ঘটে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। তাঁর মতো আরও অনেকে দূরদুরন্ত থেকে এসে স্বস্তিতে ঈদের নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় মোনাজাত শেষে বাড়ি ফেরেন।

শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হলো ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত। শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী বন্দুকের ফাঁকা গুলির মাধ্যমে সকাল ৯টায় জামাত শুরু হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিদের এ জামাতে ইমামতি করেন মুফতি মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।

ঈদে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত মুসল্লিদের নিয়ে সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখর হয়ে যায় ঈদগাহ ময়দান।

২০১৬ সালের ৭ জুলাইয়ের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সকাল থেকেই ঈদগাহ ময়দানে বিজিবি সদস্যসহ র‍্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সাদাপোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও বোমা ডিসপোজাল টিমের সদস্যদের তৎপরতা ছিল। ওয়াচ টাওয়ারসহ পুরো ঈদগাহ ময়দান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল। ছিল ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজাবে রহমত নামাজ আদায় শেষে বলেন, মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করেছেন। দূরদূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। তা ছাড়া নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করে মুসল্লিরা ঘরে ফেরায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহটি একসময় ‘সোয়া লাখিয়া’ থেকে ‘শোলাকিয়া’ ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তবে এ বিষয়ে অনেক ইতিহাসবিদের দ্বিমত আছে। আরেকটি মতে, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ মানে এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে ‘শ লাখ’ থেকে বর্তমান ‘শোলাকিয়া’ হয়েছে।

আরও পড়ুনযেভাবে ইতিহাস হলো শোলাকিয়া৩০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ ঈদগ হ ম

এছাড়াও পড়ুন:

১৯৮তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, নিরাপত্তায় জোর

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় এবার ১৯৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠেয় জামাতে ইমামতি করবেন বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়রে মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।

বুধবার (০৪ জুন) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা এবং টয়লেট। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। তবে গত দুদিন ধরে থেমে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে কিশোরগঞ্জে। এ কারণে বৃষ্টির পানি যেন জমে না যায়, সেজন্য মাঠে ফেলা হচ্ছে বালু। ঠিকঠাক করা হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে কখন কোথায় ঈদের জামাত

ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান: বাড়তি ভাড়া, সিন্ডিকেটে জিম্মি যাত্রীরা  

ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তুত রাখা হেয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিকেল টিম।  

জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৬ সলের ঈদুল ফিতরে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে নিরাপত্তার দিকটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। যেন লোকজনের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো অস্বস্তি না থাকে। 

জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, ঢাকা  রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজেম উদ্দীনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় মাঠ পরিদর্শন করে সার্বিক প্রস্তুতির খোঁজখবর নিচ্ছেন ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আজ বেলা ১১টার দিকে মাঠ পরিদর্শন শেষে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হয়। 

মাঠের সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান সাংবাদিকদের বলেছেন, এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, দেয়ালে রং করাসহ মাঠের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করছি উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, বৃষ্টিবাদল হলে মুসল্লিদের যেন দুর্ভোগ কম হয়, সে ব্যবস্থাও করে রাখা হয়েছে।  

পুলিশ সুপার কাজেম উদ্দীন বলেছেন, নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ঝুঁকি না থাকলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই শোলাকিয়ায় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। মাঠে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাছাড়া শোলাকিয়া মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে।

তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত। তা করতে গিয়ে যা যা করা দরকার সবই কিছুই করা হচ্ছে।”

পুলিশ সুপার এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, মুসল্লিরা কেবল জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করবেন। এরই মধ্যে মাঠসহ পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জানান, দুই প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্চিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। শহরসহ মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচটাওয়ার। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। থাকবে পাঁচটি আর্চওয়ে। তাছাড়া শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি। 

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আসা মুসল্লিদের জন্য দুটি বিশেষট্রেন চলাচল করবে। সকাল ছয়টায় ভৈরব থেকেছেড়ে আসা ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল আটটায়। পরে এ ট্রেনটিই দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরবের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

আরেকটি বিশেষ ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌঁনে ছয়টায় ছেড়ে এসে সকাল সাড়ে আটটায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। পরে এটি আবার ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবে দুপুর ১২টা।

ঈদুল আজহায় কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা থাকায় জামাতে লোক সমাগম কিছুটা কম হয়। তার পরও লক্ষাধিক মুসল্লি এ জামাতে নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করছে স্থানীয়রা।

কিশোরগঞ্জ শহর থেকে থেকে পূর্ব-দক্ষিণে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকয়িা মাঠ। এর আয়তন ৭ একর। প্রায় দুশো বছর ধরে এই মাঠে বশিাল ঈদরে নামাজরে জামাত হয়ে আসছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, শোলাকয়িার সাহেববাড়ির  সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজের জমিতে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। বাংলাদশে সরকাররে জাতীয় তথ্য বাতায়নের তথ্য বলছে, ঈদের  প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং সেখান থেকে শোলাকিয়া শব্দটি প্রচলিত হয়েছে। 

রেওয়াজ অনুযায়ী শোলাকয়িার ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়।  এটি নামাজ শুরু করার সঙ্কতে বলে সংশ্লষ্টিরা জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৯৮তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, নিরাপত্তায় জোর