শরীয়তপুরে ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে মশালমিছিল, দুই পক্ষ মুখোমুখি
Published: 11th, June 2025 GMT
শরীয়তপুরে ছাত্রদলের জেলার আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এক পক্ষ কমিটি বাতিলের দাবিতে জেলা শহরে মশালমিছিল করেছে। আরেক পক্ষ কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেছে। দুই পক্ষের এমন অবস্থানের কারণে জেলা শহরের ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
৩ জুন ৩৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। এর পর থেকে ৯ দিন ধরে একটি পক্ষ কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, মশালমিছিল, কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। নতুন এ কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তাতে পুলিশ সদস্য, পথচারীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনশরীয়তপুরে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ০৯ জুন ২০২৫ছাত্রদল সূত্র জানায়, ২০২১ সালে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর চার বছর জেলায় আর ছাত্রদলের কোনো কমিটি ছিল না। ৩ জুন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল শরীয়তপুর জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। ৩৫ সদস্যের এ আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাকিরকে। তিনি শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। সদস্যসচিব করা হয়েছে শরীয়তপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল তালুকদারকে।
এ কমিটির তালিকা প্রকাশ করলে কমিটির পাঁচজন যুগ্ম আহ্বায়কসহ একটি পক্ষ কমিটি বাতিলের দাবি জানায়। তারা বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের ও জেলা বিএনপির নেতাদের অবগত করেছে; কিন্তু কোনো পক্ষই তাদের কথা গুরুত্ব দেয়নি। তখন কমিটি বাতিলের দাবিতে অসন্তুষ্ট পক্ষ আন্দোলনে নামে। কমিটির যুগ্ম আহবায়ক পান্থ তালুকদার, বাবু মাদবর, আফজাল খান, ইসহাক সরদার ও তাঁদের সমর্থকেরা কমিটি বাতিলের দাবিতে ৯ দিন ধরে আন্দোলন করছেন।
আজ বুধবার বিকেলে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এইচ এম জাকির ও সদস্যসচিব সোহেল তালুকদারের নেতৃত্বে শহরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর রাত আটটার দিকে আরেক পক্ষ কমিটি বাতিলের দাবিতে মশালমিছল বের করে। দুই মিছিলই ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে করা হয়। মিছিলের কারণে শহরে অন্তত এক ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়।
মশালমিছিল শেষে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সভা করা হয়। সেখানে বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক পান্থ তালুকদার, বাবু মাদবর, আফজাল খান, ইসহাক সরদার।
যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃণমূলের নিবেদিত নেতাদের বাদ দিয়ে বয়স্ক ও অছাত্রদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। যার কারণে আমরা সবাই ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছি। কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে সড়ক অবরোধ ও অনশনের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ৯ দিন ধরে আন্দোলন করছি। দেশের রাজনীতির এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ সুবিধা নেওয়ার জন্য একটি পক্ষ ওই কমিটি করেছে। এভাবে চলতে থাকলে শরীয়তপুরের ছাত্রদলের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যাবে।’
আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে উল্লেখ করে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এইচ এম জাকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সংগঠনের মঙ্গল চেয়ে সবাই একত্র হয়ে ছাত্রদলের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছি। একটি বিদ্রোহী পক্ষ তা মানতে চাচ্ছে না। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সঠিক নয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র ক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।