ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়, মানসির সোয়া সেরের ওপর ও’দৌদের সের
Published: 13th, June 2025 GMT
কথায় আছে, সেরের ওপর সোয়া সের। কিন্তু জর্জ মানসি ও ম্যাক্স ও’দৌদের ইনিংস দুটি দেখলে কথা উল্টোও মনে হতে পারে। সোয়া সেরের ওপর সের!
ডান্ডিতে গতকাল ওয়ার্ল্ড কাপ লিগ টু–এর ম্যাচে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল নেদারল্যান্ডস। টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা স্কটল্যান্ডের হয়ে ১১ ছক্কা ও ১৬ চারে ১৫০ বলে ১৯১ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার জর্জ মানসি। পুরো ৫০ ওভার খেলে স্কটল্যান্ডও ৬ উইকেটে ৩৬৯ তোলার পর মনে হয়েছিল, এই লক্ষ্য তাড়া করে ডাচদের না জেতার সম্ভাবনাই বেশি। মানসি একাই যা করেছেন, তাতে তো পরের ইনিংস শুরুর আগেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল স্কটিশরা।
আরও পড়ুনআইপিএলে দল না পাওয়া অ্যালেনের ১৯ ছক্কা ও ১৫১ রানে ভাঙল একাধিক রেকর্ড২ ঘণ্টা আগেকিন্তু নেদারল্যান্ডসের ওপেনার ম্যাক্স ও’দৌদ ভেবেছিলেন অন্য কিছু। ৪ ছক্কা ও ১৩ চারে ১৩০ বলে ১৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ও’দৌদ। তাতে ৪ বল হাতে রেখেই ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি গড়েছে নেদারল্যান্ডস। বিফলে যায় মাত্র ৯ রানের জন্য মানসির ডাবল সেঞ্চুরি না পাওয়া ইনিংসটি। কিন্তু তাঁর চেয়েও কম রানের ইনিংস খেলে ও’দৌদ তাঁর দলকে এনে দিয়েছেন অবিস্মরণীয় এক জয়।
১৯১সহযোগী দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েছেন মানসি।
ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মোটামুটি সবারই জানা। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৪৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এক দশক পর সেই দক্ষিণ আফ্রিকাই ডারবানে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির গড়ে। আর স্কটল্যান্ড ২০১৯ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৩৬১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের কীর্তিকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এল।
ওয়ানডেতে আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও। পাশাপাশি সহযোগী দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডও গড়েছেন মানসি।
আরও পড়ুনবাবর, রিজওয়ান ও শাহিনকে ছাড়াই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে চায় পাকিস্তান৪ ঘণ্টা আগে২০১০ সালে কানাডার বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিংয়ের ১৭৭ রানের ইনিংসকে পেছনে ফেলে রেকর্ডটি গড়লেন মানসি। আয়ারল্যান্ড তখনো টেস্ট মর্যাদা পায়নি। তবে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সুযোগ তাঁর ছিল। ৪৮.
ও’দৌদের পাশাপাশি তেজা নিদামানুরু ও নোয়া ক্রোয়েসের ফিফটিতে অবিশ্বাস্য রান তাড়ায় জয় পেয়েছে ডাচরা। ৪২ বলে ৫১ করেন নিদামানুরু ও ক্রোয়েস করেন ২৯ বলে ৫০। জয়ের জন্য হাতে ৫ উইকেট রেখে শেষ ৫ ওভারে ৪৯ রান দরকার ছিল ডাচদের। এরপর শুধু ক্রোয়েসকে হারালেও জয়টা সহজেই পেয়েছে তারা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৩ রান।
ছেলেদের ওয়ানডেতে এ নিয়ে ১৬তমবার ব্যক্তিগত ইনিংসে ১৯০ রান পেরোতে দেখা গেল। তবে ১৯০ থেকে ২০০ রানের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস এটি। আগের তিনটি স্কোর ছিল ফখর জামানের ১৯৩, সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ ও চার্লস কভেন্ট্রির অপরাজিত ১৯৪*।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স কটল য ন ড লক ষ য ত ড় র ন র ইন র র কর ড
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।