কথায় আছে, সেরের ওপর সোয়া সের। কিন্তু জর্জ মানসি ও ম্যাক্স ও’দৌদের ইনিংস দুটি দেখলে কথা উল্টোও মনে হতে পারে। সোয়া সেরের ওপর সের!

ডান্ডিতে গতকাল ওয়ার্ল্ড কাপ লিগ টু–এর ম্যাচে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল নেদারল্যান্ডস। টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা স্কটল্যান্ডের হয়ে ১১ ছক্কা ও ১৬ চারে ১৫০ বলে ১৯১ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার জর্জ মানসি। পুরো ৫০ ওভার খেলে স্কটল্যান্ডও ৬ উইকেটে ৩৬৯ তোলার পর মনে হয়েছিল, এই লক্ষ্য তাড়া করে ডাচদের না জেতার সম্ভাবনাই বেশি। মানসি একাই যা করেছেন, তাতে তো পরের ইনিংস শুরুর আগেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল স্কটিশরা।

আরও পড়ুনআইপিএলে দল না পাওয়া অ্যালেনের ১৯ ছক্কা ও ১৫১ রানে ভাঙল একাধিক রেকর্ড২ ঘণ্টা আগে

কিন্তু নেদারল্যান্ডসের ওপেনার ম্যাক্স ও’দৌদ ভেবেছিলেন অন্য কিছু। ৪ ছক্কা ও ১৩ চারে ১৩০ বলে ১৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ও’দৌদ। তাতে ৪ বল হাতে রেখেই ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি গড়েছে নেদারল্যান্ডস। বিফলে যায় মাত্র ৯ রানের জন্য মানসির ডাবল সেঞ্চুরি না পাওয়া ইনিংসটি। কিন্তু তাঁর চেয়েও কম রানের ইনিংস খেলে ও’দৌদ তাঁর দলকে এনে দিয়েছেন অবিস্মরণীয় এক জয়।

১৯১

সহযোগী দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েছেন মানসি।

ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মোটামুটি সবারই জানা। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৪৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এক দশক পর সেই দক্ষিণ আফ্রিকাই ডারবানে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির গড়ে। আর স্কটল্যান্ড ২০১৯ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৩৬১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের কীর্তিকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এল।

ওয়ানডেতে আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও। পাশাপাশি সহযোগী দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডও গড়েছেন মানসি।

আরও পড়ুনবাবর, রিজওয়ান ও শাহিনকে ছাড়াই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে চায় পাকিস্তান৪ ঘণ্টা আগে

২০১০ সালে কানাডার বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিংয়ের ১৭৭ রানের ইনিংসকে পেছনে ফেলে রেকর্ডটি গড়লেন মানসি। আয়ারল্যান্ড তখনো টেস্ট মর্যাদা পায়নি। তবে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সুযোগ তাঁর ছিল। ৪৮.

৪ ওভারে ভিভিয়ান কিংমার বলে বোল্ড হন মানসি। পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারলে হয়তো ডাবল সেঞ্চুরি পেতেও পারতেন।

ও’দৌদের পাশাপাশি তেজা নিদামানুরু ও নোয়া ক্রোয়েসের ফিফটিতে অবিশ্বাস্য রান তাড়ায় জয় পেয়েছে ডাচরা। ৪২ বলে ৫১ করেন নিদামানুরু ও ক্রোয়েস করেন ২৯ বলে ৫০। জয়ের জন্য হাতে ৫ উইকেট রেখে শেষ ৫ ওভারে ৪৯ রান দরকার ছিল ডাচদের। এরপর শুধু ক্রোয়েসকে হারালেও জয়টা সহজেই পেয়েছে তারা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৩ রান।

ছেলেদের ওয়ানডেতে এ নিয়ে ১৬তমবার ব্যক্তিগত ইনিংসে ১৯০ রান পেরোতে দেখা গেল। তবে ১৯০ থেকে ২০০ রানের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস এটি। আগের তিনটি স্কোর ছিল ফখর জামানের ১৯৩, সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ ও চার্লস কভেন্ট্রির অপরাজিত ১৯৪*।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স কটল য ন ড লক ষ য ত ড় র ন র ইন র র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।

রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।

নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।

পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।

আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।

তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।

রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।

‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।

তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩

হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।

একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।

যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।

পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার

আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ