ভারতের দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় তারকা অভিনয়শিল্পী ধানুশ ও রাশমিকা মান্দানা। ‘কুবেরা’ সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তারা। অ্যাকশন-ড্রামা ঘরানার এ সিনেমা পরিচালনা করেছেন শেখর কামুলা। কয়েক দিন পরই মুক্তি পাবে সিনেমাটি। 

প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগে ‘কুবেরা’ সিনেমার একটি গান মুক্তি দিয়েছেন নির্মাতারা। এ উপলক্ষে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সিনেমাটি নিয়ে কথা বলেন ধানুশ। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সিনেমাটির শুটিং সেটে রাশমিকার সঙ্গে বিশেষ কোনো স্মৃতি রয়েছে কি না?

এ প্রশ্নের জবাবে ধানুশ বলেন, “আমি আর রাশমিকা ময়লার ভাগাড়ে ৬-৭ ঘণ্টা শুটিং করেছি। পুরো সময়ে রাশমিকা ঠিকঠাক ছিল। তার ভাবটা এমন ছিল যে, ‘আমি কোনো দুর্গন্ধই পাচ্ছি না।”

এরপর গম্ভীর কণ্ঠে ধানুশ বলেন, “আমি অনেক খবর পড়েছি। যেখানে বলা হয়েছে, ‘মাস্ক পরে আমরা শুটিং করেছি। এটা তেমন কোনো বড় ব্যাপার ছিল না।’ কিন্তু পৃথিবীর অন্য পাশটিও দেখুন; যা আপনি আবিষ্কার করতে পারেননি। আপনি সবসময়ই আপনার আরামদায়ক জায়গায় থাকেন, যেখানে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন; যা সুবিধাজনক তাই করেন। আপনি নিরাপদে থাকার জন্য এটা করে থাকেন। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ খুবই নিরাপদে আছেন।” 

“আমি সেখান থেকে এসেছি। আমি খুব বিনয়ী, আমি রুট থেকে শুরু করেছি। ঈশ্বরের কৃপায় আমি এখানে এসেছি। আমি তা দেখেছি। সেই পৃথিবী পুনরায় দেখার জন্য সেখানে ফিরে যাওয়া খুবই জ্ঞানগর্ভ এবং স্মৃতিকাতর ব্যাপার। আমাকে আমার শৈশবে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সত্যিই এই সিনেমার প্রতি কৃতজ্ঞ।” বলেন ধানুশ। 

টাইপকাস্টিং (একইরকম চরিত্র) থেকে কীভাবে নিজেকে দূরে রেখেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ধানুশ বলেন, “আমি ঠিক প্রসেসরের মতো। কম্পিউটার। আমি খুব বেশি পরিশ্রম করি না। আপনার ঠিকমতো তথ্য দরকার। আমার পরিচালকরা আমাকে তথ্য দিয়েছেন। তারা যে কাজ করেন তার বেশিরভাগই আমি এটিকে প্রক্রিয়া করি। আমি কেবল একজন প্রসেসর। আমি যে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তার সবই তাদের কৃতিত্ব।”

‘কুবেরা’ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন— নাগার্জুনা আক্কিনেনি, ধানুশ, রাশমিকা মান্দানা। সামাজিক গল্পের সিনেমাটি আগামী ২০ জুন বিশ্বব্যাপী মুক্তির পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা। সিনেমাটির বাজেট ধরা হয়েছে ৮০-১২০ কোটি রুপি।

তথ্যসূত্র: সিয়াসাত ডটকম

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।

রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।

নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।

পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।

আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।

তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।

রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।

‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।

তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩

হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।

একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।

মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।

যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।

পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার

আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ