লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
Published: 16th, June 2025 GMT
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে ১ লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
সোমবার (১৬ জুন) এনটিআরসিএ সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আগামী ২২ জুন দুপুর ১২টা থেকে ১০ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত এই নিয়োগের আবেদন ও ফি জমা দেওয়া যাবে। তবে, টাকা জমা দেওয়া যাবে ১৩ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত।
আরো পড়ুন:
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব
করোনা ও ডেঙ্গু: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা
বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর বয়স ও নারী কোটা বিষয়ে পরিবর্তন হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বয়স ধরা হয় অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের তারিখ ৪ জুন। এই তারিখে প্রার্থীর বয়স ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে। আর সনদের মেয়াদ নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের তারিখ থেকে ৩ বছর। সে অনুযায়ী ৪ জুন থেকে প্রার্থীর বয়স ও সনদের মেয়াদ ধরা হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনাকে বোঝানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। শুধু এমপিওভুক্ত পদে নিয়োগ সুপারিশের জন্য এবারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল ও কলেজে ৪৬ হাজার ২১১টি, মাদরাসায় ৫৩ হাজার ৫০১টি এবং কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে ১১১০টি পদ উল্লেখ করা হয়েছে। একজন প্রার্থী শূন্যপদের তালিকা থেকে তার আবেদনে সর্বোচ্চ ৪০টি প্রতিষ্ঠানে পছন্দ দিতে পারবেন। ১ হাজার টাকা আবেদন ফি দিয়ে এনটিআরসিএ এবং টেলিটকের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারবেন। ফি জমা না দিলে আবেদন বাতিল হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সুপারিশ বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগ না দেয়, তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানের এমপিও স্থগিত বা বাতিল করা হবে এবং ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি বাতিল করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে, শূন্যপদের চাহিদা স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংগৃহীত হওয়ায় চাহিদাজনিত ভুলের দায় এনটিআরসিএ নেবে না বলেও জানানো হয়।
ঢাকা/হাসান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এনট আরস এ প রক শ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।