বগুড়ায় দুর্গ ফিরে পেতে তৎপর বিএনপি, ভাগ বসাতে চায় জামায়াত
Published: 17th, June 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিজ জেলা বগুড়ায় দলের হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধারে ব্যাপক তৎপর বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলায় সংসদীয় সাতটি আসনের মধ্যে দুটি হাতছাড়ার মাধ্যমে দলের দুর্গ নড়বড় হয়ে যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পাঁচটি আসনই হাতছাড়া হয়। সামনের নির্বাচনে সব কটি আসন নিজেদের কাছে রাখতে তৎপর দলটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দলে পুরোদমে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন মাঠে ব্যস্ত গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে।
বসে নেই নির্বাচনী জোটে একসময়ের শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির দুর্গে ভাগ বসাতে মরিয়া তারা। ইতিমধ্যে সংসদীয় সাত আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তৎপরতা ও সরব উপস্থিতি চোখে পড়লেও জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা)
বগুড়া-১ আসনটি ১৯৭৩ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপির ওয়াজেদ হোসেন তরফদার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও আসনটি বিএনপির দখলে ছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন দেয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শোকরানাকে। তাঁকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত আবদুল মান্নান বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুল মান্নান। ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী সাহাদারা মান্নান সংসদ সদস্য হন।
বর্তমানে মাঠে সরব বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী রফিকুল ইসলাম। ঈদের ছুটিতে তিনি নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। বিপদে–আপদে ভোটারদের পাশে ছিলাম।’ তিনি মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব।
জামায়াত এ আসনে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ)
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ১৯৭৯ সালে সেখানে বিএনপির আবুল হাসনাত চৌধুরী সংসদ সদস্য হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মোজাফফর হোসেন, ১৯৮৮ সালে ফ্রিডম পার্টি থেকে সৈয়দ মাসকুরুল আলম চৌধুরী, ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর শাহাদাত-উজ-জামান সংসদ সদস্য হন। ১৯৯৬–এ আসনটিতে বিএনপি থেকে এ কে এম হাফিজুর রহমান, ২০০১ সালে রেজাউল বারী ও ২০০৮ সালে এ কে এম হাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য হন। পরে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আসনটি ছেড়ে দেয় বিএনপি। ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি জাপার শরিফুল ইসলামের কাছে হেরে যান।
জেলা বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি। ৫ আগস্টের পর তিনি কয়েক দফা লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে আসছে নির্বাচনে আসনটি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মীর শাহে আলম বলেন, আসনটি ধানের শীষের দুর্গ। শিবগঞ্জবাসী চায়, এ আসনে জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হোক। তারেক রহমান যাঁর হাতে ধানের শীষ তুলে দেবেন, তাঁকে জয়ী করতে সর্বস্তরের নেতা–কর্মীরা একযোগে কাজ করবেন।
এই আসনে জামায়াত সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে।
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি)
বগুড়া-৩ আসনটিতে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাসান আলী তালুকদার সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ১৯৮৬ সালে জাসদের এ বি এম শাহজাহান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এ বি এম শাহজাহান, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির আবদুল মজিদ তালুকদার, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির আবদুল মোমেন তালুকদার এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার সংসদ সদস্য হন।
এ আসনে এবার বিএনপি থেকে বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস হামিদুল হক চৌধুরী, বগুড়া অ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান খান, আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার ও বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল বারী তালুকদার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন।
অন্যদিকে জামায়াত এখানে দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুণাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আবু তাহেরকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু)
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সাল থেকেই বগুড়া-৪ আসনটি জাসদকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন জাসদের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। তবে ২০১৮ সালে তিনি জেলা বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের কাছে পরাজিত হন। পরে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের পদত্যাগের পর ২০২৩ সালের উপনির্বাচনে রেজাউল করিম আবার সংসদ সদস্য হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে রেজাউল করিমকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এককভাবে মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ধানের শীষের পক্ষে চারদিকে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট)
১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মো.
জেলা বিএনপির সূত্রে জানা যায়, এ আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ, তাঁর ছেলে শেরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য ও তরুণ শিল্পপতি আসিফ সিরাজ রব্বানী। এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ও শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জানে আলমও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
গোলাম মো. সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসছে নির্বাচনে বাবা-ছেলে দুজনই ধানের শীষের কান্ডারি হওয়ার জন্য মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাঁকে খুশি মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন–দৌড়ে ছেলের কাছে হেরে গেলেও সে হার হবে অনেক সুখের।’
জামায়াত এখানে একক প্রার্থী হিসেবে শেরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেছে।
বগুড়া-৬ আসন (সদর)
২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন বিএনপির দখলে ছিল। এর মধ্যে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারবার সংসদ সদস্য হন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপার নুরুল ইসলাম বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি শপথ না নেওয়ায় উপনির্বাচনে বিএনপির গোলাম মো. সিরাজ বিজয়ী হন। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করলে আরেকটি উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন।
জেলা বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, আসছে নির্বাচনে তারেক রহমানের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানও প্রার্থী হতে পারেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, বগুড়া-৬ আসনটি জিয়া পরিবারের আসন। এ ছাড়া জেলার সংসদীয় সাতটি আসনে কোথায় কাকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হবে, সে ব্যাপারে তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নেবেন। ২০০১ সালের পর দেশে অবাধ নির্বাচন হয়নি। বগুড়া বিএনপির দুর্গ ছিল, এখনো অক্ষুণ্ন আছে।
এ আসনে বগুড়া শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেলকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত।
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর)
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো এ আসনে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও এ আসনে খালেদা জিয়া বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৩২ হাজার ৭৬১ ভোট পান। তবে প্রতিবারই খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন হয়। তিনটি উপনির্বাচনে বিজয়ী হন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার।
২০০৮ সালের উপনির্বাচনে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য মওদুদ আহমদ জয়ী হন। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। তখন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আলতাফ আলী সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালে মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করা হলে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাঁর মনোনয়ন বাতিল হলে শেষ মুহূর্তে রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয় বিএনপি। ২০২৪ সালে এখানে আওয়ামী লীগের মোস্তফা আলম বিজয়ী হন।
জেলা বিএনপির সূত্র বলছে, আসছে নির্বাচনে এই আসনে জিয়া পরিবারের কারও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এ আসনে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম রব্বানীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন র র রহম ন র ব এনপ র স ন ব এনপ র ব এনপ র দ ২০০১ স ল ২০১৪ স ল ২০২৪ স ল ২০১৮ স ল ম হ ম মদ রহম ন স আবদ ল ম র ব এনপ ল ইসল ম আওয় ম এ আসন র দখল হওয় র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বইছে নির্বাচনী হাওয়া, প্রচার–প্রচারণায় সরগরম শহর–গ্রাম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের প্রচার–প্রচারণায় নেত্রকোনার পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সব কটি আসনে ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রার্থী দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে এলাকায় নানাভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সক্রিয় রয়েছেন প্রচার-প্রচারণায়।
দলীয় নেতা–কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে চলেছেন। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও তাঁদের ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছে বড় দুটি দলই। অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি এখনো নিষ্ক্রিয়। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিপিবি) মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি করতে দেখা যায়।
নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর)
সীমান্তবর্তী এলাকার আসনটি সমতল, পাহাড় ও আংশিক হাওর এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। এর আগেও দুবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। অপেক্ষাকৃত তরুণ এই প্রার্থী গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সহায়তাসহ নানা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কায়সার কামাল বলেন, ‘আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। তাই জনকল্যাণমূলক কাজ করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ সুন্দর রাখার ব্যাপারেও আমি সব সময় সজাগ থাকি। আশা করি ভোটাররা এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।’
এখানে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা শাখার আমির আবুল হাসিম। তিনিও সভা-সমাবেশ এবং গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এখানে সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য খাইরুল বাশার ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে গোলাম রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করা গোলাম রব্বানী ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হন। ২০০৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে পুনরায় জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা)
জেলা সদরের আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ারুল হক। এর আগেও বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আশরাফ উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ টি এম আবদুল বারীসহ অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আনোয়ারুল হকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও এ টি এম আবদুল বারী এখনো নিজ মনোনয়নের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি প্রাথমিক মনোনয়ন, তাই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমি মনোনয়নের আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়। শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, চিকিৎসক হিসেবেও মানুষের পাশে থেকেছি। দলের দুঃসময়ে আহ্বায়কের দায়িত্বে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।’
এখানে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের প্রার্থী এনামুল হক। তিনি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির। জেলা জামায়াতের বর্তমান আমির ছাদেক আহমাদ হারিছ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী দল। জেলার পাঁচটি আসনেই গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। কাজেই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
এ আসনে এনসিপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান। গণ অধিকার পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ইসলামী আন্দোলন থেকে আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম রুহীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া)
আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী করেছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম হিলালী আগেও একাধিকবার বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের দুর্দিনে আমি জেলা কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন ছাড়াও নিজ নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা খুশিমনে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ছাড়াও এখানে বিএনপির মনোয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন।
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য খায়রুল কবির নিয়োগী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে আটপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ শামছুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে জাকির হোসেন সুলতানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী (শামীম)।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি)
হাওরবেষ্টিত তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটি থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৭ সাল থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত জানুয়ারিতে তিনি কারামুক্ত হন। এরপর এলাকায় ফিরে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আমি সব সময় উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অতীতে এলাকার উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। ভবিষ্যতেও করব। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন, সুশিক্ষা, বিশ্বাস ও মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখব।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক আল হেলাল তালুকদারও নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে মদন উপজেলার আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখলেছুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রের প্রেসিডিয়াম সদস্য জলি তালুকদার।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা)
আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের পূর্বধলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আবু তাহের তালুকদার। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এখানে নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আলম তালুকদার বলেন, আবু তাহের তালুকদার একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। তাঁর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা এককাট্টা।
আবু তাহের তালুকদার বলেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট আমলেও দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছি। মামলা-হামলা, গুলি, ভাঙচুর ও হয়রানির শিকার হয়েছি। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা আমার মনোনয়নে খুশি হয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’
আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরাও বসে নেই। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তাঁরাও তৎপর। এখানে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাসুম মোস্তফা। জামায়াত তাঁকে নিয়ে আশাবাদী। আসনটিতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি হাবিবুল্লাহ খানকে।