গ্রাম–ইউনিয়নে ঘুরে প্রার্থীদের গণসংযোগ, ‘সাড়া’ও পাচ্ছেন
Published: 12th, December 2025 GMT
নরসিংদীতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে দিন দিন উত্তাপ বাড়ছে। বিভিন্ন দলের মনোনয়ন পাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন তাঁরা ছুটছেন সংসদীয় আসনের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে। এসব গণসংযোগে মানুষের ‘ব্যাপক সাড়া’ পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন প্রার্থীরা।
জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে একটি আসনে (নরসিংদী-৫) মনোনয়ন নিয়ে দলীয় অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। ফাঁকা রাখা আসনটি শরিক কোনো দলকে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
জামায়াতে ইসলামী পাঁচটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার চালিয়ে আসছে। দলীয় প্রার্থী নিয়ে প্রচারণায় আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও। সর্বশেষ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জেলার চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। একটি আসনে তৎপর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী।
১৯৯১ সালে জেলার পাঁচটি আসনেই জয় পেয়েছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালে তিনটি ও ২০০১ সালে চারটি আসনে জয় পেয়েছিল বিএনপি। ২০০৮ সালে পাঁচ আসনেই জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
নরসিংদী-৩ আসনে এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক কোনো দলকে বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বলে আলোচনা আছে।নরসিংদী-১ (সদর)
১৯৯১ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন আসনটিতে সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক। ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন খায়রুল কবির খোকন। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি পদেও আছেন।
খায়রুল কবির খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন মানুষের কাছে যাই, তাঁরা কাছে এসে বলেন এত দিন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। এবার আপনাকে ভোট দিতে পারব আমরা। এতেই বুঝতে পারি, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রাম জনগণ ভুলে যাননি।’
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মো.
এনসিপি থেকে আসনটিতে প্রার্থী করা হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফয়সালকে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে উঠান বৈঠক করছি, শত শত মানুষ অংশ নিচ্ছেন। ভালোই সাড়া পাচ্ছি। মানুষ রাজনীতিতে নতুনদের দেখতে চান।’
এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জেলা শাখার উপদেষ্টা শওকত হোসাইন সরকার এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের জেলা শাখার সহসভাপতি মাহমুদুল হক ভূঁইয়া।
নরসিংদী-২ (পলাশ ও সদরের একাংশ)
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান নরসিংদী-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সাবেক এই মন্ত্রী ছাড়া এখানে আর কেউ বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন না।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হয়েছেন জেলা সেক্রেটারি মো. আমজাদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামার বেশ আগে থেকেই পলাশের জনগণের সঙ্গে আমার সেতুবন্ধ তৈরি হয়ে গেছে।’ তবে একটি বড় দলের কর্মীরা তাঁর লোকজনকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে এখানে প্রার্থী করেছে দলটি। তিনি বলেন, ‘পলাশের জনগণ অল্প সময়ে আমাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। আমার সাফল্য দেখতে চান তাঁরা। কিন্তু প্রতিনিয়ত হুমকির শিকার হচ্ছি আমরা। বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসব হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।’
তবে দুই প্রার্থীর এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন পলাশ উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিএনপির কেউ কোনো প্রার্থী বা তাঁদের কর্মীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন না। কারও পোস্টার সাঁটাতে না দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুহসিন আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ফারুক ভূঁইয়া, খেলাফত মজলিসের মো. আশরাফ হোসেন (শাহীন) দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় আছেন।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর)
আসনটিতে এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক কোনো দলকে বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বলে আলোচনা আছে। গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সদস্য জগলুল হায়দার (আফ্রিক) এখানে প্রচারণায় আছেন।
এদিকে বিএনপির চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী এখনো মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর এলাহী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হারিস রিকাবদার এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল ইসলাম (মিন্টু)। তাঁরা দুই দলে ভাগ হয়ে সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক পক্ষে রয়েছেন মনজুর এলাহী ও তোফাজ্জল হোসেন আর অন্য পক্ষে রয়েছেন আবুল হারিস রিকাবদার ও আকরামুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে মনজুর এলাহী ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
শিবপুরের অনেক মানুষের মধ্যে এখনো বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার প্রভাব রয়েছে। আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সদস্যসচিব আরিফ উল ইসলাম মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে আলোচনা আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার মরণোত্তর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হোক। দ্রুত এটি না করা হলে আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকব।’
উল্লেখ্য, ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। এক-এগারোর সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। ২০১০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী শিবপুর উপজেলা শাখার আমির মো. মোস্তাফিজুর রহমান কাওসার। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রাকীবুল ইসলামও প্রচার চালাচ্ছেন।
নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব)
নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও মনোহরদী উপজেলা শাখার সভাপতি সরদার সাখাওয়াত হোসেন (বকুল) আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে এখানে জয় পেয়েছিলেন। এখানে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন ও স্বেচ্ছাসেবাবিষয়ক সহসম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর তাঁরা আর প্রচারে নামেননি।
সরদার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদিনই সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি, তাঁদের কাছ থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা ও ইতিবাচক মনোভাব পাচ্ছি, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন আসনটি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালোই সাড়া পাচ্ছি। একসময় বেলাব ছিল বামপন্থীদের ঘাঁটি। যদি ভালো ভোট হয়, তবে আমি আশাবাদী।’
এখানে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোহরদী থানার সভাপতি সাইফুল্লাহ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মনোহরদী উপজেলা সহসভাপতি নাসির আল ফরিদী প্রচার চালাচ্ছেন। এনসিপি আসনটিতে প্রার্থী করেছে জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুনুর রহমানকে (জাহাঙ্গীর)।
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা)
বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক আশরাফ উদ্দিনকে (বকুল) নরসিংদী-৫ আসনে প্রার্থী করেছে দলটি। নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় গণসংযোগ করছেন। আশরাফ উদ্দিন বলেন, এলাকার ভোটারদের কাছ থেকে আশার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছেন। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসনে বিএনপি বিজয়ী হতে পারেনি। তিনি আশা করছেন, আসনটি পুনরুদ্ধার করে বিএনপিকে উপহার দিতে পারবেন।
এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভূঁইয়া, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসাইন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী রেজাউর রহমান। এই সাতজন একত্রে প্রার্থী বদলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিলের মতো নানা কর্মসূচি করেন।
জামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘লিখিতভাবে কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত তা বদলের দাবিতে আমরা সাত প্রার্থী একসঙ্গে আছি।’
আসনটিতে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামানকে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছেন অনেক ভোটার। নির্বাচনী সমঝোতা হলে জামায়াত আসনটি ইসলামী আন্দোলনকে ছাড় দিতে পারে বলে আলোচনা আছে। এখানে জামায়াতের প্রার্থী রায়পুরা থানা শাখার আমির মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রচারণায় আছেন। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব নাজমুল হক সিকদার। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী জেলা সহসভাপতি তাজুল ইসলাম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন ভ দল য় প র র থ ব এনপ র স ল ইসল ম র সদস য আসনট ত কম ট র এ আসন আহম দ এনস প উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বইছে নির্বাচনী হাওয়া, প্রচার–প্রচারণায় সরগরম শহর–গ্রাম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের প্রচার–প্রচারণায় নেত্রকোনার পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সব কটি আসনে ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রার্থী দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে এলাকায় নানাভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সক্রিয় রয়েছেন প্রচার-প্রচারণায়।
দলীয় নেতা–কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে চলেছেন। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও তাঁদের ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছে বড় দুটি দলই। অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি এখনো নিষ্ক্রিয়। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিপিবি) মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি করতে দেখা যায়।
নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর)
সীমান্তবর্তী এলাকার আসনটি সমতল, পাহাড় ও আংশিক হাওর এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। এর আগেও দুবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। অপেক্ষাকৃত তরুণ এই প্রার্থী গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সহায়তাসহ নানা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কায়সার কামাল বলেন, ‘আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। তাই জনকল্যাণমূলক কাজ করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ সুন্দর রাখার ব্যাপারেও আমি সব সময় সজাগ থাকি। আশা করি ভোটাররা এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।’
এখানে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা শাখার আমির আবুল হাসিম। তিনিও সভা-সমাবেশ এবং গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এখানে সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য খাইরুল বাশার ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে গোলাম রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করা গোলাম রব্বানী ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হন। ২০০৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে পুনরায় জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা)
জেলা সদরের আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ারুল হক। এর আগেও বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আশরাফ উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ টি এম আবদুল বারীসহ অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আনোয়ারুল হকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও এ টি এম আবদুল বারী এখনো নিজ মনোনয়নের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি প্রাথমিক মনোনয়ন, তাই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমি মনোনয়নের আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়। শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, চিকিৎসক হিসেবেও মানুষের পাশে থেকেছি। দলের দুঃসময়ে আহ্বায়কের দায়িত্বে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।’
এখানে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের প্রার্থী এনামুল হক। তিনি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির। জেলা জামায়াতের বর্তমান আমির ছাদেক আহমাদ হারিছ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী দল। জেলার পাঁচটি আসনেই গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। কাজেই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
এ আসনে এনসিপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান। গণ অধিকার পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ইসলামী আন্দোলন থেকে আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম রুহীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া)
আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী করেছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম হিলালী আগেও একাধিকবার বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের দুর্দিনে আমি জেলা কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন ছাড়াও নিজ নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা খুশিমনে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ছাড়াও এখানে বিএনপির মনোয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন।
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য খায়রুল কবির নিয়োগী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে আটপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ শামছুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে জাকির হোসেন সুলতানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী (শামীম)।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি)
হাওরবেষ্টিত তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটি থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৭ সাল থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত জানুয়ারিতে তিনি কারামুক্ত হন। এরপর এলাকায় ফিরে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আমি সব সময় উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অতীতে এলাকার উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। ভবিষ্যতেও করব। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন, সুশিক্ষা, বিশ্বাস ও মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখব।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক আল হেলাল তালুকদারও নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে মদন উপজেলার আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখলেছুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রের প্রেসিডিয়াম সদস্য জলি তালুকদার।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা)
আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের পূর্বধলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আবু তাহের তালুকদার। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এখানে নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আলম তালুকদার বলেন, আবু তাহের তালুকদার একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। তাঁর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা এককাট্টা।
আবু তাহের তালুকদার বলেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট আমলেও দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছি। মামলা-হামলা, গুলি, ভাঙচুর ও হয়রানির শিকার হয়েছি। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা আমার মনোনয়নে খুশি হয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’
আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরাও বসে নেই। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তাঁরাও তৎপর। এখানে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাসুম মোস্তফা। জামায়াত তাঁকে নিয়ে আশাবাদী। আসনটিতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি হাবিবুল্লাহ খানকে।