বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিরোধ মেটেনি
Published: 11th, December 2025 GMT
কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতেই বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তিনটি আসনে নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা। তবে তফসিল ঘোষণা হলে সবাই ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করতে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে মনে করছেন দলীয় প্রার্থীরা। তাঁরা মাঠে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
জেলার সব কটি আসনে প্রায় ১০ মাস আগে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। অবশ্য মধ্যে একটি আসনে প্রার্থী বদল করেছে দলটি। জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নিয়মিত উপজেলা থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ডে ছুটছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও একাধিক আসনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নেতারা। এককভাবে প্রতিটি আসনে প্রচার চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থীরা।
১৯৯১ সালে জেলার তিনটি আসনে জয় পায় বিএনপি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সব কটি আসনেই তারা জয় পায়। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব আসনে জয় পান। জামায়াত ১৯৮৬ সালে জেলার একটি আসনে জয় পেয়েছিল।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর)
সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি চরবেষ্টিত। মাদক, চোরাচালান, অস্ত্র পাচার, বেকারত্ব, নদীভাঙন এলাকার মূল সমস্যা। ১৯৯১ সাল থেকে পরপর তিনটি সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা আহসানুল হক (পচা মোল্লা)। তিনি ২০০১ সালে প্রতিমন্ত্রীও হন। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে রেজা আহমেদ (বাচ্চু মোল্লা) জয়ী হন। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ।
ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। শেষ পর্যন্ত দল যাঁকে নির্ধারণ করবে, তাঁর পক্ষে কাজ করব।’
রেজা আহমেদ বলেন, ‘এ উপজেলার যত উন্নয়ন হয়েছে, আমার বাবার হাত ধরে। দলের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে।’
এখানে জামায়াতের প্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন। তিনি দৌলতপুর উপজেলা জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এবার জামায়াতকে ভোট দিতে চান। নারী ভোটাররাও এবার আগ্রহী। আমাদের ভোট অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে।’
এনসিপি থেকে এই আসনে লড়তে চান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনিসহ কয়েকজন এখানে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী আমিনুল ইসলাম এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর)
এবার আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব রউফ চৌধুরী। তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুর রউফ চৌধুরী ১৯৯১ সালে বিএনপির মনোনয়নে এখানে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসনটিতে বিএনপির বিরোধ মেটেনি। দলের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল–সমাবেশ করে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বাবার আসনে জয় পেতে নিয়মিত উঠান বৈঠকের পাশাপাশি নারী-পুরুষ আর তরুণদের ভোট টানতে আলাদা দল গঠন করেছেন রাগীব রউফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি নতুন কিছু করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ–বাণিজ্য, ভাগাভাগি বন্ধ হয়ে যাবে, এ কারণে হাতে গোনা কয়েকজন নেতা বিরোধিতা করছেন।’
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ আসনটিতে জয় পেয়েছিলেন। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশা নিয়ে জামায়াত আসনটিতে প্রার্থী করেছে মিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুরকে। তিনি জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। তিনি প্রথমে ইউপি সদস্য, পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা নারী ও তরুণদের ভোট এবার বেশি পাব বলে আশা করছি।’
এনসিপি থেকে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক নয়ন আহমেদ ও সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের নেতারা এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর)
জামায়াত প্রথম দিকে দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ফরহাদ হুসাইনকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে গত ২৫ মে তাঁকে বাদ দিয়ে আলোচিত ইসলামি বক্তা আমির হামজাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে জামায়াতের ব্যাপক কর্মী–সমর্থক রয়েছেন। জেলার সব আসনে মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। সেটাই হবে।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সদর আসনটিতে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জাকির হোসেন সরকার। তিনি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় (২০১৪) বড় ব্যবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী জাকির হোসেন সংসদ নির্বাচনেও জয় পাবেন বলে মনে করছেন কর্মী–সমর্থকেরা। তবে মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের কর্মী–সমর্থকেরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে।
জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘সদরে আমি বিপুল ভোটে জামায়াতের প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। ভোটের ব্যবধান ছিল অনেক। এবারও আশা করছি, আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব।’
এদিকে এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়ক ভেড়ামারার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস টনিসহ কয়েকজন এখানে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ইসলামী আন্দোলন থেকে আহম্মদ আলী, গণ অধিকার পরিষদ থেকে আবদুল খালেক ও খেলাফত মজলিস থেকে আবদুল লতিফ প্রার্থী হতে পারেন।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা)
সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীকে কুষ্টিয়া–৪ আসনে প্রার্থী করেছে বিএনপি। তবে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে মাঠে আন্দোলন করছেন। কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র নূরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিকের সমর্থকেরাও সোচ্চার মাঠে। এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থীকে দুই পক্ষকে সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বিএনপির প্রার্থী মেহেদী আহমেদ বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি এর আগে এমপি হয়ে এলাকায় বিপুল উন্নয়ন করেছি। মাঠে আমার বিপুল জনপ্রিয়তা আছে।’
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ আনোয়ার খানও মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী জোট হলে এখানে জামায়াত আসনটি ইসলামী আন্দোলনকে ছাড় দিতে পারে বলে ভোটের মাঠে আলোচনা আছে।
এ আসনে এনসিপি থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাংবাদিক কে এম আর শাহিন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের যুবসংগঠন যুব অধিকার পরিষদের সহসভাপতি শাকিল আহমেদ দলীয় প্রার্থী হবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দল য় প র র থ ব এনপ র প র ব এনপ র স আসনট ত ন দল র এল ক য় ছ ন দল ন দল য় জয় প য় আবদ ল ইসল ম উপজ ল এনস প আহম দ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বইছে নির্বাচনী হাওয়া, প্রচার–প্রচারণায় সরগরম শহর–গ্রাম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের প্রচার–প্রচারণায় নেত্রকোনার পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সব কটি আসনে ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রার্থী দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে এলাকায় নানাভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও সক্রিয় রয়েছেন প্রচার-প্রচারণায়।
দলীয় নেতা–কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে চলেছেন। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও তাঁদের ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছে বড় দুটি দলই। অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি এখনো নিষ্ক্রিয়। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিপিবি) মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি করতে দেখা যায়।
নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর)
সীমান্তবর্তী এলাকার আসনটি সমতল, পাহাড় ও আংশিক হাওর এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। এর আগেও দুবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। অপেক্ষাকৃত তরুণ এই প্রার্থী গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সহায়তাসহ নানা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কায়সার কামাল বলেন, ‘আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। তাই জনকল্যাণমূলক কাজ করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ সুন্দর রাখার ব্যাপারেও আমি সব সময় সজাগ থাকি। আশা করি ভোটাররা এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।’
এখানে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা শাখার আমির আবুল হাসিম। তিনিও সভা-সমাবেশ এবং গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এখানে সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য খাইরুল বাশার ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে গোলাম রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করা গোলাম রব্বানী ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হন। ২০০৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে পুনরায় জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। এবার তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা)
জেলা সদরের আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ারুল হক। এর আগেও বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আশরাফ উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ টি এম আবদুল বারীসহ অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আনোয়ারুল হকের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও এ টি এম আবদুল বারী এখনো নিজ মনোনয়নের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি প্রাথমিক মনোনয়ন, তাই চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমি মনোনয়নের আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়। শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, চিকিৎসক হিসেবেও মানুষের পাশে থেকেছি। দলের দুঃসময়ে আহ্বায়কের দায়িত্বে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।’
এখানে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের প্রার্থী এনামুল হক। তিনি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির। জেলা জামায়াতের বর্তমান আমির ছাদেক আহমাদ হারিছ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী অহিংস ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী দল। জেলার পাঁচটি আসনেই গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। কাজেই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
এ আসনে এনসিপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান। গণ অধিকার পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ইসলামী আন্দোলন থেকে আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম রুহীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া)
আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী করেছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম হিলালী আগেও একাধিকবার বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের দুর্দিনে আমি জেলা কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন ছাড়াও নিজ নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা খুশিমনে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ছাড়াও এখানে বিএনপির মনোয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন।
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য খায়রুল কবির নিয়োগী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে আটপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ শামছুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে জাকির হোসেন সুলতানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী (শামীম)।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি)
হাওরবেষ্টিত তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটি থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৭ সাল থেকে তিনি কারাবন্দী ছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত জানুয়ারিতে তিনি কারামুক্ত হন। এরপর এলাকায় ফিরে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, ‘আমি সব সময় উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অতীতে এলাকার উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। ভবিষ্যতেও করব। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন, সুশিক্ষা, বিশ্বাস ও মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখব।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক আল হেলাল তালুকদারও নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে মদন উপজেলার আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখলেছুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রের প্রেসিডিয়াম সদস্য জলি তালুকদার।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা)
আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের পূর্বধলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আবু তাহের তালুকদার। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এখানে নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল আলম তালুকদার বলেন, আবু তাহের তালুকদার একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। তাঁর পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা এককাট্টা।
আবু তাহের তালুকদার বলেন, ‘আমি ফ্যাসিস্ট আমলেও দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছি। মামলা-হামলা, গুলি, ভাঙচুর ও হয়রানির শিকার হয়েছি। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা আমার মনোনয়নে খুশি হয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’
আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরাও বসে নেই। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তাঁরাও তৎপর। এখানে জামায়াতের প্রার্থী জেলা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাসুম মোস্তফা। জামায়াত তাঁকে নিয়ে আশাবাদী। আসনটিতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি হাবিবুল্লাহ খানকে।