স্বৈরাচারের পুনরুত্থান ঠেকানোর কী উপায়
Published: 17th, June 2025 GMT
আমরা সবাই জানি, শেখ হাসিনা ট্যাংকে চড়ে বা উর্দি পরে ক্ষমতায় আসেননি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমেই তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, যদিও নির্বাচনটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তিনি ক্ষমতায় এসে সংবিধানও বাতিল করেননি। বিদ্যমান আইনি কাঠামো, নিয়ম-পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানই তাঁকে স্বৈরাচারে পরিণত করেছিল।
যদিও আইনি কাঠামোর পরিবর্তন, বিশেষত সংসদে ব্রুট মেজরিটি (ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা) ব্যবহার করে, একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে এবং বিভিন্ন কালাকানুনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও প্রতিবাদী কণ্ঠকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে তাঁর স্বৈরাচার হওয়াটা ত্বরান্বিত ও আরও পাকাপোক্ত হয়েছিল।
ক্ষমতা গ্রহণকালে যেসব বিরাজমান নিয়ম-পদ্ধতি শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারে পরিণত করতে সহায়তা করেছে, তার অন্যতম হলো বারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া।
প্রথিতযশা লেখক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত ড.
আমাদের সংবিধানপ্রণেতারাই ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদকে এত ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরাই রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাহীন করে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যকার ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করেছেন। বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অন্য সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয়। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রের অন্য সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সব নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর একক ‘কর্তৃত্বে’ পরিচালিত হয়, যদিও সত্যিকারের সংসদীয় সরকার পরিচালিত হয় মন্ত্রিসভার নেতৃত্বে। আর সেই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী হন সব মন্ত্রীর মধ্যে প্রধান। অর্থাৎ আমাদের সংবিধানপ্রণেতারাই প্রধানমন্ত্রীকে এককভাবে ক্ষমতায়িত করেছেন।
এরপর ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং রাষ্ট্রপতির হাতে বহুলাংশে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯১ সালে সংসদীয় সরকারপদ্ধতি আবার ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেকাংশেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এভাবেই আমাদের দেশে অনেকটা ‘রাজকীয়’ প্রধানমন্ত্রীর শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এমন ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রীর আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকার সুযোগ থাকলে তাঁর পক্ষে স্বৈরাচার হওয়া এবং তাঁর হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। এর মাধ্যমে তিনি প্রকৃতপক্ষে প্রভুতে পরিণত হন। এমনই পরিস্থিতিতে আশপাশের ব্যক্তিরাও তাঁর প্রতি সীমাহীন আনুগত্য প্রদর্শন করতে বাধ্য হন এবং অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত, এমন প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই মেয়াদে সীমিত করার প্রস্তাব বিএনপির ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন ক্ষমতার আরেকটি উৎস হলো তাঁর একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধানের পদে আসীন থাকা। শুধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বাস্তব সমস্যার দিক থেকেই নয়, একই ব্যক্তির একাধারে এই তিন পদ ধারণ করার আইনগত জটিলতাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী বিভাগের প্রধান আর সংসদ নেতা সংসদের প্রধান। একই ব্যক্তির এ দুই পদে অধিষ্ঠিত থাকা নিঃসন্দেহে ‘প্রিন্সিপালস অব সেপারেশন অব পাওয়ার্স’ বা ক্ষমতার পৃথক্করণ নীতির পরিপন্থী। উল্লেখ্য, সংসদীয় দলের নেতা আর সংসদ নেতা এক নয়—সংসদীয় পদ্ধতিতে সাধারণত সংসদীয় দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হন।
প্রধানমন্ত্রীর একই সঙ্গে দলের প্রধানের পদে থাকা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। সংজ্ঞাগতভাবে রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি নাগরিক সমাজের অংশ। আর নাগরিক সমাজের অন্যতম দায়িত্ব হলো নজরদারির ভূমিকা পালন করা, যাতে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ এবং নাগরিকের অধিকার হরণ না হয়। রাজনৈতিক দলও নজরদারির ভূমিকা পালন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে পারে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার পাশাপাশি তিনি যদি দলীয় প্রধান না হতেন, তাহলে হয়তোবা পরে তাঁর দানবে পরিণত হওয়াটা ঠেকানো যেত এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার নৃশংসতা এড়ানো যেত। অর্থাৎ একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হওয়ার মাশুলই দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছে।২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘দিনবদলের সনদ’ শীর্ষক একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, যা তাদের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই নির্বাচনী ইশতেহারটি ছিল ভোটারদের কাছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনপূর্ব অঙ্গীকার। ইশতেহার ঘোষণার পাশাপাশি এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নবম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। তাই নির্বাচনে জেতার পর যে সরকার গঠিত হয়, তার দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগের প্রদত্ত নির্বাচনপূর্ব অঙ্গীকার তথা দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন করা।
আর নির্বাচন–পরবর্তীকালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিপরিষদকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো—তাদের জিজ্ঞাসা করা দিনবদলের সনদের কতটুকু তারা বাস্তবায়িত করতে পেরেছে, না পারলে কেন পারেনি তার কৈফিয়ত চাওয়া এবং তাদের অপারগতা দূর করার জন্য কী করবে, তার সুস্পষ্ট রূপরেখা দাবি করা। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে সরকারকে এ ধরনের জবাবদিহির আওতায় আনা একেবারেই সম্ভব হয়নি। কারণ, শেখ হাসিনা শুধু প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, এর পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের প্রধানও ছিলেন।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার পাশাপাশি তিনি যদি দলীয় প্রধান না হতেন, তাহলে হয়তোবা পরে তাঁর দানবে পরিণত হওয়াটা ঠেকানো যেত এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার নৃশংসতা এড়ানো যেত। অর্থাৎ একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হওয়ার মাশুলই দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছে।
আরেকভাবেও প্রধানমন্ত্রীর হাতে সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার চরম মাশুল আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছে। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলও সরকারের অংশ। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘উইনার টেক অল’ বা সবকিছুই বিজয়ীদের করায়ত্ত হওয়ার একটি ব্যবস্থা বিরাজমান। এই ব্যবস্থার ফলে নির্বাচনে যে দল বিজয়ী হয়, তারাই কার্যত সব সরকারি ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে, বিরোধী দলের সদস্যরা, বিশেষত দমন-পীড়নের সংস্কৃতির কারণে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। এই উইনার টেক অল ব্যবস্থারই একটি কুৎসিত রূপ হলো সরকার ও সরকারি দলের মধ্যকার বিরাজমান বিভাজন দূরীভূত হয়ে যাওয়া এবং সবকিছু ক্ষমতাসীন দলের করায়ত্ত হয়ে পড়া।
এ কারণেই গত জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীরাও আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে বহু ব্যক্তিকে আহত ও নিহত করেছেন। আর তা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দলের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কারণেই। তাই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের দায় এড়ানো সম্ভব নয়।
আর এ কারণেই অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান হন না। উদাহরণস্বরূপ, নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেও ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি হলেন জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন সোনিয়া গান্ধী।
তাই একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে হলে এবং স্বৈরাচারের পুনঃপ্রবর্তন ঠেকাতে হলে আমাদেরও প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ও সর্বময় ক্ষমতার অবসান ঘটাতে হবে। একই ব্যক্তি যেন প্রধানমন্ত্রী, সংসদীয় নেতা, বিশেষত দলীয় প্রধান না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা যাতে এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়ে নাগরিকের অধিকার হরণ না হয়, তা নিশ্চিত করতেই পণ্ডিতেরা ক্ষমতার পৃথক্করণ নীতির উদ্ভাবন করেছেন।
● ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
* মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র ষ ট রপত মন ত র র ক ক ষ গত দল হ স ব ক ষমত র ব যবস থ ক ষমত য় কর ছ ন র জন ত আম দ র অর থ ৎ ত করত ত হওয় আওয় ম হওয় র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।