আদালতের আদেশ না মানার অভিযোগ, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান–সদস্যসহ ১৮ জনকে নোটিশ
Published: 19th, June 2025 GMT
আদালতের আদেশ না মানার অভিযোগ তুলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১৪ সদস্য, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী এবং নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জেলার চার বাসিন্দার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সুলতান উদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ওই নোটিশ পাঠান।
পরিষদের দুই সদস্যের কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও পরিষদ সভায় তাঁদের উপস্থিতি ও তাঁদের নিয়ে সভা আদালতের আদেশের লঙ্ঘন ও অবাধ্যতা বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশের ভাষ্য, উল্লেখিত অভিযোগের জন্য তাঁদের (নোটিশগ্রহীতাদের) বিরুদ্ধে আইন অনুসারে আদালত অবমাননার আবেদন করা হবে।
এর আগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন বিষয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১০টি উপজেলা থেকে প্রতিনিধি না নেওয়া, হত্যা মামলার আসামি এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে নিয়ে জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের অভিযোগ তুলে প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে আইনজীবী রাজীব চাকমাসহ চার ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩ মার্চ হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। পরিষদের দুজন সদস্যের কার্যক্রম পরিচালনায় তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন প্রণতি রঞ্জন খীসা ও রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা।
নোটিশদাতাদের আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা। শুনানির পর গত ২১ এপ্রিল চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ দেন। পরে আরও কিছু তথ্যসহ দ্রুত শুনানির জন্য গত ২২ মে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা। আপিল বিভাগ ২ জুন লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রিটটি (চার ব্যক্তির করা) এক মাসের মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।
নোটিশদাতা চার ব্যক্তির আইনজীবী মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত আইনজ ব সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল হলে বাকশাল ফিরে আসবে: আপিল শুনানিতে শিশির মনির
পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরো বাতিল হলে আবার বাকশাল ফিরে আসবে। সংবিধান থেকে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাদ পড়ে যাবে। যেভাবে আছে, সেভাবে থাকলে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে দেখার সুযোগ বেশি থাকবে। আর এই ব্যাপ্তিটা খোলা থাকা উচিত, গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে যেন সংবিধান সংস্কার পরিষদ বিষয়গুলোতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের করা আপিল শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আজ বুধবার এ কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ শুনানি গ্রহণ করেন। আগামীকাল শুনানির পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে উল্লেখ করে শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শিশির মনির বলেন, জুলাই চার্টার হয়েছে। এখানে বড় ধরনের প্রক্রিয়া ও বিষয়গত প্রস্তাব এসেছে। জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ জারি হয়েছে। যেভাবে আছে, সেভাবে থাকলে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে দেখার সুযোগ বেশি থাকবে। এখন যেভাবে আছে তাতে সিজার চালিয়ে দেওয়া হলে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণের সামনে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।
শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে কে দেখবে? নবনির্বাচিত সংসদ দেখবে? তখন শিশির মনির বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ। যার মূল হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে সংবিধান সংস্কার পরিষদের ওপরে দেওয়া হয়েছে। এ অংশ গণভোটে আবার চারটি প্রশ্ন আকারে যাচ্ছে। সংবিধান সংস্কার সভায় যদি ভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়, এমনও হতে পারে যে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে আর আলোচনার প্রয়োজন না–ও হতে পারে। কারণ, জুলাই চার্টারে প্রস্তাবিত অনেকগুলো বিষয়ই পঞ্চদশ সংশোধনীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই ব্যাপ্তিটা খোলা থাকা উচিত, গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে যেন সংবিধান সংস্কার পরিষদ এ বিষয়গুলোতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। রায়ে গণভোটের বিধানসংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে অন্য বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি আপিল হয়। সুজন সম্পাদকসহ চার ব্যক্তি একটি আপিল করেন। নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন একটি এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আরেকটি আপিল করেন। আপিলের ওপর ৩ ডিসেম্বর (গত বুধবার) শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর এবং আজ শুনানি হয়। আদালতে বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তির পক্ষে শুরুতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
চার ব্যক্তির আইনজীবীর বক্তব্য উপস্থাপনের পর মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানিতে অংশ নেন। এরপর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।