কোটি টাকার প্রকল্পে থাবা বিএনপি নেতাদের
Published: 21st, June 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরীতে কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ঠিকাদারকে সরিয়ে বিএনপি নেতারা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি মাসে শেষ হওয়া ওই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজে ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, শিল্পনগরীতে সড়ক, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। গত মার্চে শিপড়া ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। গত ২২ মে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে ৪ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৪২০ ফুট দীর্ঘ সড়ক, তিনটি কালভার্ট, নতুন ড্রেন এবং বিসিক ভবনের সংস্কার করা হয়েছে। তবে বাস্তবে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় বিএনপি নেতারা প্রভাব খাটিয়ে নিজেরাই কাজটি করেন।
শিপড়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী চন্দন ঘোষ অভিযোগ করেন, প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার পেলেও স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাঁকে কাজটি করতে দেননি। প্রভাব খাটিয়ে এই প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নেন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কাজী হেলাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম ও চররুহিতা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো.
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, বিসিকের নতুন সড়কে পানি জমা, ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু জায়গা এবং ভাঙন দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজে পাথর, রড ও সিমেন্ট ঠিকমতো
দেওয়া হয়নি।
বিসিকসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া, তাজুল ইসলাম ও রফিক জমাদার জানান, ঠিকভাবে মাটি না ভরাট করেই ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন সড়কে ঢেউয়ের মতো তৈরি হয়েছে, যা যান চলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কোটি টাকার কাজ হবে মানসম্মত। কিন্তু এখনই রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে, মানুষ পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে। এটা দেখে মনে হয়, কাজ শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
বিসিকের প্রকল্পের কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কাজী হেলাল উদ্দিন বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই কাজটি তারা করেছেন। জোর করে নিয়ে নয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম বলেন, আগে বিভিন্ন
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ছাত্রলীগ (নেতারা) করেছে। এখন ছাত্রদল উন্নয়ন কাজ করবে এটা স্বাভাবিক, সবাই জানে।
সড়কের কিছু জায়গায় পানি জমার বিষয়টি নজরে এসেছে জানিয়ে বিসিক প্রকৌশল শাখার টেকনিক্যাল অফিসার আশিকুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে কাজের মান পুনরায় মূল্যায়ন করা হচ্ছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক মো. ফজলুল করিম জানান, কাজটি দেখতে আঞ্চলিক
পরিচালক, টেকনিক্যাল কর্মকর্তাসহ অনেকে এসেছেন। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি তারাও তদন্ত করে গেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ প রকল প র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম নগরে নেতৃত্বশূন্য যুবদল, হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি। এক বছর পার হলেও নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নগরে সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে দলটি। কমিটি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
নেতা-কর্মীরা জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কমিটি থাকলে দলের প্রার্থীদের জন্য ওয়ার্ড, থানা কমিটিসহ তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণা চালানো সহজ হতো। এখন কমিটি না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগেই কমিটি ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। স্থানীয় নেতাদের পছন্দের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিটি গঠন করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।
২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর চার মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর থেকে নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল।
২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর চার মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর থেকে নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল।কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মহানগর যুবদলের শীর্ষ দুই পদের জন্য প্রার্থীদের রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। পদ পেতে আগ্রহী অর্ধশতাধিক ব্যক্তি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা দেন। প্রার্থীরা এতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের ভূমিকা–সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করেছেন। পরের মাসের শেষের দিকে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে।
আহ্বায়ক পদ পেতে রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা দেওয়া কয়েকজন হলেন নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল হোসেন ও সাবেক সহসভাপতি শাহেদ আকবর প্রমুখ।
সদস্যসচিব পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এর মধ্যে এমদাদুল হককে গত ১২ জুলাই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে তিনি দাবি করেছেন, পদপ্রত্যাশী হওয়ায় মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। কমিটির শীর্ষ পদের জন্য আরও আলোচনায় আছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ। নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পদে না থাকলেও দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সামনেও করব।’
নির্বাচনের আগেই কমিটি আসবে। সৎ, ত্যাগী ও দলের দুঃসময়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মূল্যায়ন হবে।—মীর হেলাল উদ্দীন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক, বিএনপিনগর যুবদলের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, বর্তমানে কোনো কমিটি না থাকলেও তাঁরা দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু সাংগঠনিক কাজকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্বের প্রয়োজন। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে নেতৃত্ব থাকা দরকার। কমিটি থাকলে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে সুবিধা হবে। এরই মধ্যে বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠন উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কমিটি না থাকায় যুবদল পিছিয়ে রয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে দলকে এগিয়ে রাখতে নির্বাচনের আগে কমিটি ঘোষণা করা দরকার জানিয়ে নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি শাহেদ আকবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে কমিটি থাকলে দলের কাজ আরও গতিশীল হবে।’
নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন যেহেতু কয়েক মাস পরে। আশা করা যায় এর আগেই কমিটি ঘোষণা হতে পারে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই কমিটি আসবে। সৎ, ত্যাগী ও দলের দুঃসময়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মূল্যায়ন হবে।’
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটির যাচাই-বাছাই প্রায় শেষ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। আরও কয়েকটি জেলার কমিটিও পরিকল্পনায় রয়েছে।’