অর্থ সংকটসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মাঝে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ চালাতে হচ্ছে। লুট হওয়া অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যে স্বল্প সময়ের দায়িত্বে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অনুসরণীয় কিছু নমুনা রেখে যাচ্ছে সরকার।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাজেট বিতর্ক: প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তী কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যেই বাজেট ঘোষণা করতে হয়েছে। বহু বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতি, অপচয় ও অদক্ষতা এখানে মূল সমস্যা। এখন প্রয়োজন সামগ্রিক সংস্কার, তা না হলে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বড় প্রতিবন্ধকতা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই একমত কিন্তু কেউ তা বন্ধ করতে চায় না।

তিনি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর জ্বালানি খাতে ৩ বিলিয়নের বেশি ডলার বকেয়া নামিয়ে আনা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়নে। সময়মতো পরিশোধ করায় এলএনজির দামও কমেছে। আগে প্রতি ইউনিট ১৬ থেকে ১৭ ডলার ছিল। এখন তা ১২ ডলারে এসেছে। 
উপদেষ্টা বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নেওয়া হয় ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। অথচ বেসরকারি কেন্দ্র থেকে ১৩ টাকার বেশি দরে কেনা হচ্ছে। আগের সরকার প্রতি দুই মাসে একবার দাম সমন্বয়ের নীতি নিলেও অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মাসে একবারও দাম বাড়ায়নি।

উপদেষ্টা বলেন, বাসা ও কারখানার ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে; যা বাস্তবায়ন করা গেলে গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমবে। গ্যাস আমদানিতে সরকার বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে। ৬৫ টাকা দরে গ্যাস কিনে শিল্পে ৩০ টাকায়, বিদ্যুতে ১২ টাকা এবং সারে ১৬ টাকায় সরবরাহ করছে। ভর্তুকি কমাতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো গেলে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। আর জাতীয় গ্রিডেও উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ যোগ করা যাবে।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট গতানুগতিক মনে হলেও এটি দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বিএনপি নেতা ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আমলা ও ব্যবসায়ী শ্রেণি মিলেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করেছে। প্রকৃত উদ্যোক্তাদের সুযোগ কমে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার সংস্কারের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, বিনিয়োগের জন্য উদ্ভাবনের সংযোগ ঘটাতে হবে বাজেটে। আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া রাজস্ব বৃদ্ধি দুর্নীতি ও অদক্ষতা বজায় রাখার মাধ্যম হয়ে উঠবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অতনু রব্বানী প্রশ্ন রাখেন, সরকারি সেবা নিতে যদি ঘুষ দিতে হয়, তাহলে জনগণ কর দিতে আগ্রহী হবে কেন?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বাজেটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, সরকারি তথ্যের স্বচ্ছতা ও নাগরিক নিরাপত্তার অভাব এ প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, করনীতি হতে হবে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায্যতার সহায়ক।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জুলফিকার আলী জানান, শিক্ষা খাতে বাজেটের অগ্রাধিকার কমছে। শিক্ষার মানও আশঙ্কাজনক। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তেও পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, ১৬ থেকে ২৯ বছর বয়সী ৪৩ শতাংশ তরুণ এখন কর্মে বা পড়াশোনায় নেই, যা ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চ্যাটজিপিটির স্বাস্থ্য পরামর্শ মানতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে

ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি এখন দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহার করছেন অনেকেই। কেউ আবার চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির পরামর্শে দৈনন্দিন খাবার থেকে লবণ প্রায় পুরোপুরি বাদ দিয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা ৬০ বছরের এক ব্যক্তি। এরপর বাধ্য হয়ে হাসপাতালে তিন সপ্তাহ চিকিৎসা নেন তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, রোগী কয়েক সপ্তাহ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে সোডিয়ামের মাত্রা প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনেন। এতে তাঁর শরীরে ‘হাইপোনাট্রেমিয়া’ নামের বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়। এর ফলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

ওই ব্যক্তির পরিবারের দাবি, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই তিনি সম্পূর্ণভাবে এআইভিত্তিক হেলথ প্ল্যানের ওপর নির্ভর করেছিলেন। তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর তিনি সুস্থ হন । ঘটনাটি সম্প্রতি আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানসের সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, সোডিয়ামের মতো অপরিহার্য খনিজ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া এআইয়ের পরামর্শ অনুসরণ করা গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কীভাবে খাবার থেকে সম্পূর্ণভাবে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা সাধারণত খাবার লবণ বাদ দেওয়া যায়, তা ওই ব্যক্তি চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে চ্যাটজিপিটি তাঁকে বিকল্প হিসেবে সোডিয়াম ব্রোমাইড ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। চ্যাটজিপিটির পরামর্শ মেনে তিনি অনলাইনে সোডিয়াম ব্রোমাইড কিনে প্রায় তিন মাস রান্নায় ব্যবহার করেন। এর ফলে ধীরে ধীরে বিভ্রম, সন্দেহপ্রবণতা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, এমনকি পানি পান করতে অনীহার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি বিভ্রান্ত ছিলেন এবং পানিকে দূষিত মনে করতেন।

চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর শরীরে ‘ব্রোমাইড টক্সিসিটি’ বা ব্রোমিজম ধরা পড়েছে, যা এখন অত্যন্ত বিরল হলেও একসময় উদ্বেগ, অনিদ্রা ও নানা স্নায়বিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। তাঁর শরীরে ব্রোমিজমের অন্যান্য উপসর্গও দেখা যায়। এর ফলে ত্বকে ব্রণের মতো ফুসকুড়ি এবং ‘চেরি অ্যাঞ্জিওমা’ নামে পরিচিত লাল দাগ দেখা যায়। চিকিৎসায় গুরুত্ব দেওয়া হয় শরীরে পর্যাপ্ত পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ওপর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ তথ্য জানার ক্ষেত্রে এআই কার্যকর হলেও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই তাদের শর্তাবলিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে, ‘আমাদের সেবার আউটপুটকে একমাত্র সত্য বা নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয় এবং এটি কখনোই পেশাদার পরামর্শের বিকল্প হতে পারে না। এই সেবা রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তৈরি করা নয়।’

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ