জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় কারাবন্দী-আটক হওয়া প্রবাসীদের মুক্তিসহ চার দাবিতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শতাধিক ব্যক্তি।

আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে ‘জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলফেরত ভুক্তভোগী প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের স্বজনেরাও অংশ নিয়েছেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা চারটি দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো—জুলাই আন্দোলনের মামলায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে কারাবন্দী, আটক প্রবাসীদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের ‘জুলাই প্রবাসী যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। দেশে ফেরত আসা ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পুনর্বাসন করা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।

শাহবাগ থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, এই আন্দোলনকারীরা সকালে শাহবাগ এলাকায় জড়ো হন। পরে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এলে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। এতে বাংলামোটর হয়ে যমুনা অভিমুখের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের সহায়তায় আন্দোলনকারীদের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। অন্যরা সেখানকার সড়কের অবস্থান নেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে তাঁরা, তাঁদের স্বজনেরা জেলে যান, আটক হন। তাঁদের মধ্যে ১৮৯ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের মুক্তিতে সহায়তা করেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু এখনো সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে প্রবাসীরা কারাবন্দী-আটক আছেন। তাঁদের মুক্তির বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সংযুক্ত আরব আমিরাতফেরত সগীর তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্য দেশে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীশ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাচ্ছেন।

স্বামীর মুক্তির দাবি জানিয়ে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার নুরুন নাহার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমার স্বামী ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জেলে বন্দী। আমার আরেক ভাইও সেখানে আটকে আছেন। আমরা বেশি কিছু চাই না। তাঁদের মুক্তি চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স দ র ক র বন দ

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা

দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা শিক্ষার উন্নয়নে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার নানা দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শিক্ষায় বিনিয়োগ বনাম নিষ্ক্রিয়তার মূল্য: শিশু ও তরুণদের শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার বৈশ্বিক ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যয়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ইউনেসকোর ‘দ্য প্রাইস অব ইনঅ্যাকশন’ প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ। আলোচনায় শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ইউনেসকোর ওই প্রতিবেদন বলা হয়, শিক্ষায় বিনিয়োগ না বাড়ালে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার ১০ শতাংশ কমাতে পারলে একটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

আলোচনায় বক্তারা দেশের শিক্ষার উন্নয়নে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার নানা ত্রুটিপূর্ণ দিক উল্লেখ করেন। তাঁদের আলোচনায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলো উঠে আসে।

এ বৈঠক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ, প্রারম্ভিক শিক্ষায় বিনিয়োগের মতো ১০টি সুপারিশ করা হয়। সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর জোর দেন তাঁরা।

অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার এই অবস্থা মূলত একটি রাজনৈতিক ব্যর্থতা। শিক্ষার উন্নয়নে আমরা রাজনৈতিক দল বা শ্রেণিগুলোকে একটি চুক্তিতে আনতে পারছি না। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগের অভাব ও বৈষম্য দেখা যাচ্ছে।’

২০২৩ সালের ব্যানবেইসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাধ্যমিকে এই সংখ্যা ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। মেয়েদের মধ্যে এই ঝরে পড়ার হার বেশি।

আবার যারা পড়াশোনা করছে, তাদের শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। দ্য ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্টের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারে। মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে প্রত্যাশিত উত্তর করতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূরজাহান খাতুন বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, এখানে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে গণমাধ্যম কিছুই করে না।

সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, ‘সমস্যাগুলো চিহ্নিত হচ্ছে, এগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য একটা ওয়েকআপ কল। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলো বাইরে থেকে কেউ এসে ঠিক করে দেবে না। এসব আমাদেরই ঠিক করতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ