আবাসন সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কলেজে এসে হলের অবস্থা পরিদর্শন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে একটি স্পষ্ট পথনকশা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলেজ প্রশাসন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কেএ-৭৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদুল আবেদিন বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবিগুলোর অগ্রগতি জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আবারও আজ হল খালি করতে বলা হয়েছে। আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়নি। আমরা এই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছি এবং প্রশাসনকে জানিয়েছি, আমরা আন্দোলনের সময় হলে অবস্থান করব।’

পরে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, পরিত্যক্ত হল ব্লকগুলোতে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। সেই ঝুঁকি নিতে তাঁরা রাজি নন। শিক্ষার্থীরা যদি হল খালি করে নতুন বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন, তবে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা যাবে।

অধ্যাপক কামরুল আলম জানান, নতুন একটি হল নির্মাণের প্রস্তাব ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অন্য দুটি মেডিকেল কলেজের জন্য বরাদ্দ দুটি হল প্রকল্প এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পুনঃ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

নতুন হলের বাজেট পাস, বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা, পুরাতন একাডেমিক ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা ও নতুন ভবনের বাজেট অনুমোদনের দাবি জানিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের আজ দুপুর ১২টার মধ্যে হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এটিকে আন্দোলন দমন চেষ্টার অংশ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা এ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেন।

উল্লেখ্য, ২৮ মে থেকে পাঁচ দফা দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৬ জুন থেকে শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করছেন।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, হল ছাড়তে নির্দেশ২১ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গানে–আবৃত্তিতে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা

জমিদারির কাজে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসরে বহুবার ভ্রমণ করেছিলেন। পদ্মায় বোটে করে ভাসতে ভাসতে দেখেছেন বাংলার সজল সবুজ প্রকৃতি। নদীর দুই পারের মানুষের জীবনযাত্রা। বাউল, ভাটিয়ালি গানের সুরে মোহিত হয়েছে কবির চিত্ত। কবি সেই সব দেখা ও শোনার অভিজ্ঞতা, আবেগ, অনুভব প্রকাশ করেছেন গানে, কবিতায়, গল্পে আর ‘ছিন্নপত্র’ নামের চিঠিতে। কবির প্রয়াণ দিবসের আয়োজনে সেই রচনা থেকে পাঠ আর গানে গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করল ছায়ানট।

গতকাল বুধবার ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ‘অন্তরতর হে-বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সন্ধ্যা সাতটায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সম্মেলক কণ্ঠে ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’ গানটি দিয়ে। পরে ইফফাত বিনতে নাজি গেয়েছেন ‘চিত্ত পিপাসিতরে গীত সুধার তরে’। গানের ফাঁকে ফাাঁকে পদ্মাপারের জীবনযাত্রা নিয়ে কবির লেখা থেকে পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি করেছেন সুমনা বিশ্বাস ও জহিরুল হক খান। এরপর আবার সম্মেলক কণ্ঠের গান ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে’।

একদা পদ্মাঘাটে লেগেছিল কবির বোট। পাশেই গ্রামের কোনো এক বধূকে বিদায় দিতে সমবেত হয়েছিল তাঁর বিভিন্ন বয়সী আত্মীয়স্বজন। নানা কথোপকথনে মেতে উঠেছিলেন তাঁরা। কবি সেই বর্ণনা লিখেছিলেন তাঁর অনন্য কাব্যময় ভাষায়। সেটি পাঠ করা হলো। তারপর দুটি একক কণ্ঠের গান। ‘ওলো সই, ওলো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কই’ গানটি গেয়ে শোনালেন মাসকুরা আখতার। অমেয়া প্রতীতি পরিবেশন করলেন ‘তোমার গোপন কথাটি, সখী, রেখো না মনে’।

এবার এক ধবল জ্যোৎস্নার বর্ণনা। পদ্মার জনমানবহীন, বৃক্ষ–তৃণশূন্য, দিগন্তবিস্তৃত ধু ধু বালুচর। কোজাগর পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাস্নাত সেই চর দেখে কবির মন ভরে উঠেছিল ভাবাবেগে। তাঁর রচনা থেকে সে রাতের বর্ণনা পাঠের পর অভয়া দত্ত গেয়ে শোনালেন ‘আজি যে রজনী যায়’। দীপ্র নিশান্ত শোনালেন ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমার সাধের সাধনা।’

অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল পাঠ আবৃত্তি আর গানে গানে। গান নির্বাচন করা হয়েছিল পাঠ ও আবৃত্তির বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। ‘দুই পাখি’ কবিতাটি আবৃত্তির পরে কবিতাটির গান পরিবেশন করেন তাহমিদ ওয়াসীফ। ‘বঁধু মিছে রাগ করো না’ গেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

পূর্ব বাংলায় এসে বাউলগানের সুর, মরমি ভাবধারায় কবি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সে কথা তিনি লিখেছেনও নানা রচনা ও চিঠিতে। তার খানিকটা পাঠ করে শোনানো হলো শ্রোতাদের। তারপর ‘আমি কান পেতে রই’ গানটি পরিবেশন করলেন অভিজিৎ দাস।

কবির অন্তরের যে আধ্যাত্মিক ভাব ও ভাবনা, সেসব নিয়েই তিনি নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো রচনা করছিলেন। এই কবিতাগুলো নিয়ে তখন স্তুতি ও সমালোচনা, চারপাশের নানা রকম কোলাহল। সেসবের কোনো কিছুতেই তিনি বিচলিত বোধ করছিলেন না। বন্ধু বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে তাঁর ভাব–ভাবনার কথা জানিয়ে পত্র রচনা করেছিলেন কবি। পত্র থেকে পাঠ করা হলো। পরে ‘কোলাহল তো বারণ হলো’ গানটি গাইলেন মনীষা সরকার। আজিজুর রহমান তুহিন শোনালেন ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’। শেষে সম্মেলক কণ্ঠে ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ পরিবেশনা। আর সমাপ্তি হলো বরাবরের মতোই জাতীয় সংগীত দিয়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ