উদ্ভাবন, কর্মসংস্থান ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সম্মেলন বিপিও সামিট। ঢাকার সেনাপ্রাঙ্গণে বসে দুই দিনব্যাপী দেশের অন্যতম আউটসোর্সিং শিল্পভিত্তিক আয়োজনের এ সামিট।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত এ সামিটের এবারের থিম ২.০ : রেভল্যুশন টু ইনোভেশন, যা এখন সম্ভাবনাময় রূপান্তরিত বাংলাদেশের
প্রতিচ্ছবি হিসেবে সামনে আসছে।
বিশেষ এক্সপেরিয়েন্স জোনের মধ্যে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা, জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নির্মিত এআর (অগমেটিক রিয়েলিটি) ও ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) অভিজ্ঞতা, উন্নতমানের ড্রোন ও সাবমেরিন টেকনোলজি আর রোবট প্রদর্শনী জায়গা পেয়েছে, যা আগত অতিথি ও তরুণ দর্শনার্থীর জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বাক্কো সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন, সামিট শুধু ইন্ডাস্ট্রি সম্মেলন নয়; এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস, সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার সম্মিলিত ঘোষণা। এমন আয়োজন দেশের তরুণদের প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক শক্তি
হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশে সামিটের যাত্রাপথ, বিপিও এবং আইটিইএস খাতের বিকাশ ও তাতে বাক্কোর ভূমিকা ও প্রতিশ্রুতি সামনে আসে। সামিটের অতীত সাফল্য, বর্তমান উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার
বিষয়ে কথা বলেন বক্তারা।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব
শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তিকে আমরা শুধু খাত হিসেবে নয়, এটি আমাদের উন্নয়ন দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু। সামিটের মাধ্যমে ভবিষ্যতের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রযুক্তি
অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তুলবে।
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, একটি ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগ ও সঠিক দক্ষতা– তিনটির সমন্বয়েই আজ বাংলাদেশ থেকে উঠে আসছে বৈশ্বিক কর্মশক্তি। এমন সামিট তাদের স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। সরকারের তরফ থেকে আমরা প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে নীতিগত উন্নয়নে কাজ করছি। ফলে তরুণ প্রজন্ম বৈশ্বিক বাজারের জন্য পুরোপুরি তৈরি
হওয়ার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, প্রয়োজন নীতিগত সহায়তা, যা বাস্তবায়নে কর্মসূচি নিয়েছি। এ ধরনের সামিট সেসব প্রচেষ্টার বাস্তব প্রতিফলন, যেখানে তরুণদের স্বপ্ন, দক্ষতা ও উদ্যোগের মিশেলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নির্দেশ করছে।
বাংলাদেশে এ ধরনের সামিট এখন আর
শুধু সম্মেলনের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সারাদেশের প্রযুক্তিনির্ভর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যতের স্থাপত্যে মাইলফলক অধ্যায় বলে উল্লেখ করেন সম্মেলনের উদ্যোক্তারা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।
চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।
মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’
প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’
প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’
১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।
এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।