দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা চলতে পারে না
Published: 23rd, June 2025 GMT
শিক্ষাবিদেরা দীর্ঘদিন ধরেই বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হিস্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এলেও বিগত কোনো সরকারই সে পথে হাঁটেনি। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারও বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। বরং এ খাতে গত অর্থবছরের চেয়ে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
আমাদের শিক্ষায় জিডিপির যে যৎসামান্য বরাদ্দ, তার সিংহভাগই ব্যয় করা হয় অবকাঠামো খাতে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতার সঙ্গে যোগসূত্র আছে—এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় নয়, এমন প্রকল্প পাস করিয়ে নেন। ফলে মেরামত বা নতুন করে নির্মাণ করতে হবে, এমন জরুরি অবকাঠামো প্রকল্পও বছরের পর বছর পড়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ রকম জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শিক্ষা নিতে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের চরম্বা উচ্চবিদ্যালয়টি যেন আমাদের অবহেলিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতীক। এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ১৯৬৮ সালে ২ একর ২৩ শতক জায়গা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে সাত শতক জায়গায় মূল দোতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটি ১০ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
এ অবস্থায় বিদ্যালয়টির ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে ছয়টি কক্ষে ঠেসে–পুড়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা যে কতটা বেহাল, সেটা প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দেয়ালে রঙের প্রলেপ উঠে গেছে অনেক আগে। প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। দেয়াল, ছাদ ও পিলারের স্থানে স্থানে ফাটল। কোথাও কোথাও বেরিয়ে এসেছে রড। ছাদ বেয়ে পড়ছে পানি। ভবনটির দোতলার একটি কক্ষ কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেই কক্ষটির ছাদ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেটা আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।
এ রকম পরিবেশে শিক্ষাদান কল্পনাতীত। কিন্তু দেশে এ রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যে কম নয়, সংবাদপত্রের খবরই তার সাক্ষ্য দেয়। প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকেরা কীভাবে পাঠদান করবেন, শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী হবে আর অভিভাবকেরা কীভাবে তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন?
আমরা মনে করি, সারা দেশে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের একটি তালিকা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তালিকা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। মধ্যবর্তী সে সময়টাতে শিক্ষার্থীদের বিকল্প কীভাবে পাঠদান করা যায়, সেটাও ভাবতে হবে। বড় কোনো ট্র্যাজিক পরিণতির আগেই শিক্ষা খাতের অভিভাবকদের টনক নড়বে বলে আমরা আশা করি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর দ দ
এছাড়াও পড়ুন:
চিকিৎসক-স্থাপনা কিছুই নেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে
সখীপুর উপজেলায় ছয়টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর মধ্যে দুটিতে নেই কোনো স্থাপনা। চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটিতেই নেই চিকিৎসা কর্মকর্তা। স্থাপনাবিহীন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রেষণে রয়েছেন অন্য কর্মস্থলে। চলমান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিচ্ছেন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, প্রসূতিবিদ ও ফার্মাসিস্ট।
বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র কার্যালয়ের বেহাল অবস্থা। দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত। তবুও উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (সেকমো) ও ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৮০ শতাংশ জমিই দখল হয়ে গেছে। বাকি ২০ শতাংশেও নেই সীমানা প্রাচীর। আবাসিক ভবনটিও বসবাস অযোগ্য। চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই ৮-১০ বছর। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে এমন তথ্য-চিত্র পাওয়া গেছে।
বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে কাদা ও ময়লার স্তূপ জমে আছে। হাটের আবর্জনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির আশপাশেই ফেলা হয়। ফলে স্থাপনার চারপাশেই দুর্গন্ধ। ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। দেয়াল ফেটে গেছে। টিনের চাল মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। দরজা-জানালা ভাঙা। বৃষ্টি নামলেই ঘরের ভেতরে পানি জমে। ফলে কক্ষের ভেতর সংরক্ষণে রাখা কাগজ ও আসবাব ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারটি সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী। আবাসিক ভবনটিও এক যুগ ধরে বসবাসের অযোগ্য। ভেতরে পোকা-মাকড় বাসা বেঁধেছে। আশপাশ ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে।
সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জামিনি আক্তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস প্রেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকায় কর্মরত। এ ছাড়া বহেড়াতৈল কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা মরিয়ম আক্তার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, স্থাপনাবিহীন যাদবপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জান্নাত আরা জ্যোতি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ও স্থাপনাবিহীন হাতিবান্ধা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামীমা আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া বাঘেরবাড়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামসুল আলম নিজ কর্মস্থলেই কাজ করছেন।
সেবা নিতে আসা নুরভানু নামে এক হাঁপানি রোগীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিনিয়তই এ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসি। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য সখীপুর হাসপাতাল অথবা দূরে কোথাও যেতে হয়। গরিব হওয়ায় অন্যত্র যাওয়ার সামর্থ্য নেই।’
বড়চওনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জমির উদ্দিন জানান, জমিটি উদ্ধার করে সীমানা প্রাচীর ও ভবন নির্মাণের দাবি তাদের। তাঁর অভিযোগ, এ সেবা কেন্দ্রে গত ৮-১০ বছরে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার দেখা মেলেনি।
বড়চওনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত সেকমো আবদুল মালেক সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, ‘ডাক্তার ও অফিস সহায়ক না থাকায় তাদের কাজ ফার্মাসিস্ট ও আমাকেই করতে হচ্ছে। আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত থাকায় ১২ কিলোমিটার দূরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে।’ তাঁর দাবি, প্রতিদিন এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৮০ থেকে শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেহানা পারভীনের ভাষ্য, জমিটি উদ্ধারে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তাদের সংযুক্তি বাতিল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর আশা, শিগগিরই বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হবে।