শিক্ষাবিদেরা দীর্ঘদিন ধরেই বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হিস্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এলেও বিগত কোনো সরকারই সে পথে হাঁটেনি। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারও বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। বরং এ খাতে গত অর্থবছরের চেয়ে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।

আমাদের শিক্ষায় জিডিপির যে যৎসামান্য বরাদ্দ, তার সিংহভাগই ব্যয় করা হয় অবকাঠামো খাতে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতার সঙ্গে যোগসূত্র আছে—এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় নয়, এমন প্রকল্প পাস করিয়ে নেন। ফলে মেরামত বা নতুন করে নির্মাণ করতে হবে, এমন জরুরি অবকাঠামো প্রকল্পও বছরের পর বছর পড়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ রকম জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শিক্ষা নিতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের চরম্বা উচ্চবিদ্যালয়টি যেন আমাদের অবহেলিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতীক। এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ১৯৬৮ সালে ২ একর ২৩ শতক জায়গা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে সাত শতক জায়গায় মূল দোতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটি ১০ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

এ অবস্থায় বিদ্যালয়টির ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে ছয়টি কক্ষে ঠেসে–পুড়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা যে কতটা বেহাল, সেটা প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দেয়ালে রঙের প্রলেপ উঠে গেছে অনেক আগে। প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। দেয়াল, ছাদ ও পিলারের স্থানে স্থানে ফাটল। কোথাও কোথাও বেরিয়ে এসেছে রড। ছাদ বেয়ে পড়ছে পানি। ভবনটির দোতলার একটি কক্ষ কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেই কক্ষটির ছাদ এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেটা আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।

এ রকম পরিবেশে শিক্ষাদান কল্পনাতীত। কিন্তু দেশে এ রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যে কম নয়, সংবাদপত্রের খবরই তার সাক্ষ্য দেয়। প্রতিদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকেরা কীভাবে পাঠদান করবেন, শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী হবে আর অভিভাবকেরা কীভাবে তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন?

আমরা মনে করি, সারা দেশে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের একটি তালিকা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তালিকা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। মধ্যবর্তী সে সময়টাতে শিক্ষার্থীদের বিকল্প কীভাবে পাঠদান করা যায়, সেটাও ভাবতে হবে। বড় কোনো ট্র্যাজিক পরিণতির আগেই শিক্ষা খাতের অভিভাবকদের টনক নড়বে বলে আমরা আশা করি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে বিশাল পুরোনো বাড়ি, মালিক কে

বরগুনার আমতলীর সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম ঘোপখালী। সেই গ্রামে ঢুকলে হঠাৎ চোখে পড়ে বিশাল এক পুরোনো বাড়ি। গাছপালা আর নীরবতার আবরণে ঘেরা, যেন প্রকৃতির সঙ্গে লুকোচুরি খেলে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি।

একসময় এটি ছিল তিনতলা বাড়ি। তৃতীয় তলার বড় অংশ ধসে পড়ায় এখন কেবল দুইতলা দৃশ্যমান। ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা লাল-ধূসর ইটের এই ভবন যেন নিঃশব্দে উচ্চারণ করে চলেছে হারিয়ে যাওয়া কোনো ইতিহাসের ভাষ্য।

ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির আশপাশে সাত-আটটি পৃথক বাড়ি। সেখানে বসবাস করছেন এই বাড়ি নির্মাতার বংশধরেরা। বাড়িটির স্থাপত্যে ব্রিটিশ আমলের প্রভাব সুস্পষ্ট। খিলানযুক্ত বারান্দা, কারুকার্যপূর্ণ থাম ও অলংকৃত জানালাগুলো যেন সময়কে আটকে রেখেছে। বাড়িটির নিচতলার খিলান, মাঝের গম্বুজধর্মী কাঠামো এবং ওপরের জানালায় ব্যবহৃত কলামগুলো থেকে অনুমান করা যায়, এটি ব্রিটিশ আমলের।

বাড়ির ভেতরে ঢুকলে দেখা যায়, কাঠের দরজা-জানালাগুলো ভেঙে গেছে। ছাদ থেকে ঝরে পড়ছে মাটি ও ধুলা। ভবনটির ভেতরে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। একসময় যে কাঠের ছাদ শোভাবর্ধন করত, তা আজ ধসে পড়ার মতো অবস্থায়। জানালার রঙিন কাচ ভেঙে গেছে, খোদাই করা দরজাগুলো চূর্ণ–বিচূর্ণ।

ইট-চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত ভবনটির দেয়ালগুলো ২৪ ফুট চওড়া। ভবনটির প্রতিটি তলায় সুষমভাবে গঠিত খিলান ও জানালা আছে। নিচতলায় আছে ৭টি খিলান (অর্ধবৃত্তাকার), যা একটি দীর্ঘ বারান্দা তৈরি করেছে। এই খিলানগুলো রোমান-গথিক ধাঁচের, যা ব্রিটিশ আমলে প্রচলিত ছিল। প্রতিটি খিলানের ওপর রুফ-কার্নিশে ছোট ছোট অলংকরণ আছে।

ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামোর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভবন যেন নিঃশব্দে উচ্চারণ করে চলেছে হারিয়ে যাওয়া কোনো ইতিহাসের ভাষ্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবুজে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামে বিশাল পুরোনো বাড়ি, মালিক কে