কয়েকটি সমবায় সমিতিতে জমা টাকা ফেরতের দাবিতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে গ্রাহকরা মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে অবস্থান নেন। এ সময় সেখান থেকে সরে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ। বিক্ষোভকারীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সেখানে অবরোধ করেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষ্য, উপজেলার ২৩টি সমিতিতে বিপুল অঙ্কের টাকা জমা রেখেছেন তারা। এর মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনুতেই গ্রাহকের জমার পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার বেশি। তিন-চার বছর ধরে তারা টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন এসব সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি।
মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানত রাখা ‘অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন কয়েকশ গ্রাহক। তারা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন।
সেখানে আসা চরনগরের বিধবা রহিমা বেগমের ভাষ্য, ক্ষেতের ফসল ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করে তিনি আল-আকাবা সমিতিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু সেই টাকার জন্য বছরের পর বছর ঘুরছেন। রহিমা বলেন, ‘ভেবেছিলাম বিপদে (টাকা) কাজে লাগবে। এখন আমার সব শেষ। টাকা না পেলে মরে যাব।’ গ্রাহকের টাকা প্রশাসনকে উদ্ধার করে দেওয়ার আকুতি জানান তিনি।
শতদল সমিতিতে ২০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রহিম। তাঁর গল্পও রহিমার মতো। বালিজুরি পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহিমের ভাষ্য, ‘আমার পেনশনের সব টাকার সঙ্গে আরও টাকা যুক্ত করে ২০ লাখ টাকা জমা করি মেয়ের বিয়ের জন্য। শতদলের সবাই এখন উধাও। আমি এখন কোথায় যাব? এই টাকা ফেরত না পেলে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই।’ বলে কাঁদতে থাকেন তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তারা দফায় দফায় আন্দোলন করলে সম্প্রতি আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক মাহবুবুর রহমান, শতদল সমিতির পরিচালক আব্দুল বাছেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু স্বদেশের পরিচালক আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির পরিচালক ইব্রাহিম খলিল ও আল-আকাবা সমিতির পরিচালক মির্জা মাজেদ দীর্ঘদিন ধরেই আত্মগোপনে।
বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের ভূমিকাকে সন্দেহ করছেন ‘অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’ সভাপতি শিবলুল বারী রাজু। তিনি বলেন, গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে তাদের কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজন আত্মাহুতির ঘোষণাও দেন।
সংবাদ পেয়ে সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন মাদারগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ। তিনি সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি টাকা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের আশ্বাস দেন।
তবে পুলিশের এ কর্মকর্তার আশ্বাসে সন্তুষ্ট হননি গ্রাহকরা। তারা সাফ জানিয়ে দেন, আগে একাধিকবার প্রশাসন এমন আশ্বাস দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অবশ্য তারা আবার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে সরে যান। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউএনও নাদির শাহর মোবাইল ফোনে কল দিলেও ধরেননি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। যারা সমিতিগুলো অডিটে গাফিলতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সমিতিসংশ্লিষ্টরা সবাই পলাতক।
ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, দেড়-দুই মাসের মধ্যে এসব সমিতির তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখনও কারাবন্দি। সমিতিতে জড়িত পলাতক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত গ র হক র র রহম ন র জন য ত র কর উপজ ল সমব য়
এছাড়াও পড়ুন:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ, পরে নিজেই বিপাকে
সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার উদ্দেশে সকালে কক্সবাজারের নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাটে হাজির হয় ১১ পর্যটকের একটি দল। তবে ঘাটে পৌঁছানোর আগেই নির্ধারিত জাহাজ ছেড়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে তাঁরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও ঘাটে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। দলের একজন নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর ঘাটে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন ইউএনওকে গ্রেপ্তার করতে। যদিও বিষয়টি নিয়ে পরে বিপাকে পড়তে হয় ওই পর্যটক দলের সদস্যদের। আজ শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, বাঁকখালী নদীর জোয়ার–ভাটা একেক সময় একেক রকম। জোয়ার–ভাটা বিবেচনায় নিয়ে জাহাজ ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। ইউএনওর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ওই পর্যটক ঘাটে এসে জাহাজ দেখতে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছেন।
হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম ইব্রাহিম। তিনি হয়তো ঘাটে থাকা ইউএনওকে চিনতে পারেননি। সাধারণ নারী মনে করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়েছেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ইউএনওর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে আরেকটি জাহাজে পর্যটকদের ওই দল সেন্ট মার্টিনে যায়।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদরের ইউএনও তানজিলা তাসনিম বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে কেন জাহাজ ছেড়ে গেছে, এ বিষয়টি নিয়ে হট্টগোল শুরু করেন ইব্রাহিম নামের ওই ব্যক্তি। এ সময় নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দাবি করে ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন, আমাকে গ্রেপ্তার করতে। এ ঘটনার ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হলেও এভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে বলার এখতিয়ার রাখেন না।’
ইউএনও বলেন, পর্যটকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ে। কয়েকটি জাহাজে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়। জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন যাতে করা না হয়, সে বিষয়টি তদারকি করে ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি।
১ ডিসেম্বর কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে রাত্রী যাপনের সুযোগও রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটকদের সরকার ঘোষিত ১২টি নির্দেশনা মেনে চলতে হচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপটি ভ্রমণের সুযোগ থাকবে।