সাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন
Published: 25th, June 2025 GMT
নবীজি (সা.) র আনুগত্য প্রদর্শনে সাহাবিগণ অনন্য সব দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। প্রথমত তাঁর আনুগত্য মানে আল্লাহর আদেশ পালন। দ্বিতীয়ত তাদের অন্তরে নবীজির প্রতি যে ভালোবাসা ছিল, সেই ভালোবাসার আহ্বানে তারা সাড়া দিয়েছেন। মানুষ তার সহজে মানে, যাকে সে ভালোবাসে। আমরা মাত্র তিনটি উদাহরণ উপস্থাপন করছি।
১. জুমার দিন মসজিদের মিম্বরে উঠে নবীজি (সা.
২. আবু আবদুর রহমান ফাহরি (রা.) বলেন, নবীজির (সা.) সঙ্গে আমি হোনাইনের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। গ্রীষ্মের দিনে আমরা প্রচণ্ড রোদের মধ্য দিয়ে চলছিলাম। একসময় সকলে গাছের ছায়ায় বসলাম। সূর্য হেলে পড়লে আমার বর্মটি পরলাম এবং ঘোড়ায় চড়ে নবীজির কাছে এলাম। তিনি তার তাঁবুতে ছিলেন। তাকে সালাম দিয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল, ‘আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তিনি ‘বেলাল’ বলে ডাক দিলেন। বেলাল (রা.) সামুরা গাছের নীচ থেকে ছুটে এলেন। তার ছায়া দেখে মনে হচ্ছিল যেন পাখির ছায়া। তিনি বললেন, ‘আমি হাজির।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,২৩৩)
আরও পড়ুনঅতিথিপরায়ণ সাহাবি উম্মু শুরাইক (রা.)০১ এপ্রিল ২০২৫পাখির ছায়া’ বলার কারণ হলো, নবীজির আওয়াজ শোনামাত্র বেলাল (রা.) এত দ্রুত এসেছেন, যেন তার দু’পা মাটিতে ছিল না, ছায়া দেখে মনে হচ্ছিল পাখির ছায়া।
৩. উসাইদ ইবনে জহির (রা.) বলেন, রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) আমাদের কাছে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) তোমাদের একটি বিষয় নিষেধ করেছেন, যা তোমাদের জন্য উপকারী। তবে মনে রেখো, আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করা আরও বেশি উপকারী। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩,৮৯৭)
অর্থাৎ, আল্লাহর রাসুল যা বলেছেন, তাতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে উপকারী বিষয় গ্রহণে নিষেধ করেছেন বোঝা গেলেও তাতে দ্বিধায় পড়েননি সাহাবিরা। বরং বুঝে নিয়েছেন যে, নিশ্চয় রাসুলের কথা মেনে নিলে আল্লাহ এর চেয়ে বেশি উপকার দেবেন।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে বিবাদ মেটাতেন২০ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খরায় বাড়বে গাছের মৃত্যু, আরও উষ্ণ হবে পৃথিবী: গবেষণা
খরার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে গাছের মৃত্যু বাড়বে। এতে আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও জনজীবনে। এ ছাড়া পৃথিবীর উষ্ণ হওয়া ঠেকাতে বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, খরায় গাছের মৃত্যু সেই সংকট মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলবে।
গাছের ওপর খরার প্রভাব নিয়ে করা বৈশ্বিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স–এ ‘উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য’ শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
বেশ কয়েকটি দেশের গবেষক মিলে গবেষণাটি করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।
উল্লেখ্য, বয়স্ক গাছকে আড়াআড়িভাবে করাত দিয়ে কাটলে ভেতরে গাঢ় রঙের যে বৃত্তাকার বলয় দেখা যায়, তা গুনে গাছের বয়স সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেই বৃত্তাকার বলয়কে বলা হয় গাছের বর্ষবলয় বা ট্রি রিংস।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক বছরগুলো বাছাই করেছিলেন তাঁরা। খরার এসব বছরে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা দেখেছেন। এ ছাড়া খরার পরে দুই বছরে গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও দেখা হয়।
গবেষকেরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১০০ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫০০টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তাঁরা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
গবেষক মিজানুর রহমান গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
তবে খরার পরও বেশির ভাগ স্থানে গাছের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েছে সামান্য। কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য খরার পরও প্রকৃতিতে তার প্রভাব পড়ে খুব কম। কিন্তু পরিস্থিতি আর তেমনটা থাকবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি খরাও বাড়ছে। এতে গাছের কার্বণ শোষণের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, তা ধীর ধীরে কমছে।
বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল।গবেষণায় দেখা গেছে, খরার প্রভাবে বছরে অতিরিক্ত প্রায় দশমিক ১ শতাংশ গাছ মারা যেতে পারে। এতে দুটি বিষয় হবে। প্রথমত; গাছ কমে যাওয়ায় সেসব গাছ যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করত, সেই পরিমাণ কার্বন প্রকৃতিতেই থেকে যাবে। আবার গাছ মরার পর পচে যাওয়া এসব গাছ থেকে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে।
গবেষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাছের কাণ্ড বৃদ্ধিতে ও একই সঙ্গে গাছের কার্বন শোষণে খরার প্রভাব সীমিত পর্যায়ে আছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান যে প্রবণতা, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থিতিশীলতা থাকবে না।