ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলা সত্ত্বেও পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ‘প্রয়োজনীয় উদ্যোগ’ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান সরকার। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে এবং এই কর্মসূচি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পারমাণবিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামী। ইরানের আধাসরকারি সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

মোহাম্মদ ইসলামী বলেন, উৎপাদন ও সেবাদান প্রক্রিয়ায় যেন কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে, সেই পরিকল্পনাই নেওয়া হয়েছে। এই বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান ইসরায়েলে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েল বলেছে, তাদের সাম্প্রতিক বিস্তৃত হামলা ছিল ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে। তারা বলছে, ইরান যদি এসব অবকাঠামো ঠিক রাখে, তাহলে তা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।

গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফর্ডো, ইস্পাহান ও নাতাজের পরমাণু পরিশোধন স্থাপনায় হামলা চালায়। ট্রাম্প ওই হামলাকে ‘অসামান্য সামরিক সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেন। তবে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধে ইরান এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ১ হাজার ড্রোন ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলও ইরানের সামরিক-বেসামরিক বিপুল পরিমাণ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির এক উপদেষ্টা জানান, দেশটির কাছে এখনও পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের মজুত আছে। এখনও ‘খেলা শেষ হয়নি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইরান বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে তারা এমন মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যার কোনো শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নেই। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশে বাধা দিয়েছে এবং নিজেদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও সম্প্রসারণ করেছে। ইসরায়েল বলছে, ইরান ইতোমধ্যে অস্ত্রায়নের দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে।

গতকাল ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্টকে দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ বলেন, ইরানের পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে হবে।

ইরান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মাদ মারান্দি ইজাদি আলজাজিরাকে বলেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা করেও কোনো লাভ হয়নি— এমন অভিযোগ তুলে এনপিটি থেকে সরে আসতে পারে ইরান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিটির ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে পারে তারা। ইরান এই চুক্তির সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। অথচ এই সহযোগিতা কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। বরং ইরানের সেসব পারমাণবিক স্থাপনা ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ২১ জুলাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ পালনের দাবি

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়েছে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার। এ ছাড়া তারা বলেছে, নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদাসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।

হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের কবর সংরক্ষণ করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উত্তরায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর যখন বাচ্চাদের পেয়েছেন, তখন তাঁরা তাদের চিনতে পারেননি। অনেক দিন হলো তাঁরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সঙ্গে দেখা করেন না।

নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু পাইলট আর শিক্ষক শহীদ হতে পারেন না। সবাই শহীদ। সবাই ইউনিফর্ম পরা ছিল। শিক্ষার্থীরা কেন বৈষম্যের শিকার হবে?

নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না তা তাঁরা জানেন না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যাঁরা আর কখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না, অথচ তাঁদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ দুই শিশু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলে, তারা অবর্ণনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। অনেকের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

রেজাউল করিমের ছেলে সামিউল এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই বাবা বলেন, তাঁরা ভালো নেই। দুই মাস ধরে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। এ দেশে এত মানুষ, তবু পাশে কি কাউকে তাঁরা পাবেন না? এই মুহূর্তে তাঁদের স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন এখানে। সরকার তাঁদের পাশে আসেনি। চোখের সামনে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি, যা ভুলতে পারেন না।

সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে একটা কপি পেয়েছেন। এরপর আর কারও কোনো যোগাযোগ নেই।

আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে১১ আগস্ট ২০২৫

সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এই বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’

সানজিদা বেলায়েত আরও বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামের এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে। তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তাঁরা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?

আরও পড়ুনবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যা যা জানা গেল২১ জুলাই ২০২৫

আহত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সানজিদা বেলায়েত। তিনি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান।

আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন বলেন, তাঁদের কান্না শুকিয়ে গেছে। সরকারের কাউকে তাঁরা পাশে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।

গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। আহত হয় অনেকে।

আরও পড়ুনউত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ