দেশজুড়ে মানুষ যখন উৎকণ্ঠায়, তখন ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একজন উপস্থাপক সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিলেন। এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে মাঠে-ময়দানে অনেকের মধ্যে।

‘মানুষ সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে খুব চিন্তিত’, গত মঙ্গলবার উপস্থাপক আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে এ বলেন। তিনি জানতে চান, ‘তাঁর কী অবস্থা, বলতে পারেন?’

উপস্থাপক ওই কর্মকর্তাকে জানান, দর্শকদের কাছ থেকে এই একই প্রশ্নে ভরে গেছে বার্তাকক্ষ। তবে খামেনির আর্কাইভ দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।

উল্টো ফাজায়েলি বলেন, ‘আমরাও অনেক জায়গা থেকে এমন উদ্বেগের খবর পাচ্ছি। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ বোমা হামলার পর আয়াতুল্লাহর নিরাপত্তা নিয়ে বহুজন উদ্বিগ্ন।’

‘আমাদের সবাইকে তাঁর জন্য দোয়া করতে হবে,’ বলেন ফাজায়েলি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ নেতাকে রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা তাঁদের কাজ ভালোভাবেই করছেন। আল্লাহ চাইলে, আমাদের জনগণ তাঁদের নেতাকে সঙ্গে নিয়েই বিজয় উদ্‌যাপন করতে পারবেন।’

প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই জনসমক্ষে অনুপস্থিত খামেনি। কোনো ভাষণ বা বার্তাও দেননি। অথচ দেশ তখন গভীর সংকটে।

খামেনির এই নীরবতা জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্ন ও জল্পনার—সাম্প্রতিক বড় সিদ্ধান্তগুলোতে তাঁর ভূমিকা কতটুকু? তাঁর কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে কি? তিনি এখনো দেশ পরিচালনায় সক্রিয়? তিনি অসুস্থ, আহত কিংবা আদৌ বেঁচে আছেন কি?

এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, জবাবে (সোমবার) ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে (মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েল এক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়, যা কার্যকর হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে।

এই পুরো সময়ে খামেনি ছিলেন অনুপস্থিত। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি এক সুরক্ষিত বাংকারে আছেন এবং হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন।

সর্বোচ্চ নেতার এমন অনুপস্থিতি শুধু জনসাধারণ নয়, রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।

‘খানমান’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন, ‘খামেনির কয়েক দিনের এ অনুপস্থিতি আমাদের, যাঁরা তাঁকে ভালোবাসি, গভীর উদ্বেগে ফেলেছে।’ দুই সপ্তাহ আগেও যে আশঙ্কা অকল্পনীয় ছিল, তা এখন স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যদি তিনি (খামেনি) মারা যান, তাঁর জানাজার মিছিল হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও গৌরবময়।’

সর্বোচ্চ নেতাকে রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা তাঁদের কাজ ভালোভাবেই করছেন। আল্লাহ চাইলে, আমাদের জনগণ তাঁদের নেতাকে সঙ্গে নিয়েই বিজয় উদ্‌যাপন করতে পারবেন।মেহদি ফাজায়েলি, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দপ্তরের কর্মকর্তা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে প্রতিটি বড় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন খামেনি। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা বা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মতো সিদ্ধান্তে তাঁর অনুমোদন অত্যাবশ্যক।

যাহোক, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানে এবং কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায় দ্রুত সম্পাদিত হয়। তবে ইরানের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তারা গত কয়েক দিনে তাঁরা খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কি না বা কোনোভাবে যোগাযোগ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলেননি।

এ নীরবতা জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্ন ও জল্পনার—সাম্প্রতিক বড় সিদ্ধান্তগুলোতে খামেনির ভূমিকা কতটুকু? তাঁর কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে কি? তিনি এখনো দেশ পরিচালনায় সক্রিয়? তিনি অসুস্থ, আহত কিংবা আদৌ বেঁচে আছেন কি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজা সাফাভি আয়াতুল্লাহ খামেনির শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা ও রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের জেনারেল ইয়াহিয়া সাফাভির ছেলে। হামজা জানান, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বাস করে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েল খামেনিকে হত্যাচেষ্টা চালাতে পারে। তাই তাঁর নিরাপত্তায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রায় বন্ধ রয়েছে।

চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, খামেনির অনুপস্থিতি উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা এবং এটি এই ইঙ্গিত দেয়, ইরানি নেতৃত্ব এখন অতিমাত্রায় সতর্ক ও নিরাপত্তাকেন্দ্রিক ভাবনায় চলছে। আশুরার আগে যদি খামেনিকে দেখা না যায়, তাহলে তা হবে খারাপ সংকেত। তাঁকে অবশ্যই জনসমক্ষে আসতে হবে।

সাফাভি বলেন, ‘দেশকে এ সংকট থেকে উত্তরণে এখন বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের মতো নেতাদের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।’

তবে সাফাভির ধারণা, খামেনি এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দূর থেকে অনুমোদন দিচ্ছেন।

তবু খামেনির অনেক সমর্থক এখনো সামাজিকমাধ্যমে বলছেন, তাঁরা সর্বোচ্চ নেতাকে না দেখা বা তাঁর কথা না শোনা পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের আনন্দ অনুভব করতে পারছেন না।

খামেনির অনুপস্থিতিতে সক্রিয় নানা পক্ষ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় প্রচারিত ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ভাষণ। তেহরানের একটি টিভি পর্দায়, ১৮ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আয় ত ল ল হ কর মকর ত ইসর য় ল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের নিন্দা জানাচ্ছেন রাষ্ট্রদূতরা

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনার নিন্দা জানানো শুরু করেছেন পরিষদে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। রবিবার অধিবেশন শুরুর পরপরই তারা নিন্দা জানানো শুরু করেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ‘বেপরোয়াভাবে শত্রুতা তীব্রতর করার পরিবর্তে সক্রিয় কূটনীতির বদৌলতে’ হামাস ১৪০ জনেরও বেশি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।

পলিয়ানস্কি বলেছেন, “ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সহিংসতা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপত্তা এবং জীবন বিপন্ন হয়েছে।”

তিনি ইসরায়েলকে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার জন্য অভিযুক্ত করে বলেছেন, “এই অমানবিক হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার আগে আরো কত ফিলিস্তিনিকে মারতে হবে?”

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং জানিয়েছেন, গাজার পরিস্থিতি ‘আরো বিপজ্জনক দিকে বিকশিত হচ্ছে।’

তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ‘গাজা দখলের যেকোনো প্রচেষ্টার দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করতে হবে’ এবং গাজা শহরে সামরিক আক্রমণ পুনর্নবীকরণের ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাতে হবে।

ফু বলেছেন, “এই সমস্যার সমাধানের উপায় সামরিক নয়।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ