চিত্রনায়ক জায়েদ খান এবার ধরা দিচ্ছেন এক নতুন ভূমিকায়—উপস্থাপক হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা গণমাধ্যম ‘ঠিকানা’-র উদ্যোগে শুরু হতে যাচ্ছে টক শো ‘ফ্রাইডে নাইট উইথ জায়েদ খান’, যার উপস্থাপনায় থাকছেন এই ঢালিউড তারকা নিজেই।

অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হবে ঠিকানা টিভির ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে। প্রথম পর্ব প্রচারিত হবে আগামী ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার রাতে।

নিউইয়র্কে অবস্থানরত জায়েদ খান সম্প্রতি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে শোতে অংশ নিচ্ছেন। এবার সেই প্রবাসী অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গ্লোবাল বাংলাদেশিদের কথা বলবেন তিনি এই নতুন টক শোতে।

আরো পড়ুন:

সংসার ভাঙলো কনার, ন্যান্সি ‘শিয়াল রাণী’ বললেন কাকে?

মৌসুমীকে বিয়ে করা কি ভুল ছিল ওমর সানীর

‘ফ্রাইডে নাইট উইথ জায়েদ খান’-এ থাকবে—দেশ ও প্রবাসের তারকাদের একান্ত সাক্ষাৎকার, প্রবাসজীবনের চড়াই-উৎরাই আর সাফল্যের গল্প, সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন, নতুন প্রজন্মের চিন্তা, উদ্ভাবন ও সংগ্রামের গল্প, এবং অবশ্যই হালকা আড্ডা, যা মন ছুঁয়ে যাবে।

ঠিকানা গ্রুপের সিইও মুশরাত শাহীন বলেন, "এই শো আমাদের সংস্কৃতি, অভিজ্ঞতা ও আত্মপরিচয়কে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার সাহসী এক পদক্ষেপ। জায়েদ খানকে এই যাত্রায় পেয়ে আমরা গর্বিত।”

উপস্থাপক জায়েদ খান বললেন, "এটা আমার জন্য এক নতুন যাত্রা। আমি এমন একটি অনুষ্ঠান উপহার দিতে চাই, যেখানে উঠে আসবে আমাদের না-বলা গল্পগুলো—বাস্তব, অনুপ্রেরণাদায়ক এবং চেতনাকে নাড়া দেওয়ার মতো।”

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মনের কথা, জীবনের জটিলতা ও বিজয়ের গল্পগুলো তুলে ধরতে চান। 

উল্লেখ্য, জায়েদ খান অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘সোনার চর’। চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাহিদ হোসেন। এতে আরও অভিনয় করেন মৌসুমী, ওমর সানী, শহীদুজ্জামান সেলিম, শবনম পারভীন ও পাপিয়া মাহি।

নতুন ধারার এই আড্ডামূলক অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হতে চোখ রাখুন ঠিকানা টিভির পর্দায়। সাবস্ক্রাইব করুন ইউটিউব ও ফেসবুক পেজ—হয়ে উঠুন এই নতুন যাত্রার অংশীদার!

ঢাকা/রাহাত/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

জোহরান মামদানি যেভাবে ইতিহাস বদলে দেওয়ার পথে

২৪ জুন রাত। নিউইয়র্কের জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারের সামনে মানুষের জটলা। তরুণ, যুবক ও বয়স্ক মানুষও আছেন। সবাই উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। কয়েক দিন ধরে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন তাঁরা। সেই চিন্তার অবসান হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের প্রাথমিক পর্বে তাঁদের প্রার্থী জোহরান মামদানি জয়ী হয়েছেন। তাঁদের এত দিনের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।

কিছু দিনের জন্য সন্তানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। আছি নিউইয়র্কেই। ফলে নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনের এই উত্তাপ ও উত্তেজনা দেখার সুযোগ হলো। এবারের সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে শুরু থেকেই আলোচনা তৈরি করেছিলেন জোহরান। ধীরে ধীরে বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম হয়ে যান তিনি। এখন তো নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়ার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে তিনি। মুসলিম কাউকে এ প্রথম মেয়র হিসেবে পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ শহর।  

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে কথা বললাম। তাদের বিশাল একটি অংশ জোহরান মামদানিকেই সমর্থন দিয়েছেন। জোহরানের প্রায় নিশ্চিত বিজয় নিয়ে তাদের ভাবনা কী?

জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ও জেনারেল সেক্রেটারি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা আফতাব উদ্দিন মোহাম্মদ মান্নান বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। আমরা সবাই এই বিজয়ের অংশীদার। এর মাধ্যমে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হলো। জোহরান মামদানি একজন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট এবং বর্তমানে একজন সিটি কাউন্সিলর। আমরা তাঁর পক্ষ নিয়েছি। কারণ, তিনি সব সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁদের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তিনি ন্যায়ের পক্ষে। নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ৪০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজ করেছেন। মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাঁর অঙ্গীকারগুলোও আমাদের আকৃষ্ট করেছে।

তিনি পরিচ্ছন্ন সাবওয়ের কথা বলেছেন। সবার জন্য সাশ্রয়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করার কথাও বলেছেন এবং নিউইয়র্কের শ্রমজীবী মানুষের জন্য বেতন বাড়ানোর বিষয়টিকে তিনি খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিরাপদ ও মাদকমুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন বলেও অঙ্গীকার করেছেন। এসব চিন্তা এখানকার মুসলমানদের আকৃষ্ট করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি একজন ভালো মুসলিম, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা উচ্চশিক্ষিত আইনজীবী ও তাঁর বাবা হার্ভার্ডের শিক্ষক।’

আফতাবের কথায় নিউইয়র্কের মুসলমান সম্প্রদায়ের কথার প্রতিফলন ঘটেছে। জোহরান মামদানি নামটি কয়দিন আগেও আমার কাছে অপরিচিত ছিল। বাংলাদেশে তাঁর নাম আগে শুনিনি। কিন্তু আফতাবের কথায় বুঝলাম, জোহরান এখানে খুব জনপ্রিয় এবং এখানকার রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। প্রাথমিক পর্বে তাঁর জয় এখানকার রাজনীতির ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত চিহ্নিত হচ্ছে। এটি যেন এখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি নীরব বিপ্লব।

জোহরান মামদানির বিজয়কে কেন এত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন মুসলমানরা? কেন একে মাইলফলক ভাবছেন? তার বেশ কয়েকটি কারণ আছে। প্রধান কারণ হলো, তিনি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি একজন মুসলমান ও প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ। এমন পরিচয়ের একজন মানুষ নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হতে চলেছেন, মানে একটি বিশ্বখ্যাত মহানগরের শীর্ষ পদে আসীন হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ রকম আগে কখনো ঘটেনি। এবারই প্রথম। আর এ ঘটনা শুধু নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতি নয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। মার্কিন রাজনীতি ও সামাজিকভাবে মুসলমানদের একটা স্বস্তি ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে অনেকের ধারণা।

নাইন–ইলেভেনের পর থেকে মার্কিন সমাজে মুসলমানেরা ‘সন্দেহভাজন’ হয়ে দিন যাপন করছে। মুসলমানেরা হয়ে উঠেছে আতঙ্কের মতো। মুসলিম পরিচয়টাই যেন হয়ে উঠেছিল একটি উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার বিষয়। সেই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সন্দেহের দেয়াল ভেঙে সামনে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সমাজ। তাদের এগিয়ে যাওয়া প্রথম প্রত্যক্ষ করা গেছে দুজন নারীর মাধ্যমে। তাঁরা হলেন মিনেসোটার ইলহান ওমর ও মিশিগানের রাশিদা তালিব। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে প্রথম মুসলিম নারী সদস্য রাশিদা তালেব ও ইলহান ওমর। তাঁরা দুজনই ২০১৯ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাশিদা তালেব মিশিগান থেকে এবং ইলহান ওমর মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত হন।

দুজনই মার্কিন কংগ্রেসে মুসলিম নারীদের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন। তাঁদের নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা।

মামদানির বিজয়ও এ রকম একটি বড় ঘটনা হতে চলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, মামদানির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা রাজনৈতিক ভাবনাগুলো শুধু তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘিরে বিকশিত হয়নি। তিনি উদারনৈতিক মানুষ। তাঁর পরিচয় বা কর্ম শুধু নিজের ধর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। মুসলমানদের জন্য আলাদা কোনো কর্মসূচি বা এজেন্ডা তাঁর নেই। তিনি নিউইয়র্ক সিটির সব মানুষের সাধারণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন, যেমন বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা, পুলিশের সংস্কার করা, জলবায়ু ন্যায়বিচার ইত্যাদি। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় এগুলোই প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। এ জন্য তিনি শুধু মুসলমানদের প্রতিনিধি নন, সব নাগরিকের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। আর এ রকম মনোভাবই তাঁকে এগিয়ে নিয়েছে বলে এখানকার ভোটারদের বিশ্বাস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি প্রবাসী বলেন, শুধু নিজের সম্প্রদায়গত চিন্তা আর কর্মকাণ্ড দিয়ে মানুষ নেতা হতে পারেন না। মামদানি সেটা করেননি বলেই, নিজের গণ্ডির বাইরে চিন্তা করেছেন বলেই তিনি এগিয়ে গেছেন। তিনি আরও বলেন, একটা সময় ছিল এখানে মুসলমানরা ভোটার হিসেবে উপেক্ষিত ছিল। সেই মুসলমানরা এখন রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসছে। এটা কম কথা নয়।

মামদানির বিজয় এখানকার মুসলমানদের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, আটলান্টা, ডেট্রয়েট, হিউস্টনের মতো বিশাল সিটিগুলোয় মুসলিম তরুণেরা উৎসাহিত হচ্ছেন। তাঁরা স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে রাজ্য পর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। ফলে সামাজিক হীনম্মন্যতা মুছে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

আগামী ৪ নভেম্বর চূড়ান্ত অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে জোহরান মামদানি লড়বেন ও জিতে আসবেন—এ ব্যাপারে বিশ্লেষকেরা প্রায় নিশ্চিত। তাঁর এ বিজয় শুধু একজনের বিজয় নয়, এতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক বিজয় নয়, মুসলমানদের প্রতি এখানকার সমাজের আস্থার পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তরও রচিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে।

ওমর কায়সার প্রথম আলোর চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ কেন ধন্যবাদ দিলেন জোহরান মামদানি
  • জোহরান মামদানির নিউইয়র্ক জয় যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতিকে চাঙা করছে
  • জোহরান মামদানি যেভাবে ইতিহাস বদলে দেওয়ার পথে
  • নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়া জোহরান কেন ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ ধন্যবাদ দিলেন
  • জোহরানকে ‘পাগল কমিউনিস্ট ও ভয়ংকর’ বলে বিদ্রুপ করলেন ট্রাম্প
  • নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি
  • সাবেক গভর্নর কুমোর হার, নিউইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র মুসলিম তরুণ মামদানি
  • নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে কে এগিয়ে
  • তপন চৌধুরী, নাসিম মঞ্জুর ও জারিন মাহমুদ এমটিবির পরিচালক