টেবিলের আলোচনায় মাঠে চাপ, লক্ষ্য বিএনপি
Published: 29th, June 2025 GMT
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গতকাল শনিবারের সমাবেশ থেকে জানানো মূল দাবিগুলো সংস্কারবিষয়ক। সঙ্গে ছিল স্থানীয় নির্বাচন আগে দেওয়ার দাবিও। মূলত সংস্কার প্রস্তাবের যে বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনের বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো আলোচনার টেবিল থেকে মাঠে নিয়ে এলো দলটি।
এই আওয়াজে তাদের সঙ্গে গলা মেলাতে হাজির ছিল জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ ১১টি দল। এ দলগুলো সংসদের দুই কক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চায়। বিএনপি এর বিপক্ষে। ফলে গতকালের সমাবেশে তারা দাওয়াত পায়নি।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিয়েছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনও। তাদের উপস্থিতি মূলত সম্প্রীতির নিদর্শন। সমাবেশ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। জামায়াত আগে থেকে এ দাবি করে আসছে।
বিএনপির দিক থেকে দ্রুতই প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যারা পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচন চান, তাদের উদ্দেশ্য আছে। নির্বাচন বিলম্ব অথবা বানচাল করতে চায় তারা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথাগুলো বলেন তিনি।
বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের জন্য এখন উপযুক্ত সময় নয়। তাঁর আশা, সরকার দ্রুত সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ জানাবে।
সাংবিধানিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তিন দিনের বিরতির পর আজ রোববার আবার শুরু হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ। গতকাল সমাবেশে উপস্থিত দলগুলো সংলাপে ঐকমত্য না হলে গণভোট চায় বলে জানিয়েছে। ১৯ জুলাই সমাবেশ করবে জামায়াত।
জামায়াতের সমাবেশেও আমন্ত্রণ করা হবে সংস্কারে বিএনপির বিপরীতে অবস্থান নেওয়া দলগুলোকে। এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপির বাইরে বৃহত্তর সমঝোতা গড়ার চেষ্টা চলছে। গতকালের সমাবেশের জনসমাগমকে সেই প্রক্রিয়ার প্রতি জনসমর্থন প্রকাশের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। জামায়াতের সমাবেশেও নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতির চেষ্টা থাকবে। সংস্কারের আলোচনায় বড় দল বিএনপির বিপরীতে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অপেক্ষাকৃত ছোট এই দলগুলো নিজেদের জনসমর্থনকে নজরে আনতে চায়। তবে একে চাপ হিসেবে বিবেচনা করবে কিনা, বিএনপির আগামীর পদক্ষেপে তা বোঝা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ, সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন পদ্ধতি, সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে সরকারপ্রধানের ক্ষমতা কমানো ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে এই দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য রয়েছে। উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ এবং ক্ষমতা খর্বের পক্ষে থাকা জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ সংলাপে অংশ নেওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের একই অভিমত।
বিএনপি শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ ১০ বছর সীমাবদ্ধে রাজি হয়েছে। গত বুধবার সংলাপের পঞ্চম দিনে দলটি জানিয়েছে, যদি সাংবিধানিক নিয়োগে নির্বাহী বিভাগ তথা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব না হয়, তবে মেয়াদ নির্ধারণে রাজি বিএনপি।
জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ ২৩টি দলের অবস্থান হলো– স্বৈরাচার হওয়ার পথ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা কমাতে হবে এবং মেয়াদও নির্দিষ্ট করতে হবে। বিএনপির যুক্তি, সরকারপ্রধানের ক্ষমতা এভাবে কমালে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হবে না। তবে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণঅধিকার, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এবং মেয়াদ সীমাবদ্ধ করার পক্ষে।
বিএনপির আপত্তিতে গত বুধবার ঐকমত্য কমিশন এনসিসির পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করে। প্রধানমন্ত্রী, সংসদের উভয় কক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিরোধী দল বাদে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা অন্য দল থেকে একজন এমপি, রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কমিটি ইসি, দুদক, মানবাধিকার কমিশন এবং প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনে নিয়োগ দেবে।
বিএনপি কমিটি গঠনেও রাজি নয়। ১২ দলীয় জোট, ১১ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ববি হাজ্জাজের এনডিএম, মোস্তাফিজুর রহমানের লেবার পার্টিরও একই অবস্থান। তাদের অবস্থান, এতেও সরকারের ক্ষমতা কমে যাবে।
সংলাপে জামায়াতকে প্রতিনিধিত্ব করা দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড.
জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন সংসদের নিম্নকক্ষেও ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন তথা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তবে দুটি দলের সূত্রই বলেছে, বিএনপি উচ্চকক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন মেনে নিলে তারা নিম্নকক্ষে বিদ্যমান পদ্ধতির নির্বাচন মেনে নেবে। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সমকালকে বলেছেন, উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন হতেই হবে। এ বিষয়ে ছাড় দিয়ে সংস্কার হবে না।
বিএনপি বলছে, আনুপাতিক উচ্চকক্ষ হলে নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তথা সরকারি দল আইন প্রণয়নে বাধাগ্রস্ত হবে।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ঐকমত্য কমিশনকে হুঁশিয়ার করে নুরুল হক নুর গতকাল সমাবেশে বলেছেন, ‘দুয়েকটি দলের কথায় জনগণের বিপক্ষে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাবেন না।’ রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সমাবেশ কিন্তু সবে শুরু করেছে। জামায়াত, গণঅধিকারও করবে।’
ছয় দিনের সংলাপে শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিলে শর্তসাপেক্ষে ঐকমত্য হয়েছে। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ঐকমত্য না হলে আবার রাজপথে যাবে রাজনীতি, আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে। এর ফল সবাইকে ভোগ করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ গণঅধ ক র র প রস ত প রস ত ব র ক ষমত অবস থ ন ব এনপ র ঐকমত য বল ছ ন দলগ ল ইসল ম সরক র গতক ল এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম এই কমিটি আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্রত্যাখ্যানের কথা জানায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে মনোনয়নের মাধ্যমে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বাড়ানো ও সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনব্যবস্থা চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে নারী সংগঠনগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করলেও এ বিষয়ে একমত হয়নি দলগুলো। এ অবস্থায় নারী আসন নিয়ে আগের ব্যবস্থাই বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে আজ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে সমান অধিকার, সমমর্যাদা ও দায়িত্বের সঙ্গে ভূমিকা পালন করতে বাংলাদেশের নারীরা এখন প্রস্তুত রয়েছেন। সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে এলে গণতান্ত্রিক চর্চা আরও শক্তিশালী হবে, যা নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে আরও বিস্তৃত ও অর্থবহ করে তুলবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নারী সমাজের দীর্ঘদিনের এই আন্দোলন ও দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্তে কীভাবে একমত হলো, সে বিষয়েও সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গভীর বিস্ময় প্রকাশ করছে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে নারী–পুরুষ উভয়ই নির্বাচন করতে পারবেন। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনও থাকবে। জাতীয় সংসদে মোট আসনসংখ্যা ৪৫০ করতে হবে, যেখানে ৩০০ সাধারণ আসন ও ১৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের প্রথা বাতিল করে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ ব্যবস্থাটি দুই থেকে তিন মেয়াদের জন্য বলবৎ থাকবে।
বিবৃতিতে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানানো হয়।