‘প্রিয় প্রতিপক্ষ’—ক্রিকেটে শব্দযুগল বেশ প্রচলিত। ব্যাটসম্যানদের কথাই ধরুন, তাঁরা ব্যাটিংয়ে নামেন রান করার জন্য। কখনো সফল হন, কখনো হন না।

আবার কখনো কখনো এমন প্রতিপক্ষ পেয়ে যান, যাঁদের বিপক্ষে নামলেই চওড়া হয়ে ওঠে ব্যাট, রানের দেখা মেলে। এভাবে একদিন রেকর্ডও হয়। একজন ব্যাটসম্যান নির্দিষ্ট একটি দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান করে ইতিহাসে জায়গা করে নেন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান কার, তা সবার জানা—শচীন টেন্ডুলকার। ভারতের এই ব্যাটিং জিনিয়াস তিন সংস্করণ মিলিয়ে করেছেন ৩৪৩৫৭ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কুমার সাঙ্গাকারার রান ২৮০১৬। বর্তমানে খেলছেন, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান বিরাট কোহলির—২৭৫৯৯।

বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান বিরাট কোহলির.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

ডাকটিকিটে মাইকেল মধুসূদন দত্ত

‘নাহি পাই নাম তব বেদে কি পুরাণে,

কিন্তু বঙ্গ–অলঙ্কার তুমি যে তা জানি

পূর্ব্ব–বঙ্গে। শোভ তুমি এ সুন্দর স্থানে

ফুলবৃন্তে ফুল যথা, রাজাসনে রাণী।…’

মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুর কিছুদিন আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকায় এসেছিলেন। স্থানীয় পোগোজ স্কুলে ঢাকাবাসী তাঁকে সংবর্ধনা দেন। কবি তখন ঢাকাবাসীকে এ কবিতাটি পড়ে শোনান। (ক্ষেত্রগুপ্ত সম্পাদিত, মধুসূদন রচনাবলী, কলকাতা, ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ১৯৪)।

বাংলা সাহিত্যে যে কয়েকজন কবি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁদের একজন। বাংলা কবিতায় তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন। ১৮৬১ সালে প্রকাশিত মেঘনাদবধ কাব্য তাঁর একটি কালোত্তীর্ণ রচনা।

মধুসূদন যশোর জেলার সাগরদাঁড়িতে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। কবির জন্মদিন ঘিরে প্রতিবছর সাগরদাঁড়িতে বসে  ‘মধুমেলা’। এ ছাড়া আরও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁকে আজও এ দেশের অগণিত মানুষ স্মরণ করেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ ও ভারত এই কালজয়ী কবিকে নিয়ে ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছে। ডাকটিকিটের পাশাপাশি উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহরে দেখা যায় কবির উপস্থিতি।

বাংলাদেশ থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে বের হওয়া ডাকটিকিটের প্রকাশকাল ২৯ জুন ১৯৯৬। কবির ১২৩তম প্রয়াণবর্ষে প্রকাশিত বহুরঙা (নীল ও কালো রঙের আধিক্য) ডাকটিকিটটি জলছাপবিহীন। মূল্যমান চার টাকা ও ছিদ্রক দূরত্ব ১২ দশমিক ৫ মিলিমিটার। এ ডাকটিকিটে কবির প্রতিকৃতির সঙ্গে উঠে এসেছে বাংলা ও ইংরেজি হরফে তাঁর নাম ও জন্ম ও মৃত্যুকাল। ডাকটিকিটের নকশা করেছেন মোজাম্মেল হক। ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিশ্ব ডাকটিকিটের ক্যাটালগ ‘স্ট্যানলি গিবনস’ মধুসূদনের এ ডাকটিকিটকে বাংলাদেশের ৬০২ নম্বর ডাকটিকিট হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে অফসেট লিথোগ্রাফি প্রক্রিয়ায় মুদ্রিত ডাকটিকিটটির কিছু ত্রুটিপূর্ণ মুদ্রণও চোখে পড়ে (নীলের পরিবর্তে হলুদ ও ছিদ্রকবিহীন), যা সংগ্রাহকদের তুমুল আগ্রহের বিষয়। ফিলাটেলির ভাষায় এগুলোকে ‘এরর’ বলে।  মধুসূদনকে নিয়ে প্রকাশিত চার টাকা মূল্যমানের এরর ডাকটিকিটগুলো বর্তমান বাজারে পাঁচ–ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ডাকটিকিটের পাশাপাশি উদ্বোধনী খামেও রয়েছে কবির প্রতিকৃতি এবং বিশেষ সিলমোহরে আবারও তুলে ধরা হয়েছে তাঁর নাম ও জন্ম–মৃত্যুকাল।

মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে ভারত সরকার ডাকটিকিট প্রকাশ করে ১৯৭৩ সালে। কবির মৃত্যুর শততম বর্ষে প্রকাশিত সেই ডাকটিকিটে কবির প্রতিকৃতির পাশাপাশি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় কবির পরিচয় তুলে ধরা হয়। স্ট্যানলি গিবনস ক্যাটালগ অনুসারে এটি ভারতের ৬৮৮ নম্বর ডাকটিকিট। ২০ পয়সা সমমূল্যের ডাকটিকিটটি মুদ্রিত হয় নাসিক সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে। বহুরঙা (সবুজ ও কমলা) ওই ডাকটিকিটে কোনো জলছাপ নেই এবং ডাকটিকিটটির ছিদ্রক দূরত্ব ১৩ মিলিমিটার। মধুসূদনকে নিয়ে ভারতীয় ডাকটিকিটটি মূলত ১৯৭৩ সালের ২১ জুলাই ‘জন্মশতবর্ষ’ শিরোনামে চারজন বরেণ্য ব্যক্তিকে নিয়ে প্রকাশিত সেটের প্রথম ডাকটিকিট। সেই সেটে মধুসূদনের পাশাপাশি অন্য তিনটি ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছেন যথাক্রমে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ বিষ্ণু দিগম্বর পুলষ্কর (১৮৭২–১৯৩১), নরওয়েজিয়ান চিকিৎসক গেরহার্ড হেনরিক আরমাউয়ের হ্যানসেন (১৮৪১-১৯১২), পোলিশ জ্যোতির্বিদ নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৭৭৩–১৮৪৩)। এর মধ্যে হ্যানসেনের কুষ্ঠরোগের জীবাণু আবিষ্কারের শতবর্ষ (১৯৭৩) উপলক্ষে ডাকটিকিটে তাঁকে তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে বের হওয়া ডাকটিকিটের প্রকাশকাল ২৯ জুন ১৯৯৬।

ভারত থেকে প্রকাশিত মধুসূদনের ডাকটিকিটের জন্য আলাদা কোনো উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে খামের ওপর অন্যান্য ব্যক্তির নামের সঙ্গে কবির নামটিও মুদ্রিত হয়েছে। বিশেষ সিলমোহরে আলাদা করে মধুসূদনের নাম উল্লেখ ছিল না।

১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আনুমানিক বেলা দুইটায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাত্র ৪৯ বছর ৫ মাস বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এ নাতিদীর্ঘ জীবনের প্রথমার্ধে তিনি ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি দুর্বার আগ্রহ অনুভব করলেও জীবনের শেষ দিকে এসে অসংখ্য সনেট, কবিতা, নাটক, প্রহসন আর প্রবন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে ধন্য করে গেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ