সমাধানের প্যাকেজ বহু, কিন্তু কৃষকের কৃষি কোথায়
Published: 21st, November 2025 GMT
মনটা বিষন্ন ও ক্ষুব্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্ব মানবতাকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দিয়ে বেলেম কপ প্রেসিডেন্সি যে ‘বৈশ্বিক মুটিরাও’ (সম্মিলিত প্রচেষ্টা) ঘোষণার খসড়া করেছে সেখানে ‘কৃষক ও খাদ্য উৎপাদকের’ নাম নাই। আদিবাসী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী মানুষ, অভিবাসীদের নাম আছে। গতকাল পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত হয়নি। একইদিনে ‘অ্যাকশন অন ফুড’ প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় কপ প্রেসিডেন্সির ‘টেকসই কৃষিতে প্রবেশাধিকার (অ্যাক্সেস টু সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার)’ দলের ব্রাজিল প্রতিনিধি সামি মানেস আদ্দিসি স্টেমবার্গ বলেছেন, কৃষিভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচি করা হচ্ছে, যা ক্ষুদ্র কৃষক ও পারিবারিক কৃষিকে শক্তিশালী করবে। কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থাকে জলবায়ু আলোচনার কেন্দ্রে আনতে বিশ্বনেতাদের অঙ্গীকার জরুরি।’
(অ্যাকসেস টু সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার)’ দলের ব্রাজিল প্রতিনিধি সামি মানেস আদ্দিসি স্টেমবার্গ বলেছেন, কৃষিভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচি করা হচ্ছে, যা ক্ষুদ্র কৃষক ও পারিবারিক কৃষিকে শক্তিশালী করবে। কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থাকে জলবায়ু আলোচনার কেন্দ্রে আনতে বিশ্বনেতাদের অঙ্গীকার জরুরি।
চিলির কৃষকনেতা গঞ্জালো মুনেজ আবোগায়ের গতকাল এক সভায় ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, নীতিনির্ধারকেরা কার্বন নিঃসরণের প্রধান উৎসগুলোকে পাশ কাটিয়ে এখন কৃষি ও মৎস্যকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য অভিযুক্ত করছেন। অথচ বিশ্বব্যাপী একমাত্র কৃষিই সবচেয়ে বেশি মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করছে এবং বিশ্বের আহার জোগান দিচ্ছে। কৃষির মাধ্যমে বিপুল কার্বন সঞ্চয় হয় মাটিতে। কৃষক জানেন প্রকৃতির সঙ্গে কীভাবে চলতে হয়।
আরও পড়ুনজলবায়ু মঞ্চের দরজা সবার জন্য খোলা নেই ২০ নভেম্বর ২০২৫১৭ নভেম্বর ব্লু জোনের বাইরে ‘কাসা মিয়া এভেনটেস’ নামের একটি ভেন্যুতে ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর দ্য ফিউচার অব ফুড (গ্যাফ)’ ন্যায্য খাদ্যব্যবস্থার জন্য বৈশ্বিক মুটিরাও গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। কপের অ্যাকশন এরিয়াতে ১৮ নভেম্বর গ্যাফ আয়োজিত খাদ্যব্যবস্থার রূপান্তরবিষয়ক এক সংলাপে ফিলিপাইনের এশিয়ান ফার্মারস ফেডারেশনের প্রতিনিধি এস্থার পেনুনিয়া বলেন, কৃষি ও কৃষকের বাস্তব অবস্থাকে বিবেচনা করে জলবায়ু অর্থায়নে কৃষকের সক্রিয় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ইউএনএফসিসিসি ফার্মারস কনস্টিটিউয়েন্সি, ইউএনএফসিসিসি ইনডিজেনাস ককাস, ইন্টারন্যাশনাল ইনডিজেনাস ফোরাম অন বায়োডাইভার্সিটির মতো বৈশ্বিক পরিষদগুলো কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থার ন্যায্য ও সার্বভৌম রূপান্তর বিষয়ে নানাভাবে দাবি উত্থাপন করলেও এখনো বেলেম সম্মেলন কোনো অঙ্গীকার করেনি।
আরও পড়ুনদ্বিতীয় সপ্তাহও কি আশাভঙ্গের কার্বন কপি হবে১৮ নভেম্বর ২০২৫বদলে যাওয়া ‘সুভা দ্য টারডে’ কিংবা ‘আমাতি’২০ নভেম্বর বেলেমের বার্গেনটিশয়া এলাকায় আমরা কয়েকজন গিয়েছিলাম একটি কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা খামার (অ্যাগ্রোইকোলজি) দেখতে। তিন হাজার কৃষক পরিবারের ১৫টি কৃষক সংগঠন নিরাপদ প্রাকৃতিক কৃষির চর্চা করছে। তাদের একটি কৃষি বিদ্যালয় এবং ক্যাফে আছে। ভুট্টা থেকে তৈরি কোসকোস নামের খাবারটি এই ক্যাফেতে খুব জনপ্রিয়। তারা নিজেদের ‘ক্যাম্পোসিনো’ হিসেবে পরিচয় দেয়। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে দায়িত্বশীল কৃষক। ক্যাম্পোসিনো ভিনসেন্টি গেব্রিওরেলি এবং লুসিয়া হেইস জানান, বৃষ্টিপাতের ওপর তাঁদের চাষাবাদ নির্ভরশীল, কিন্তু এখন অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে ও গরম বাড়ায় তাঁদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। আগে শীতকালে প্রতিদিন বৃষ্টি হতো। গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন বেলা তিনটার দিকেও বৃষ্টি নামত। তিনটার বৃষ্টিকে তাঁরা ‘সুভা দ্য টারডে (দুপুরের বৃষ্টি)’ বলেন। সুভা দ্য টারডে বদলে যাচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার পর বেলেম হয়ে উঠছে বিশ্বের উষ্ণতম শহর।
আরও পড়ুনপৃথিবীর জন্য তাঁরা সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছেন ১৭ নভেম্বর ২০২৫সঙ্গে সঙ্গেই নিজের খেরোখাতায় লিখে রাখা গ্লোবাল ল্যান্ডস্কেপ ফোরামের পরিচালক ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা নিবাসী কামাল সি প্রাউইরানেগারার বক্তব্যটি পড়লাম। অ্যাকশন অন ফুড হাবে অনুষ্ঠিত ১৭ নভেম্বরের এক সমাপনী অধিবেশনে তিনি বলেছিলেন, ‘নিরাপদ কৃষি ছাড়া এই উষ্ণতম সময়ে আমাদের হাতে কোনো জাদুর কাঠি নেই। একই সঙ্গে সুভা দ্য টারডের কথায় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের আষাঢ় মাসের “আমাতি বা অম্বুবাচির” কথা মনে পড়ল। আমাতির দিনে একটানা সাত দিন ঝরতে থাকা সেই বৃষ্টি এখন উধাও হয়েছে।’
পাভেল পার্থ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ য ট রড র জন য জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
শঙ্কা ও ভীতি দূর না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে আরো বলিষ্ঠ ও স্বচ্ছ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছেন, “নাগরিকদের মনে এখনো যে শঙ্কা ও ভীতি রয়েছে, তা দূর করা না গেলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।”
আরো পড়ুন:
সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা না গেলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি বাধাগ্রস্ত হবে: বিআরটিএ চেয়ারম্যান
অপশক্তি নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না: আইজিপি
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) খুলনায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সকালে নগরীর হোটেল সিটি ইন-এ এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “জনগণ আস্থা না পেলে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রূপ পায় না। মুক্ত আলোচনা, স্বচ্ছতা ও সততার ভিত্তিতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার আজ সময়ের দাবি। দেশ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠছে, নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। আমরা কেমন নির্বাচন পাব- সেই প্রশ্ন জনগণের মনে রয়ে গেছে।”
খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভাবনা বহুদিন ধরে আলোচিত হলেও বাস্তবায়ন এখনো দৃশ্যমান নয়। পদ্মা সেতু চালুর পরে প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কর্মসংস্থান বা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি বাড়েনি; সভায় এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন নাগরিকরা বলে জানান তিনি।
সিপিডির আহ্বায়ক বলেন, “নতুন প্রজন্মের শ্রমিককে আকৃষ্ট করতে অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়ন জরুরি। খুলনা অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প, চিংড়ি ও মাছ উৎপাদন এবং পর্যটন খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবন ও সাংস্কৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠা সম্ভব।” এ বিষয়গুলো সভায় আলোচিত হয়েছে বলেও তিনি জানান।
খুলনা অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এলাকা থেকে যারা নির্বাচন করবেন, তাদের অবশ্যই আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে দিতে হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম পরবর্তীতে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা তৈরি করবে।”
“রপ্তানিমুখী অর্থনীতির জন্য দক্ষ বন্দর ব্যবস্থা অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ জরুরি হলেও তা অবশ্যই স্বচ্ছ পদ্ধতিতে হতে হবে”, যোগ করেন তিনি।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “সঠিক সংস্কার যদি বেঠিক পদ্ধতিতে করা হয়, তাহলে তার সুফল পাওয়া যায় না। বন্দর সংস্কারে যে দ্রুততা ও অস্বচ্ছতা দেখা গেছে, তাতে ভালো উদ্যোগও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।”
ড. দেবপ্রিয় জোর দিয়ে বলেন, “সংস্কার প্রয়োজন, বিনিয়োগও প্রয়োজন; কিন্তু তা হতে হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে, উন্মুক্ত আলোচনা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাহলেই সংস্কার টেকসই হবে।”
সভায় আগামী নির্বাচনের প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক নেতৃবৃন্দ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিরাপদ সড়ক, শিল্পের উন্নয়ন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জনসহ সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পের বিকাশ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি। সভায় সমাপনী বক্তৃতা করেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর খুলনা মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, এনসিপির ডা. আব্দুল্লাহ চৌধুরী।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ