ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বুড়াপীরের মাজার। এই মাজারের পেছন দিক দিয়ে একটা ছোট রাস্তা চলে গেছে কাছারিঘাটের দিকে। উত্তর পাশে বালুময় চর আর চরের উত্তর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদ। কাছারিঘাট মসজিদের পেছনে এই রাস্তার পাশেই খানে মোহাম্মদ আলী নার্সারি। নার্সারির উত্তর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের ধু ধু চর, তার উত্তর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদ। এই নদ এখন পড়ন্ত যৌবনা। বুকে বালুচর। নদের ওপারে তাকালে লোকালয়, গাছপালা ও পুকুর চোখে পড়ে। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর ব্রহ্মপুত্র তীরের এই নার্সারিতেই পেয়ে যাই প্যান্ডোরিয়া আর বিচিত্র টিয়াঠোঁটি ফুলের দেখা।
মনোহরা প্যান্ডোরিয়া
লতাজাতীয় এই উদ্ভিদের বাংলা নাম নেই বলে গণের নাম ‘প্যান্ডোরিয়া’ দ্বারাই এর পরিচিতি। নার্সারিওয়ালা একে ‘লতা কামিনী’ বলে বিক্রি করছিলেন। প্যান্ডোরিয়ার যৌগিক পাতার পত্রক দেখতে কামিনী ফুলের মতো বলেই হয়তো এই ভুল নামে তারা পরিচয় দিচ্ছিল। কামিনীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কামিনী রুটেসি পরিবারের গুল্ম। শৌখিন উদ্ভিদ সংগ্রাহক ও নার্সারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এ রকম অনেক বিদেশি উদ্ভিদ আমাদের দেশে এসেছে, জনপ্রিয় হয়েছে কিন্তু এদের কোনো বাংলা নাম নেই।
এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Pandorea jasminoides, এটি Bignoniaceae পরিবারের কাষ্ঠল, লতানো আরোহী উদ্ভিদ। আর ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ বাওয়ার অব বিউটি ও বাওয়ার ভাইন নামে পরিচিত। এই উদ্ভিদের আদিনিবাস পূর্ব অস্ট্রেলিয়া। সাধারণত ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় রেইনফরেস্ট এবং পূর্ব কুইন্সল্যান্ড থেকে উত্তর নিউ সাউথ ওয়েলসের উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পাওয়া যায় এই উদ্ভিদ।
উদ্ভিদের কাণ্ড মসৃণ এবং বাকল ঘন বাদামি বর্ণের। উদ্ভিদ ২০-৩০ ফুট উঁচু হতে পারে। পাতা পক্ষল যৌগিক এবং চকচকে গাঢ় সবুজ। প্রতিটি পাতায় তিন থেকে নয়টি ডিম্বাকৃতির পত্রক থাকে। পত্রক দুই থেকে চার ইঞ্চি লম্বা। ফুল সাদা বা গোলাপি, ট্রাম্পেট আকৃতির। ফুল রোমশ এবং ভেতরে লাল। পাপড়ি পাঁচটি। এরা গোড়ার দিকে যুক্ত হয়ে ট্রাম্পেট আকৃতি তৈরি করে। আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবে আমাদের দেশেও এই উদ্ভিদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুল ফোটে। ফল আয়তাকার বা ডিম্বাকৃতির ক্যাপসুল, যা ৪০-৬০ মিলিমিটার লম্বা হতে পারে। ফলের ভেতর ডানাযুক্ত বীজ তৈরি হয়। এই উদ্ভিদকে মাঝেমধ্যে ছাঁটাই করে দেওয়া ভালো। তবে ফুল ফোটার আগে ছাঁটাই করা যাবে না। তা করলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। দেয়ালে, বেড়ায় তুলে দিলে দারুণ মানায়।
বিচিত্র টিয়াঠোঁটি
এটি একটি চিরসবুজ বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। উদ্ভিদ বর্ষজীবী অর্থাৎ এক বছরের বেশি বাঁচে না। গাছের গোড়ায় কন্দ থাকে তা থেকে নতুন গাছ জন্মায়। উদ্ভিদ প্রায় ১ থেকে ১ দশমিক ৫ মিটার লম্বা হয়। পাতা সরুভাবে উপবৃত্তাকার থেকে বল্লমাকৃতির। পাতায় অনিয়মিত ক্রিমি-সাদা দাগ উদ্ভিদটিকে করে তুলেছে বৈচিত্র্যময়, সুন্দর। পরিপক্ব পাতার রং সবুজ, ক্রিমরঙা বা সাদাটে হয়। শক্ত নলের মতো পুষ্পদণ্ডের মাথার পুষ্পমঞ্জরিতে ফুল ফোটে। ব্র্যাক্ট বা মঞ্জরিপত্র উজ্জ্বল লাল। এই ব্রাক্ট উদ্ভিদের আকর্ষণীয় অংশ। প্রকৃত ফুল হলুদ বা সোনালি। ফুলের মঞ্জরিপত্র দেখতে কলার খোলের মতো। এই খোলের মধ্য থেকে লম্বা কাঠির মতো ফুল বের হয়ে আসে। এই ফুলকে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখা যায়।
ময়মনসিংহের কাছারিঘাটের নার্সারিত বিচিত্র টিয়াঠোঁটি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উদ ভ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহ ওয়াশপিটে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে দুর্বৃত্তের আগুন
ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের ওয়াশপিটে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে আনেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনার পর দুর্বৃত্তদের ধাওয়া দিলে তারা স্টেশন এলাকা থেকে পালিয়ে যায়।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ভোর চারটার দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ময়মনসিংহ কার্যালয়ের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের বাইরের অংশে জারিয়া লোকাল ট্রেনের কোচগুলো ধোয়ামোছা করার জন্য ওয়াশপিটে দাঁড় করানো ছিল। সেখানে এমনিতেই রাতে অনেক অন্ধকার থাকে। এই সুযোগে নাশকতার উদ্দেশ্যে ভোররাতে একদল দুর্বৃত্ত অপকৌশলে গানপাউডার এবং পেট্রোল দিয়ে ট্রেনে আগুন দেয়।
আগুন জ্বলতে শুরু করলে আরএনবির তিন সদস্য দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করে এবং কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা এক দুর্বৃত্তকে ধাওয়া দেয়। তবে অন্ধকার থাকায় দৌড়ে তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। পরে আরএনবি সদস্যরা দ্রুত পানি ছিটিয়ে আগুন নেভায়। যার ফলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রেলওয়ের জানমাল রক্ষা পায়। এ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।
স্টেশন সুপার আব্দুল্লাহ আল হারুন জানান, আগুনে একটি বগির কয়েকটি সিটের বেশকিছু অংশ পুড়ে গেছে এবং অন্যান্য আরো কয়েকটি সিটে গান পাওডার জাতীয় মিশ্রণ ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোতে পেট্রলজাতীয় তরল পদার্থ ঢালা হয়েছিল যেন দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।
বর্তমানে ময়মনসিংহ জংশন রেলস্টেশনের ট্রেন চলাচল এবং সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মিলন/এস