সিরাজগঞ্জে কারখানার পেছনে ডোবা থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার, ভাঙচুর
Published: 4th, July 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে নিখোঁজের দুই দিন পর একটি ডোবা থেকে শামীম শেখ (২৮) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বেলা একটার দিকে উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের কুটিরচর গ্রামে একটি কারখানার পেছনের ডোবা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শামীম শেখ কুটিরচর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে। তিনি গত বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনার পর এলাকায় লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কয়েক শ লোক জড়ো হয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই কারখানার লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। পরে কারখানার আশপাশে ভাঙচুর চালানো হয় এবং কিছু অংশে অগ্নিসংযোগও করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শামীম বুধবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজ দুপুরে ভদ্রঘাট ইউনিয়নের কুটিরচর গ্রামে একটি কারখানার পেছনের একটি ডোবা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে স্থানীয় লোকজন সেখানে গিয়ে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় শামীমের লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁর লাশ উদ্ধার করে এবং স্বজনেরা তাঁর লাশ শনাক্ত করেন।
নিহতের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। ওর কোনো শত্রুও ছিল না। কারা কী কারণে তাকে এমনভাবে হত্যা করল, বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন কারখানার লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, লাশটি ডোবার পানিতে ডুবে থাকায় দ্রুত পচন ধরে। গলায় গামছা প্যাঁচানো লাশটির বাঁ হাতের বগলের নিচে ও বাঁ বাহুতে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। লাশটি উদ্ধারের পর বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।