ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ইবি শিক্ষক ড. আজিজ
Published: 5th, July 2025 GMT
ছাত্রীদের যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আনা অভিযোগগুলো তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ শনিবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড.
অফিস আদেশ অনুযায়ী, আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৫ জুলাই) হতে তাকে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদের চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি অনুযায়ী জীবন ধারণ ভাতা পাবেন।
আদেশে আরও বলা হয়, শিক্ষক আজিজুলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো তদন্তে গঠিত কমিটিতে আল ফিকহ অ্যান্ড ‘ল’ বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিমুদ্দিনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার আরিফা আক্তার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদা আক্তার। কমিটিকে আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজিমুদ্দিন বলেন, চিঠি পেয়েছি। সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হলে আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।
প্রসঙ্গত, আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ প্রদান, ভিডিও কলে অপ্রাসঙ্গিক ও অশালীন কথা বলা, রুমে ডেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে আপত্তিকর জিজ্ঞাসা, ক্লাসে সবার সামনে বিভিন্নভাবে আজেবাজে ইঙ্গিত, বিবাহিত ছাত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নিজের আন্ডারে প্রজেক্ট করতে পছন্দের ছাত্রীদের বাধ্য করা, বডি শেমিং, কথা মতো না চললে ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়া ও কোর্সে ফেল করানোর অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এসব অভিযোগ এনে গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত ২৮ জুন অভিযুক্ত শিক্ষককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই শাস্তিতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে গত ২ জুলাই উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজিজুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রশাসন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আজ জ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বড়পুকুরিয়ায় সব ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ, ৮ জেলায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাট
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে।
গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট এবং এর আগে ১৬ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে গর্ভনর ভালভ স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হয়। এসব কারণে কেন্দ্রটির ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের সংস্কারকাজ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলমান। ফলে তখন থেকে এই ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই ইউনিটটিতে উৎপাদন শুরুর আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন১২ দিন পর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ত্রুটির কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বন্ধ হওয়া তৃতীয় ও দ্বিতীয় ইউনিটে এক সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে ত্রুটি সারিয়ে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচলের চেষ্টা চলছে।
জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উত্তরাঞ্চলে চাহিদা পূরণে পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, অন্যদিকে সরবরাহে ঘাটতি। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। জাতীয় গ্রিড থেকেও মিলছে না চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ। জাতীয় গ্রিড থেকে কমিয়ে দেওয়া হয় দিনাজপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ত্রুটি দেখা দিলে প্রভাব পড়ে পার্বতীপুরে। বিশেষ করে পার্বতীপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ছেন। এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে ভ্যাপসা গরম। ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পুড়ছে অঞ্চলটি। এই গরমে সেখানে বেড়েছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। সকাল, ভোর কিংবা গভীর রাতে চলে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট।
উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর নয়াপড়া আবু সালেম বলেন, একদিকে গরম; অন্যদিকে রাত-দিন সমানতালে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। এ অবস্থায় সুস্থ থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পার্বতীপুর জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জহুরুল হক। তিনি বলেন, ছুটির দিন ছাড়া জোনটিতে প্রতিদিনের চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। কয়েক দিন থেকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। এতে পল্লীবিদ্যুতের প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েছেন। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ছয় থেকে সাত মেগাওয়াট। এ ছাড়া বিদ্যুতের ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো জাতীয় গ্রিডে। ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ১ হাজার ৬০০ টন কয়লা লাগে। ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ টন কয়লা ব্যবহার করা হতো। ১২৫ মেগাওয়াট দ্বিতীয় ইউনিটে প্রতিদিন ৬০ তেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। এখানে ব্যবহৃত হতো ৮০০ থেকে ৯০০ টন কয়লা। ২০২০ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি সংস্কারের জন্য ওভার হোলিংয়ে আছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। তবে এ পর্যন্ত তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে কখনো চালাতে পারেনি তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনযান্ত্রিক ত্রুটিতে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সরবরাহ করা কয়লার ওপর নির্ভর করে চলে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। এদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পার্বতীপুর কার্যালয় জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছয় থেকে সাত মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে তিন থেকে চার মেগাওয়াট। শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক আছেন। পার্বতীপুর শহরে নেসকোর বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে সাত মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ তিন মেগাওয়াট।
এ ব্যাপারে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তৃতীয় ও প্রথম ইউনিটটি মেরামতের কাজ চলমান। দুটি ইউনিট চালু হলে এ অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমবে আসবে। এক সপ্তাহের পর কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরবে।