বর্ণাঢ্য আয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বিপণন শিক্ষার ১৮ বছরের পথচলার গৌরবময় মাইলফলক উদযাপিত হয়েছে। জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, করপোরেট নেতৃত্বের উপস্থিতি ও সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে উঠেছিল পুরো ক্যাম্পাস।
শনিবার (৫ জুলাই) দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, করপোরেট প্রতিনিধিসহ অগণিত অতিথির প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
জুলাই আন্দোলনকারীদের দেশ ছাড়তে বলা শিক্ষকদের পদোন্নতি, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
আশুরা: শোক, শিক্ষা ও আত্মত্যাগের চিরন্তন প্রতীক
মার্কেটিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে ডেনমার্কের অ্যালবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বখতিয়ার রানা বলেন, “গবেষণা ছাড়া শিক্ষায় টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমাদের শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী হতে হবে।” তিনি বিভাগের শুরুর দিকের নানা সংগ্রাম, সংকট ও অর্জনের গল্প শোনান।
বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইমরানুল হকের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানকে আরো উপস্থিত ছিলেন, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিইও সৈয়দ আলমগীর, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড অ্যাডমিন ম্যানেজার সাইফ মুহাম্মদ আনোয়ার, প্রিয় শপের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আশিকুর আলম খান এবং ওয়ালটনের টিম লিডার আরিফ। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও বাস্তব জীবনভিত্তিক দিকনির্দেশনা তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’-এ শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
দিনব্যাপী আয়োজনের চূড়ান্ত আকর্ষণ ছিল তাসরিফ খানের ‘কুড়েঘর’ ব্যান্ডের কনসার্ট, যা রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যান্ড দলও এতে অংশ নেয়।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দলীয় ‘প্রতিপক্ষ দমনে’ অস্ত্রবাজি
চট্টগ্রাম নগরে যুবদলের দুই পক্ষের মারামারিতে গুলিতে এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম মো. সাজ্জাদ (২২)। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১০ জন। গত সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নগরের বাকলিয়া এক্সেস সড়কের বগার বিল মুখ এলাকায় এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। পুলিশ জানায়, ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত।
চট্টগ্রামে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের নিজেদের মধ্যে মারামারিতে অস্ত্রবাজির ঘটনা এটা নতুন নয়। এর আগে নগরের খুলশী এলাকায় ব্যানার টাঙানো নিয়ে চলতি বছরের ২১ মার্চ সংঘর্ষের সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ এপ্রিল মো. জিহাদ নামের এক যুবদল কর্মী মারা যান। নগর ছাত্রদলের সদস্যসচিব শরীফুল ইসলামের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপি নেতা শাহ আলমের অনুসারীদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়। জিহাদ শাহ আলমের অনুসারী।
নগরের পাশাপাশি রাউজান উপজেলায়ও নিজেদের মধ্যে মারামারিতে এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর গুলি ছুড়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার জেলার রাউজানের চারাবটতল এলাকায় আলমগীর আলম নামের এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে খুন করা হয়। এতেও দায়ী করা হয় দলের একটি পক্ষকে। নিহত আলমগীর উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী। অপর পক্ষে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা।
শুধু জেলার রাউজানেই গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৭টি হয় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের মধ্যে। এর মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ছয়জনকে।
এসব ঘটনায় করা মামলায় অস্ত্রধারীদের ধরতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি অস্ত্রও। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় কর্মী ও সন্ত্রাসীদের হাতে থানা থেকে লুট করা অস্ত্রও রয়েছে। এসব অস্ত্র তাঁরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দলীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। সে সময় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ অস্ত্র-গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্রধারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গত সোমবার রাতে নিহত সাজ্জাদ নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) এমদাদুল হক বাদশার অনুসারী। বাকলিয়া তক্তারপুল এলাকার মো. আলমের ছেলে তিনি।
দলীয় সূত্র বলছে, এমদাদুল ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর অনুসারীদের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এমদাদুল ও
সিরাজ দুজনেই সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত হিসেবে নাম আসা সিরাজের অনুসারী বোরহানউদ্দিন এখন নিজেকে যুবদলের সংগঠক দাবি করে আসছেন। কিন্তু এখন নগর যুবদলের কমিটি নেই।
গোলাগুলির বিষয়ে জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
দলীয় সূত্র বলছে, ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে এমদাদুলের অনুসারী যুবদল কর্মী মো. জসিমকে গত সোমবার রাতে সিরাজের অনুসারী বোরহানউদ্দিনসহ কয়েকজন তুলে নিয়ে যান। বোরহান একসময় যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর সিরাজের ছবি দিয়ে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সফলতা কামনা করে বেশ কিছু ব্যানার টাঙান তিনি। এখন তিনি নিজেকে সিরাজের অনুসারী পরিচয় দিয়ে আসছেন।
তুলে নেওয়া মো. জসিম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন তাঁর ছবি ব্যবহার করে নগরের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের টাঙানো ব্যানার তুলে ফেলার নির্দেশ দেন। এরপর বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় লাগানো ব্যানারগুলো খুলে ফেলেন জসিম। এর মধ্যে শাহাদাত, সিরাজের ছবিসহ বোরহানের ব্যানার ছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে তাঁকে (জসিম) ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল তুলে নিয়ে যায়। আটকে রেখে মারধর করা হয়।
দলীয় সূত্র বলছে, জসিমকে আটকে রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে এমদাদুলের অনুসারীরা তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে যান। বোরহানের কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় কাচ। এ সময় বাকলিয়া এক্সেস রোডে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বোরহানের লোকজন। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে পরে আহত অবস্থায় হাসপাতাল আনা হলে সাজ্জাদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাঁর বুকের ডান পাশে একটি গুলি লাগে।
জানতে চাইলে এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সিরাজের ছবি দিয়ে ব্যানার টাঙিয়েছিলেন বোরহান। মেয়র শাহাদাতের নির্দেশে ব্যানারগুলো খুলে ফেলায় জসিমকে ধরে নিয়ে যান বোরহানরা। ছাড়িয়ে আনতে গেলে গুলি করেন।
গাজী সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, বোরহান তাঁর অনুসারী নয়। খারাপ জানার পর থেকে তাঁর সঙ্গে তিনি কোনো যোগাযোগ রাখেননি।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ইট ও কাচের ভাঙা টুকরা পড়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে আশপাশের লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক বাসিন্দা জানান, মুহুর্মুহু গুলির শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। উঠে যায় তাঁর দুই সন্তানও। তাঁরা এখনো বাসা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। আবার কখন কী হয়ে যায়, সেই ভয়ে আছেন তাঁরা।
গোলাগুলিতে ছাত্রদল কর্মী নিহতের ঘটনায় পুলিশকে দুষছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। গতকাল তিনি নিহত ছাত্রদল কর্মীর বাড়িতে গেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি পুলিশ কমিশনার সাহেবকে বলেছি ফোন করে; এই ছেলেগুলোকে গ্রেপ্তার করতে। আমি সম্পূর্ণ বাকলিয়া থানাকে দোষ দেব। বোরহান ও তার সঙ্গীদের যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসতে পারত এবং তাদের মামলায় দিয়ে যদি জেলে রাখতে পারত, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।’
বিএনপি নেতা শাহাদাত বলেন, ‘আমি বলেছি, যদি আমার দলেরও কেউ তাদের শেল্টার দিয়ে থাকে, দরকার হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নাও। তাকেও গ্রেপ্তার কর।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গতকাল দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে সাজ্জাদের লাশ বাকলিয়ায় দাফন করা হয়। তাঁর মা ফরিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে কেন গুলি করেছে? তার খুনিদের বিচার চাই।’