রাজধানীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’র প্রিমিয়ার শো
Published: 8th, July 2025 GMT
‘আম্মু কখনো যদি বিপ্লব হয়, আমি যেন রাজপথে শহীদ হই। কথাটি বারবারই মনে পড়ে আমার। আল্লাহ হয়তো তার এ কথাটা কবুল করেছে।’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন দেওয়া ছেলেকে নিয়ে স্মৃতিচারণে কথাগুলো বলছিলেন সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসি আরা জামান।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আরিফুর রহমান পরিচালিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’র প্রিমিয়ার শো। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি তথ্যচিত্রটির বিশেষ সহযোগিতায় ছিল চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের সঞ্চালনায় আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, জুলাই শহিদদের প্রেরণা অনুসরণ করতে পারলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব। যেখানে রাষ্ট্র হবে সবার এবং সকলের নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই কখনো বেহাত হবে না। জুলাইয়ের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার চলছে, বিচার দৃশ্যমান। এই বিচার গ্রহণযোগ্য করতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার হবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করে, তাকে দমন করতে হয়। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনো মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেজন্য তিনি সকলকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে উদ্দেশে শহিদরা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শোতে আরও উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা ও ভাই। আবু সাঈদের বাবা ও সাংবাদিক প্রিয়’র মায়ের কথায় প্রতিধ্বনিত হয় আন্দোলনের সকল হত্যার বিচারের দাবি।
এছাড়া প্রধান মিলনায়তন এবং একই সাথে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে প্রিমিয়ার শোতে প্রতিটি মৃত্যুর দৃশ্য চলাকালীন সময়ে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। দর্শকসারি থেকেই ভেসে আসতে থাকে জুলাইয়ের রক্ত গরম করা বিভিন্ন স্লোগান।
তথ্যচিত্র শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, এই তথ্যচিত্র বানানোর সময় অনেকে আমাকে বলেছে- সমস্যা হবে। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক ধরনের ঝামেলায় পড়তে হবে। কিন্তু এখন আর কোনো ভয় নেই। আমরা এখন সাহসী হয়ে গেলাম।
জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের নৃশংস ও ভয়াবহ বাস্তবতার রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৩০ মিনিটের তথ্যচিত্রে। আন্দোলনে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ, বক্তব্য, নিহতদের আহাজারি, আলোকচিত্রীর কথাসহ উঠে আসে জুলাইয়ের প্রতিটি রূদ্ধশ্বাস সময়গুলো। এটি আরও ছয়টি ভাষায় ডাবিং করে ইউটিউবসহ পরবর্তীতে সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয় আয়োজনের শেষে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণঅভ য ত থ ন প আইব জ ল ই গণঅভ য ত থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কী আছে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায়
বহুল প্রতিক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সই হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। পরে গণমাধ্যমের হাতে আসে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা।
আরো পড়ুন:
জুলাই সনদ পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা
২৫ রাজনৈতিক দলের যেসব নেতারা অংশ নিলেন
অঙ্গীকারনামার ওই কপিতে দেখা গেছে, এতে ৭টি ধারা রয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার ও ঘোষণা করছি যে-
১। জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব।
২। যেহেতু জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিক, তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণত জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সেহেতু রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ গ্রহণ করেছি বিধায় এ সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করব।
৩। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করব না, উপরন্তু উক্ত সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করব।
৪। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করব।
৫। গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।
৬। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান এবং বিদ্যমান আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।
৭। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করেই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ