বন্ড ইস্যু পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনছে ইস্টার্ন ব্যাংক
Published: 10th, July 2025 GMT
পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ বন্ড ইস্যু পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডের পরিবর্তে এবার জিরো কুপন সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি ব্যাসেল-৩ এর নির্দেশনা অনুযায়ী টায়ার-২ মূলধন শক্তিশালী করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন এ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদনের পর চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।
আরো পড়ুন:
বিদেশি কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে শিল্প উপদেষ্টা-বিএসইসি বৈঠক
ডিএসইর ‘ডিএস৩০’ সূচক সমন্বয়
জিরো কুপন বন্ডে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সুদ না দিয়ে ছাড়মূল্যে বিক্রি করা হয় এবং পরিপক্কতার সময় পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা হয়। ফলে, এ ধরনের বন্ড ইস্যু ব্যাংকের মূলধন কাঠামো পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
ঢাকা/এনটি/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সিন্ধুর পানিপ্রবাহ বন্ধ নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কি সংঘাত অনিবার্য
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সাদত হাসান মান্টো প্রায় সাত দশক আগে একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন। ১৯৫১ সালে প্রকাশিত ‘ইয়াজিদ’ নামের সেই গল্পটি পাকিস্তানের পাঞ্জাবের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে রচিত। গল্পের পটভূমিতে গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মানুষজন বলাবলি করতে থাকেন, ভারত নাকি পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বন্ধ করে দেবে।
গল্পের একটি চরিত্র সেই গুজবের জবাবে বলেন, ‘নদী কি কেউ বন্ধ করতে পারে? এটা তো নর্দমা না, নদী।’ ৭৪ বছর পর গল্পের সেই গুজব আজ যেন বাস্তব এক পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন মানুষ নিহত হন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই হামলার জন্য নয়াদিল্লি সরাসরি পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করেছে। পরের দিন সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিতের ঘোষণা দেয় ভারত।
নদীর প্রবাহ থেমে গেলে ভাটির দেশ হিসেবে পাকিস্তানের কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা এবং কোটি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এতে ভারত-পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।চুক্তিটি ছয় দশক ধরে সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ২৭ কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা এই চুক্তির ওপর নির্ভরশীল, যাদের অধিকাংশই পাকিস্তানে নাগরিক।
ভারতের ঘোষণার পরদিনই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি (এনএসসি) এই একতরফা সিদ্ধান্তকে ‘আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন’ বলে নাকচ করে দেয়। পরিষদ জানিয়ে দেয়, পাকিস্তানের পানির গতিপথ বদলানো হলে তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।
পেহেলগামে হামলার ১৫ দিন পর ৭ মে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং পাল্টা হামলা চালায়। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। চার দিনের সংঘাতের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়।
সাময়িকভাবে পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধ হলেও দুই দেশই কূটনৈতিকভাবে নিজেদের অবস্থানকে বৈশ্বিকভাবে শক্তিশালী করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত নিয়ে এখনো নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে ভারত। গত ২১ জুন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটি আর কখনো পুনর্বহাল হবে না। আন্তর্জাতিক চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা না গেলেও আমরা তা স্থগিত রাখার অধিকার রাখি এবং আমরা সেটাই করেছি।’
পাকিস্তানের পানির গতিপথ বদলানো হলে, তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবেপাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটিঅমিত শাহ আরও বলেন, ‘চুক্তির প্রস্তাবনায় বলা আছে, এটি দুই দেশের শান্তি ও উন্নতির জন্য। কিন্তু যখন সে শান্তি ভঙ্গ হয়, তখন চুক্তি রক্ষা করার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত থাকলে নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে তা পাকিস্তানের জন্য অস্তিত্বসংকটের প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিতে পারে।
নদীর প্রবাহ থেমে গেলে পাকিস্তানের কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা এবং কোটি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এতে ভারত-পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
ভারত পুরোপুরি সিন্ধু অববাহিকার পানি বন্ধ করতে পারবে না। অন্তত বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে ভারতের পক্ষে তা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, শীত মৌসুমে ভারতের সামান্য পানি সরানো বা বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও পাকিস্তানকে গুরুতর বিপদে ফেলতে পারে। কারণ, পাকিস্তানে পানি ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত জলাধার নেই। ফলে ভারত যদি নদীর গতিপথে হস্তক্ষেপ করে, সেই সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনো পাকিস্তানের নেই।
একটি নদী, একটি অঞ্চল, এক বিরোধ
সিন্ধু নদের উৎপত্তির তিব্বতের কৈলাস পর্বতে, যা প্রায় ৫ হাজার ৪৯০ মিটার (১৮ হাজার ফুট) উচ্চতা থেকে নেমে এসেছে। এটি বিশ্বের দ্বাদশ দীর্ঘতম নদ। উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে এটি ভারতের কাশ্মীর অঞ্চল অতিক্রম করে পাকিস্তানে প্রবেশ করে এবং প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরব সাগরে গিয়ে মিলিত হয়।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পাহাড়ি পথে সিন্ধু নদ সোয়াট ও কাবুলের মতো পশ্চিম দিকের উপনদীগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর তা পাঞ্জাবের উর্বর সমভূমিতে প্রবেশ করে। যেখানে পূর্ব দিকের ঝিলম, চেনাব, রবি, বিপাশা ও শতদ্রু—এই পাঁচ উপনদী সিন্ধুর সঙ্গে মেশে।
চেনাব নদীর ওপর ভারতের নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ‘বাগলিহার হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট’-এর একটি দৃশ্য। কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু আন্তর্জাতিক পানি চুক্তি একতরফা স্থগিত করেছে ভারত