‘বাবা হাসি মুখে বলে গেছেন, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু আর জীবিত ফিরে আসেননি।’ শনিবার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার বান্দরগাছিয়া গ্রামে গেলে এ সব কথা বলে সোহান (১০)। সে ঢাকার মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যার শিকার লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের ছেলে।

বাবার কবরের পাশে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহান আরও বলে, ‘পাথর দিয়ে বাবাকে যেভাবে মারা হয়েছে, আমরা তো সেভাবে মারতে পারব না। আইন হাতে নেওয়া যায় না। অনুরোধ, বাবা হত্যার বিচার যেন ঠিকভাবে হয়।’

নিহত সোহাগের মেয়ে সোহানা (১৪) বলে, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে ৫ থেকে ৬ বছর আগে আমাদের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় হুমকি দিয়েছে। গোডাউনে তালা দিয়েছে। ওই তালা খুলতে গিয়ে বাবা নৃশংসভাবে খুন হন।’

সোহাগের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘স্বামীর ঘর-বাড়ি, ব্যাংক ব্যাল্যান্স কিছুই নাই। ভাড়া বাসায় থেকে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমি গৃহিণী, কোনো আয় রোজগার নাই। কোথায় থাকব, কি করব, কিছুই জানি না। সন্তানদের ভবিষ্যৎ বলতে আর কিছু নাই।’

এর আগে শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে সোহাগের নানা বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বান্দরগাছিয়া গ্রামে মায়ের পাশে দাফন করা হয়েছে। শনিবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নারী-পুরুষ বাড়িত আসছেন, সোহাগের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ বোনদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। 

এদিকে বিকেল সোয়া ৫টায় সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ। বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে যৌথ সমাবেশ করে সংগঠনগুলো।

এ সময় বক্তারা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তারা মনে করেছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছে। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য শুরু করেছে। এসব বন্ধ না করলে জনগণ আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও প্রত্যাখ্যান করবে। এসব নির্মমতা দেখতে আমরা জুলাই আন্দোলন করিনি, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়নি। এক বছরের ব্যবধানে একই পরিস্থিতি দেখছি। বিএনপির সাহস থাকলে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতো।’ 

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো.

মহিবুল্লাহ্‌ হারুন, ইসলামী আন্দোলন বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মিজানুর রহমান কাশেমী, সাবেক সভাপতি ও কেওড়াবুনিয়া পীর মাওলানা মো. অলিউল্লাহ্‌, ইসলামী আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আসাদুজ্জামান মামুন, গণঅধিকার পরিষদের মো. মাইনুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বরগ ন স হ গ হত য সম ব শ হত য র বরগ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু জিনিয়ার হৃদ্‌যন্ত্রের ছিদ্রের চিকিৎসায় সহায়তা প্রয়োজন

মাত্র চার লাখ টাকায় সুস্থ হয়ে যেতে পারে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জিনিয়া আক্তার (১১)। চলতি বছরের শুরুতে তার হৃদ্‌যন্ত্রে ছিদ্র শনাক্ত হয়েছে। এ জন্য জরুরি অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।

জিনিয়া নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের কলমদার গ্রামের আবদুল জব্বারের মেয়ে। আবদুল জব্বার পেশায় গ্রাম পুলিশ।

আবদুল জব্বার বলেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া চার শতাংশ ভিটেবাড়িই তাঁর একমাত্র সম্বল। পরিবারে বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। গ্রাম পুলিশের চাকরি করে মাসে সাত হাজার টাকা বেতন পান। এই আয়ের ওপর নির্ভর করে কোনোরকমে চলে তাঁর সংসার।

এমন পরিস্থিতিতে মেয়ের জীবন বাঁচাতে দেশের হৃদয়বান মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন আবদুল জব্বার। জিনিয়ার জন্য সহায়তা পাঠানো যাবে আবদুল জব্বার, হিসাব নম্বর; ৫৩০৫৮৩৪১২৬৪২৩, সোনালী ব্যাংক, ডোমার শাখা, নীলফামারী। মুঠোফোন নম্বরে— 01774644253 (বিকাশ)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ