ইবিতে বেড়েছে সাপের উপদ্রব, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
Published: 26th, July 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং একাডেমিক ভবনের পাশে পদ্ম গোখরা, খৈয়া গোখরা ও কালাচ সাপ দেখা গেছে। এ যেন সাপের কোলে ১৭৫ একর ক্যাম্পাস।
এছাড়া সাপে কামড়ালে ইবির চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম না থাকায় নেই কোনো চিকিৎসার সুযোগ। এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমের সময় সাপ নিজেকে ঠান্ডা রাখার জন্য ছায়া, অন্ধকার ও আর্দ্রতা খোঁজে। ওই সময় তারা তাদের প্রয়োজনীয় খাবারও খোঁজ করে। সেজন্য অনেক সময় তারা মানুষের আশপাশে চলে আসতে পারে। সাপ খোলামেলা জায়গায় এবং উন্মুক্ত অবস্থানে থাকতে খুবই অপছন্দ করে।
আরো পড়ুন:
বানরের আক্রমণ ও সাপ আতঙ্কে দিশেহারা সিকৃবি ছাত্রীরা
মাগুরায় সাপের কামড়ে মাদরাসা ছাত্রীর মৃত্যু
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, সড়কের আশেপাশে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্ন না থাকায় সাপের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে এসব বিষধর প্রাণির উপদ্রব বেড়ে গেছে। বিশেষ করে লালন শাহ হল, সাদ্দাম হোসেন হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হলসহ এর আশপাশে থাকা একাডেমিক ভবন ও জিমনেসিয়ামে প্রায়ই বিভিন্ন বিষধর সাপ দেখা যায়। এতে রাতে চলাফেরায় ও হলে থাকতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় সাপ দেখা যাচ্ছে। আবাসিক হল এলাকায় এমন ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে অ্যান্টিভেনম দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এমনকি কাউকে যদি বিষাক্ত সাপ দংশন করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য পাওয়ার উপায় নেই।”
তিনি বলেন, “কালাচ সাপ দংশন করলে সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেলে দংশনের ৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে। এটা খুব ভয়াবহ একটা ব্যাপার। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের লালল শাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, “ইবির লালন শাহ হল যেন সাপের কারখানা। সাপ আতঙ্কে ঘুমাতে পারছে না কেউ। গত সপ্তাহ খানেক আগে দুই দিনে ১৭টির মতো সাপ মারা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১২টার পর মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে তিনটি সাপ মারা হয়েছে। আবার তৃতীয় তলায়ও একটা সাপ পাওয়া গেছে।”
এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কেউ সাপের দংশনে মারা গেলে তার লাশটা প্রশাসনিক ভবনের সামনে ফেলে রাখলে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে।”
ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাফওয়ান রহমান বলেন, “সাধারণত বড় সাপ ডিম দেওয়ার পর চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছোট সাপই বিপজ্জনক। কিছুদিন আগে লালন শাহ হলের ফাঁকা যায়গা থেকে আমরা সাপ বের করেছি। এ রকম আরো কিছু আছে। আমাদের আজও (শুক্রবার) প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। লালন শাহ হলের জন্য সমাধান মনে হচ্ছে, ফাঁকা যায়গাগুলো সিল করে দেওয়া।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা.
তিনি বলেন, “এখানে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের সুযোগ নেই। কারণ এটি দেওয়ার কিছু পরিবেশ আছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া এটি দেওয়া সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। একজনকে সাপ দংশন করলেই অ্যান্টিভেনম দেওয়া যাবে না, বিষাক্ত সাপের দংশন ছাড়া এটি দেওয়া হলে রোগী মারাও যেতে পারে। কার্ডিয়াক সাপোর্টসহ বিভিন্ন টেস্ট শেষে অ্যান্টিভেনম ইউজ করতে হয়।”
তিনি আরো বলেন, “১০ বছর আগে থেকেই আমাদের কিছু অ্যান্টিভেনম আছে। যেগুলোর একটি বাদে বাকি ১০-১২টার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার টাকা। এখানে এন্টি-ভেনম দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমরাও নতুন করে আর নিয়ে আসিনি।”
লালন শাহ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান খান বলেন, “সাপের উপদ্রব আমাদের সবার জন্য উদ্বিগ্নের বিষয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকে। সাপ যাতে রুমে না ঢোকে, সেজন্য প্রায় ২ সপ্তাহ আগে কার্বলিক এসিড ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এটি কতটুকু কার্যকরী, তা আসলে দেখার বিষয়। হলের ড্রেনে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার ও হলের পিছনের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া সাপ উদ্ধারে ও সমস্যা সমাধানে রেস্কিউ টিমের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমার হলের দুই বিল্ডিংয়ের ফোকর অংশ বালি সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা চিকিৎসা কেন্দ্রে জানিয়েছি, কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত যেন থাকে। কেননা আগে শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করতে হবে। এছাড়া প্রশাসনকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে।”
এস্টেট অফিস প্রধান আলাউদ্দিন বলেন, “ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি। পরিষ্কারের কাজ দ্রুত করার জন্য নতুন আরো কিছু মেশিন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রশাসন সহায়তা করলে আমরা আগাছা নির্মূল করে ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারব।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আতঙ ক পর ষ ক র আম দ র র জন য আতঙ ক ক ভবন
এছাড়াও পড়ুন:
ফখরুলের কণ্ঠ নকল, সতর্ক করল বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠ নকল করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
ঐক্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই: ফখরুল
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু কুচক্রি মহল পুরোনো প্রেস কনফারেন্সের ছবি ও বক্তব্য এডিট করে এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করেছে। তারপর তা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, বিএনপি মহাসচিব আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করেছেন। বিএনপি বলছে, এই ভিডিও পুরোপুরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই এই কুচক্রি মহল ভিডিও প্রচার করছে। দেশের মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী এবং এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এ ধরনের এডিট করা ভিডিও দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছে বিএনপি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ