পৃথিবীতে এমন একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি নিজেকে ব্যস্ত মনে করেন না। যিনি বেকার, তাঁকেও জিজ্ঞেস করলে বলবেন, ‘ভাই, সময় নাই!’ আমরা কেউ শিক্ষক, কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা সহকারী; আবার ব্যক্তিগত জীবনে কেউ বাবা, কেউ মায়ের দেখাশোনা করছেন, কেউ সন্তানদের পড়াশোনা সামলাচ্ছেন। সামাজিক দায়িত্ব তো রয়েছেই।

তাহলে প্রশ্ন হলো, এত ব্যস্ততার মধ্যেও কীভাবে আমরা কোরআন খতম করতে পারি?

কোরআন তিলাওয়াতের ফজিলত

কোরআন তিলাওয়াত মানুষের আত্মাকে প্রশান্ত করে। কোরআন তিলাওয়াত করলেও সওয়াব হয়, শুনলেও হয়।

মন খারাপ থাকলে বা যখন মনে হয় সবকিছু এলোমেলো, তখন কিছুক্ষণ কোরআনের তিলাওয়াত শুনলে কিংবা নিজে পড়লে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভূত হয়।

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.

) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে, তার জন্য এর সওয়াব আছে। আর সওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৯১০)

মন খারাপ থাকলে বা যখন মনে হয় সবকিছু এলোমেলো, তখন কিছুক্ষণ কোরআনের তিলাওয়াত শুনলে কিংবা নিজে পড়লে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভূত হয়। যাঁরা তিলাওয়াত জানেন, তাঁরা সৌভাগ্যবান। কারণ, তাঁরা স্রষ্টার ভাষা সরাসরি পাঠ করতে পারেন।

আরও পড়ুনকোরআনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে ‘কোরআন জার্নালিং’২২ জুলাই ২০২৫কত কম দিনে কোরআন খতম করা সম্ভব

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করে, সে বুঝতে পারে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৫৪)

অপর দিকে আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) প্রতি সাত দিনে কোরআন খতম করতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮১৮)

অর্থাৎ সাত দিনে একবার খতম হলে তা সর্বোত্তম।

যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করে, সে বুঝতে পারে না।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৫৪

রমজানে অনেকেই কোরআন খতম করেন। রমজানের বাইরেও কীভাবে নিয়মিত কোরআন খতম করতে পারি, সে জন্য একটু কৌশলী হতে হবে আমাদের।তবে আমরা যদি বছরে অন্তত একবার খতম করতে চাই, তাহলে অল্প অল্প করেও সম্ভব। চাই একটু পরিকল্পনা আর নিয়ত বা সংকল্প।

১. অফিসে যাওয়ার পথে সময় কাজে লাগানো

অনেকেই বাস, রিকশা বা গাড়িতে অফিসে যান। এ সময়টুকুতে যদি আপনি কোরআন তিলাওয়াত বা অডিও তিলাওয়াত শোনেন, তবে ১৫–২০ মিনিটের মধ্যেই কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে ফেলা যায়। আমরা অনেক সময় বাস, রিকশা বা গাড়িতে ফেসবুক স্ক্রল করে বা টাইমলাইন ঘেঁটে সময় নষ্ট করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কারও ইসলামের সৌন্দর্য এটাই যে সে অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩১৮)

রিলস বা শর্টস দেখে সময় নষ্ট না করে কোরআনের একটি রুকু শুনুন বা পড়ুন—এই তো ছোট্ট এক পরিবর্তন। এভাবেই আপনি কোরআন খতমের পথে এগিয়ে যাবেন।

আমাদের দুপুরের খাবারে সময় এক ঘণ্টা হলে আমরা পরিকল্পিতভাবে কয়েক মিনিট সময় আলাদা করে কোরআনের ভালোবাসায় রাখতে পারি, যা আমাদের কাজে বরকত এনে দিতে পারে।

২. দুপুরের খাবার বা জোহরের সময়

অফিসে লাঞ্চের পর বা জোহরের নামাজের সময় ১০–১৫ মিনিট বের করলেই কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়ে ফেলা সম্ভব। আপনি যদি প্রতিদিন তিন ওয়াক্ত এমন সুযোগ কাজে লাগান, তাহলে প্রতিদিন ৩–৪ পৃষ্ঠা পড়া হয়েই যাবে।

আমাদের দুপুরের খাবারে সময় এক ঘণ্টা হলে আমরা পরিকল্পিতভাবে চাইলেই কিন্তু কয়েক মিনিট সময় আলাদা করে কোরআনের ভালোবাসায় রাখতে পারি, যা আমাদের কাজে বরকত এনে দিতে পারে, ইনশা আল্লাহ।

৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে

এশার নামাজের পর ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেকেই ফোনে সময় কাটান। এ সময়টুকু সুরা মুলক পড়ার অভ্যাস করুন, যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তেন। (তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৯২)

এর সঙ্গে আরও একটু সময় যোগ করে একটি পৃষ্ঠা পড়ে নিলে খতমের পথে এগিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুনসহজে কোরআন বোঝার পাঁচটি কৌশল০৩ মে ২০২৫

৪. ফজরের পর সময় কাজে লাগানো

ফজরের পরের সময় বরকতময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের সকালকে বরকতময় করুন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৬০৬)

যাঁরা ফজরের পর কিছুক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, তাঁদের জন্য এটি সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ। মাত্র ১০-২০ মিনিট ব্যয় করলে ২-৫ পৃষ্ঠা পড়া সম্ভব।

একটি পরিকল্পনা

কোরআন ৩০ পারা ও প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠা। আপনি যদি প্রতিদিন দুই পৃষ্ঠা পড়েন, তাহলে ৩০০ দিনে কোরআন একবার খতম হয়। মানে বছরে একবার কোরআন খতম নিশ্চিত। আর আপনি যদি দিনে পাঁচ পৃষ্ঠা পড়েন, তাহলে বছরে দুবার খতম হবে—রমজান ছাড়াও।

প্রতিদিন শুধু ১৫ মিনিট সময় বের করতে পারলেই সম্ভব। আপনি চাইলে ‘কোরআন কম্প্যানিয়ন’ বা ‘Tarteel’ নামের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে প্রগ্রেস ট্র্যাক করতে পারেন। যাঁরা কোরআন শিখছেন, তাঁদের জন্য অডিও তিলাওয়াত শুনে মিলিয়ে পড়ার সুযোগও আছে।

কোরআন ৩০ পারা ও প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠা। আপনি যদি প্রতিদিন দুই পৃষ্ঠা পড়েন, তাহলে ৩০০ দিনে কোরআন একবার খতম হয়।মনে রাখা দরকার

হাদিসে এসেছে, ‘দুই নিয়ামত আছে, যার বিষয়ে অনেক মানুষ প্রতারিত—সুস্থতা ও অবসর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪১২) কাজেই আমরা যদি সময়ের সদ্ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে সেই দায় আমাদেরই।

ব্যস্ততা কখনো কমবে না। বরং আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা সময়কে কীভাবে কাজে লাগাব। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইলে সময়ের মন ও মননে কৌশলে কোরআন ঢুকিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন একটু একটু তিলাওয়াত করলেই একদিন পুরো কোরআন খতম হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।

[email protected]

মুহাম্মাদ মুহসিন মাশকুর: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনধীরে ধীরে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ৩০ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রআন র ব র খতম আম দ র র জন য আল ল হ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বাবা হলেন শ্যামল মাওলা

বাবা হলেন ছোট ও বড় পর্দার অভিনেতা শ্যামল মাওলা। রবিবার (৩ আগস্ট) সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার  একটি বেসরকারি হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শ্যামলের স্ত্রী মাহা শিকদার। 

কন্যাকে কোলে নিয়ে তোলা একটি ছবি শ্যামল মাওলা তার ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। এ ছবির ক্যাপশনে শ্যামল মাওলা লেখেন, “নতুন তারকা এসেছে।” পরে এ অভিনেতা জানান, মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ আছেন। কন্যার নাম রেখেছেন সানাভ মাওলা। 

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মাহা শিকদারকে বিয়ে করেন শ্যামল মাওলা। মাহা অভিনেত্রী, ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত। 

আরো পড়ুন:

স্ত্রীর পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে আলোচনায় গুরমিত

বাঁধন-সাবার ভার্চুয়াল দ্বন্দ্বে যোগ দিলেন অরুণা বিশ্বাস

মাহা শিকদারের এটি প্রথম বিয়ে হলেও শ্যামলের দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে নন্দিতার সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন শ্যামল। এ সংসারে তার একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। 

একসময় মঞ্চে কাজ করতেন শ্যামল মাওলা। ২০০৬ সালে টিভি নাটকে অভিষেক হয় তার। পরে চলচ্চিত্রেও দেখা অভিনয় করেন। ‘গেরিলা’ সিনেমায় তার অনবদ্য অভিনয় এখনো দর্শক হৃদয়ে গেঁথে আছে। তার ‘নাদান’ নামে একটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আগামী দুর্গাপূজায় এটি মুক্তির কথা রয়েছে।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ