পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নস অব লিজেন্ডস (ডব্লুসিএল) টুর্নামেন্টে পাকিস্তান দলের ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণে ‘সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা’ দিয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডটি বলেছে, ডব্লুসিএল আয়োজকেরা নির্দিষ্ট একটি জাতীয়তাবাদী বয়ানে চালিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট।

গতকাল শেষ হওয়া ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নস অব লিজেন্ডসে রানার্সআপ হয়েছে শহীদ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিকদের নিয়ে গঠিত পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নস। এই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালসহ দুটি ম্যাচে ভারতের দল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে রাজি হয়নি।

পিসিবি ডব্লুসিএলে নিষেধাজ্ঞার কারণ জানাতে গিয়ে আয়োজকদের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে ভারত খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর পর দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। ম্যাচ বর্জনকারী দলকে পয়েন্ট দেওয়ার বিষয়টিকে ‘ভণ্ডামি ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছে পিসিবি।

শনিবার বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক শেষে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জানানো বিবৃতিতে পিসিবি আয়োজকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিবেচনা ও বাণিজ্যিক স্বার্থে টুর্নামেন্টে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ এনেছে।

ভারতের শিখর ধাওয়ান, হরভজন সিং, ইউসুফ পাঠান, সুরেশ রায়নাসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জন করার পর ‘ম্যাচ বাতিলে’র ঘোষণা দিয়েছিল আয়োজকেরা। ভারতের যেসব সমর্থক পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা নিয়ে আহত হয়েছিলেন, তাঁদের ইঙ্গিত করে ডব্লুসিএল ‘অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার’ জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছিল।

এ বিষয়ে পিসিবির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘“অনুভূতিতে আঘাতের” জন্য ডব্লুসিএলের ক্ষমাপ্রার্থনা যদিও হাস্যকর, তবে এর মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে এটাও স্বীকার করা হয় যে এই বাতিলের পেছনে ক্রিকেটীয় মেধা নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট জাতীয়তাবাদী বয়ানের কাছে নতি স্বীকার করা হয়েছে। সংবেদনশীলতার ছদ্মবেশে আসা এই পক্ষপাত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সম্প্রদায়ের কাছে একটি অগ্রহণযোগ্য বার্তা পাঠায়।’

বিবৃতিতে পিসিবির তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে লিখেছে, ‘আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের এমন কোনো ইভেন্টে অংশ নিতে দেব না, যেখানে খেলার চেতনা বিকৃত রাজনীতির আড়ালে চলে যায়, যা ক্রীড়ানৈতিকতা ও ভদ্রলোকের খেলার মৌলিক ভাবধারাকে ক্ষুণ্ন করে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রায় প্রতিবছরই এক বা একাধিক টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়ে থাকে। এসব প্রতিযোগিতার আয়োজক ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে পাকিস্তান ও ভারতের পাশাপাশি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের নিয়ে গত ১৮ জুলাই যে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নস অব লিজেন্ডস শুরু হয়, সেটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হারশিত তোমার।

ভারতের সংগীতাঙ্গনে কাজ করা তোমার একজন র‍্যাপার হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালে তিনি প্রথমবার ডব্লুসিএল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন। এই টুর্নামেন্টের আরেক মালিক বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস

সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে দেশটির এল–ফাশের শহরের পতনের পর সেখানকার বাসিন্দারা ‘চরম বিপদের’ মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা শহরটিতে আটকা পড়েছেন। গতকাল শনিবার ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফের লড়াই চলছে। গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশের দখল করে নেয় আধা সামরিক বাহিনীটি। শহরটির পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনসুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে২২ ঘণ্টা আগে

এল–ফাশের শহর থেকে যাঁরা পালিয়ে কাছের তাউইলা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা চালানোর কথা বলেছেন। তাঁদের ভাষ্য, এল–ফাশেরে মা–বাবার সামনে সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে। মানুষজন শহরটি থেকে পালানোর সময় তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে, ২৬ অক্টোবর থেকে ‍৬৫ হাজারের বেশি মানুষ শহরটি থেকে পালিয়েছেন।

শনিবার ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, এল–ফাশেরের বিপুল মানুষ ‘চরম বিপদের’ মধ্যে রয়েছে। তাদের শহরটি ত্যাগ করতে দিচ্ছে না আরএসএফ ও তাদের সহযোগীরা। সংস্থাটির জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল ওলিভিয়ার লাচেরিটে বলেন, এল–ফাশের থেকে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা কোথায়? সম্ভাব্য উত্তরটা হলো—তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরএসএফের হামলায় এল–ফাশেরে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুই হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, এল–ফাশেরে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

সুদান ‘মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মধ্যে রয়েছে বলে শনিবার উল্লেখ করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়েডফুল। বাহরাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আরএসএফ। এরপরও এমন নৃশংসতার জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। একই সংবাদ সম্মেলনে সুদানের পরিস্থিতি ‘ভয়ংকর’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার।

আরও পড়ুনসুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ