সোনারগাঁয়ে ৬ ডাকাত গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার
Published: 11th, August 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পৃথক অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ ছয়জন ডাকাত ও বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করেছে র্যাব-১১।
রবিবার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই রোধকল্পে সোনারগাঁয়ে উপজেলার পাঁচকানির কান্দি এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জে র্যাব-১১ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান অধিনায়ক লে.
আরো পড়ুন:
কুবির নজরুল হল থেকে গুলি ও গাঁজা উদ্ধার
কালীগঞ্জে তরুণদের হাতে মাদক ব্যবসায়ী আটক
অভিযান চলাকালে ছয়জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, ছুরি, সুইচ গিয়ার ও দা জব্দ কর হয়। এছাড়া পিরোজপুরের বটতলা থেকে ১০১ কেজি গাঁজাসহ একটি মিনি ট্রাক জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যরা হলেন, মফিজুল ইসলাম ওরফে জামিল বাবু, সাইফুল ইসলাম ওরফে সাকিব,মানিক, সাদ্দাম, সহিদ ও মনির হোসেন।
লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ব্রিজের টোল প্লাজার অভিমুখে যানজটে বা কৃত্রিমভাবে যানজট সৃষ্টি করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়িতে আক্রমণ করে মোবাইল, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছয়জনকে আটক করলে তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, পিরোজপুর বটতলা এলাকা থেকে ১০১ কেজি গাঁজাসহ একটি মিনি ট্রাক জব্দ করা হয়। তবে এর সঙ্গে জড়িতদের আটক করা সম্ভব হয়নি, পালিয়ে যায় আসামীরা। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/অনিক/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মাছ ধরতে গিয়ে ৫ জেলায় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু, বসতবাড়িতে আগুন
সকালে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে মাছ ধরতে বিলে নেমেছিলেন মিজানুর রহমান (৩৫)। আশা ছিল ঘরে ফিরবেন টাটকা মাছ নিয়ে। কিন্তু মাছ ধরতে যাওয়ার পর হঠাৎ শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি ও বজ্রপাত। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। আজ বুধবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের জ্যোতিডাঙ্গা বিলে এ ঘটনা ঘটে।
মিজানুর রহমানের মতো গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত যশোরের কেশবপুর, রাজশাহীর বাগমারা, যশোর সদর, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও নোয়াখালী সদরে বজ্রপাতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সবাই মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান। এ ছাড়া গতকাল বিকেলে কুমিল্লার তিতাসে বজ্রপাতে একটি বসতবাড়ি পুড়ে গেছে।
মৃত মিজানুর রহমানের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার কেশবপুর গ্রামে। তিনি কখনো অটো চালাতেন, কখনো কৃষিকাজ করতেন। স্থানীয় লোকজন জানান, সকালে বজ্রপাতের শব্দে সবাই আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর খবর ছড়িয়ে পড়ে জ্যোতিডাঙ্গা বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে একজন মারা গেছেন। দৌড়ে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান, মিজানুরের নিথর দেহ পড়ে আছে।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে।
এদিকে যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছি গ্রামে বজ্রপাতে আজ সকালে আবদুল হাকিম সরদার (৬৫) নামের বিএনপির এক নেতা মারা গেছেন। তিনি উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা এবং বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সকাল আটটার দিকে আবদুল হাকিম গাইদগাছি গ্রামের একটি মৎস্য খামারে যান। তখন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত খান বলেন, সকালে ঘেরে মাছ শিকার করতে গিয়ে বজ্রপাতে ওই ব্যক্তি মারা যান।
একই জেলার কেশবপুরে মাছের ঘেরে কাজ করার সময় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বজ্রপাতে শামীম হোসেন (২৫) নামের এক কৃষিশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাগরদত্তকাটি গ্রামের কেরামত গাজীর মাছের ঘেরে কাজ করছিলেন বেলোকাটি গ্রামের শামীম হোসেন। এ সময় প্রবল বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘেরের অন্য কর্মচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, শামীমকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের ধারণা, বজ্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে রাজশাহীর বাগমারায় আজ সকালে খালে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে ফজেল আলী (৩৯) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার দানগাছি গ্রামে। স্বজনেরা জানান, সকালে ফজেল আলী জাল নিয়ে বাড়ির পাশের বদ্দির খালে মাছ ধরতে যান। এ সময় টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। সকাল সাতটার দিকে বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি খালপাড়ে ফজেল আলীকে পড়ে থাকতে দেখেন।
নোয়াখালী সদর উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মো. সাঈদ হোসেন (২৯) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পেশায় তিনি দিনমজুর ছিলেন। গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরমটুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সাঈদের বাড়ি পূর্ব চরমটুয়া গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাফর আহমেদ বলেন, গতকাল রাতে হালকা বৃষ্টির মধ্যে থেমে থেমে বজ্রপাত হচ্ছিল। তখন বাড়ির পাশে ধানখেতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু রাতে আর বাড়িতে ফেরেননি। আজ সকালে প্রতিবেশীরা ধানখেতে লাশ পড়ে থাকায় ধারণা করেন, তিনি বজ্রপাতে মারা গেছেন।
জানতে চাইলে সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি লোকমুখে ঘটনাটি শুনেছেন।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বজ্রপাতে সমীর বাড়ৈ (৩৫) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাতে উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাঁর বাড়ি ওই গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সমীর বাড়ৈ গতকাল রাতে বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশের বিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। রাতে বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন সকালে খুঁজতে বের হয়। বিলের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই সমীর বাড়ৈর মৃত্যু হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে, বজ্রপাতে তিনি মারা গেছেন।
বজ্রপাতে পুড়ল বসতবাড়িকুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামে বজ্রপাতে স্থানীয় মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক এরশাদ হোসাইন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে আশপাশের কয়েকটি বসতঘর রক্ষা পায়। পরিবারের সদস্যরা প্রাণে বাঁচলেও ঘরের কোনো জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারেননি।
তিতাস থানার ওসি মো. খালেদ সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তিতাস থানা-পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করে। অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ সবকিছু পড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও নোয়াখালী এবং প্রতিনিধি, তারাগঞ্জ, রংপুর; দাউদকান্দি, কুমিল্লা; বাগমারা, রাজশাহী; কেশবপুর, যশোর; গোপালগঞ্জ ও যশোর অফিস]