বরফের ভেতর জমা ছিলো লাশ। এক বা দুই দিন নয়, এক বা দুই বছরও নয়— ৬৫ বছর ধরে বরফের ভেতর ছিলো ২৫ বছর বয়সী এক তরুণের লাশ। বরফ গলা শুরু হলে ওই লাশ বেরিয়ে আসে। ঘটনাটি ঘটেছে অ্যান্টার্কটিকায়।

১৯৫৯ সালে অ্যান্টার্কটিকায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা যান ব্রিটিশ নাগরিক ডেনিস বেল। জানুয়ারিতে একটি পোলিশ টিম অ্যান্টার্কটিক অভিযানে যায় এবং তার লাশ দেখতে পায়।  লাশের সঙ্গে ছিলো একটি হাতঘড়ি, একটি রেডিও এবং একটি পাইপ।

ডেনিস বেল-এর বয়স তখন ২৫ বছর। ওই বয়সে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপ সংস্থায় কাজ করার সুবাদে অ্যান্টার্কটিকায় গিয়েছিলেন তিনি। জরিপ করার সময় একটি ফাটলের মধ্যে পড়ে যান তিনি। এরপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরিবার এই দুর্ঘটনার কথা জেনেছিলো এবং একটা পর্যায়ে তারা ডেনিসের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টাও ছেড়ে দেয়।

এই তরুণের ভাই ডেভিড বলেন, ‘‘আমি অনেক আগেই আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তার লাশ পাওয়ার ঘটনা অসাধারণ, আশ্চর্যজনক।’’

১৯৫৯ সালের জুলাই মাসে একটি টেলিগ্রামের মাধ্যমে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন ডেভিড। তিনি বলেন, ‘‘শৈশবে ডেনিস ছিলো আমার অসাধারণ সঙ্গী। ও খুব মজার মানুষ ছিলো। ও যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক, ওর আত্মা শান্তি পাক।’’

ডেভিড তার মৃত ভাই সম্পর্কে আরও বলেন, ‘‘আমি তার পোশাকের ধরণ মনে করতে পারি। সে সবসময় ডাফেল কোট পরত। সে ছিল একজন সাধারণ ধরণের মানুষ যে জীবন উপভোগ করত।’’

এত বছর পর প্রকৃতিই ফিরিয়ে দিল সেদিনের সেই হারিয়ে যাওয়া যুবককে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে ঢুকেছি: শেষ জাহাজ আটকের আগে ভিডিও বার্তায় শহিদুল

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র কাছ থেকে আলাদা অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। আজ শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেছেন।

তবে শহিদুল আলমের এই ভিডিওবার্তা ফেসবুকে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আজ সুমুদ ফ্লোটিলা’র সর্বশেষ জাহাজও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাহাজ আটক হওয়ার আগে গাজামুখী নৌযান থেকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, ‘আজ ৩ অক্টোবর ২০২৫। দেখতেই পাচ্ছেন, ঝকঝকা রোদ। আজ আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে এসেছি। সুমুদ ফ্লোটিলায় যারা গিয়েছিলেন, তাঁরা ভিন্নভাবে গিয়েছিলেন। আমরা আলাদাভাবে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে, ওদের ওপর কিছু হলেও আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। জানতে পেরেছি, ইসরায়েল তাদের (সুমুদ ফ্লোটিলা) সব জাহাজ আটক করেছে।’

অনেক বড় জাহাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে শহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। আমাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা পাড়ি দিয়েছিল। তারা আমাদের একটু আগে পাড়ি দিয়েছিল। আমরাসহ এই মুহুর্তে এই নয়টি যানবাহন মুক্ত আছে। আমরা আজকে ফিলিস্তিনি টাইম জোনে এসেছি। এখনো দূরত্ব আছে। তবে আজ আমরা এই আটটি ছোট নৌকাকে পার হয়ে যাব। এরপর থেকে আমাদের এই জাহাজটিই সবচেয়ে আগে থাকবে। এতে বোঝাই যাচ্ছে, আক্রোশটা আমাদের ওপরই পড়বে। কিন্তু আমরা একেবারেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা একেবারেই গাজা পর্যন্ত যাব এবং কোনো বাধাই গ্রহণ করব না।’

ত্রাণ নয়, অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে গাজার দিকে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন শহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘এটা বলা প্রয়োজন, সুমুদ ফ্লোটিলায় যে নৌকাগুলো ছিল, তাদের কিন্তু দায়িত্ব ছিল ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার। আমরা কিন্তু ত্রাণের জন্য যাচ্ছি না। আমরা একটা অবৈধ অবরোধকে ভাঙব, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছি।’

শহিদুল আলম বলেন, ‘এই নৌকাতে অনেক সাংবাদিক আছেন, চিকিৎসক আছেন। সঙ্গে অন্য কর্মীরাও আছেন। কিন্তু আমরা ত্রাণ দেওয়ার অজুহাতে যাচ্ছি তা না। আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি, ফিলিস্তিনে আমাদের থাকার–যাওয়ার অধিকার আছে। ইসরায়েল যত মানুষ খুন করেছে এবং যত সাংবাদিক ও যত চিকিৎসক খুন করেছে, সেটার প্রতিবাদ আমরা জানাব।’

শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘গত রাতেই মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএএফ) ১৪ জন চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে। আমরা দেখব, ফ্রান্স সেটার ক্ষেত্রে কী করে। এ পর্যন্ত তারা তেমন কিছুই করেনি, মিষ্টি কথা বলা ছাড়া। এখন কথার সময় পেরিয়ে গেছে। এখন লড়াইয়ের সময়, এখন কাজ করার সময়। আমরা সেটাই করছি নাগরিক হিসেবে।’

বাংলাদেশি এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা করতে পারি, যেহেতু এই দেশগুলোর নেতা–নেত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সে ক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটাই আমরা করতে চাইব। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের অনুপ্রেরণা।’

শহিদুল আলম বলেন, ‘যেমনটা দেখা যাচ্ছে, আজ সকালে সমুদ্র বেশ শান্ত। এটা অপ্রত্যাশিত, কারণ মুহূর্তের মধ্যেই এটা বদলে যেতে পারে। গতকাল খুব খারাপ অবস্থা ছিল। আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন পুরো চাঙা, লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’

‘আমরা জয়ী হব, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’ জানিয়ে ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, তাঁদের জাহাজে ৯৬ জন মানুষ আছেন। এরঁ মধ্যে ৮২ জন গণমাধ্যম  ও চিকিৎসা পেশাজীবী। এ ছাড়া আয়োজক, ফ্লোটিলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ও জাহাজের ক্রুরা আছেন।

আরও পড়ুনফ্লোটিলা আটক আন্তর্জাতিক ‘জলদস্যুতা’, বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: দেখুন ছবিতে২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ