মালয়েশিয়ার দায়রা আদালতে দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজনের নাম মো. মামুন আলী (৩১)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সাহিফুল্লা ইসলাম’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) সমর্থন দিয়েছেন।

মামুন আলীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৩০জে(১)(এ) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।

অভিযুক্ত আরেকজনের নাম রিফাত বিশাত (২৭)। তিনি চলতি বছরের ১০ জুলাই বিকেল প্রায় ৪টা ৩০ মিনিটে লারকিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এলাকার একটি বাড়িতে অনর এক্স৬এ মুঠোফোনে আইএসের পতাকার একটি ছবি রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।

দণ্ডবিধির ১৩০জেবি(১)(এ) ধারায় আনা এই অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে রিফাতের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা এবং সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারক দাতো আহমাদ কামাল আরিফিন ইসমাইলের সামনে দুজনকে হাজির করা হয়। দোভাষী নিয়োগের জন্য আদালত মামলার শুনানির তারিখ আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন।

আদালতে প্রথম মামলায় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মরিয়াম জামিলাহ আব মানাফ এবং দ্বিতীয় মামলায় ছিলেন নুর আইনা রিদজওয়ান।

আদালতে কোনো আইনজীবী অভিযুক্ত দুজনের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেননি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়াল, ডিসেম্বরে দাম বাড়ে কেন

পেঁয়াজের দামের ঝাঁজ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। রাজধানীর বাজারে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

নতুন আগাম পেঁয়াজ এখনো বাজারে আসতে শুরু করেনি। অন্যদিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি মেলেনি। তাই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে দোকানিরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, উত্তরার হজ ক্যাম্প বিভিন্ন বাজার ঘুরে পেঁয়াজের বাড়তি দামের খবর পাওয়া গেছে।

আজ দুপুরে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাবনার ভালো মানের পুরোনো পেঁয়াজ এক পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। খুচরা কিনলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১৬০ টাকা। তবে ১৪০ টাকা দরেও পেঁয়াজ মিলছে।

কারওয়ান বাজারে দু-একটি দোকানে আগাম পেঁয়াজ এসেছে। প্রতি কেজির দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা নীরব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম পড়ে যাবে। প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাবে। তিনি জানান, এ সময়ে প্রতিবছরই পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। তাই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি।

মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট ও উত্তরার হজ ক্যাম্প বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানান, তাঁদের এক কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কেনা পড়ছে ১৪০-১৪৮ টাকা।

পাবনায় দাম কত

দেশে পেঁয়াজের অন্যতম বড় পাইকারি বিক্রির স্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী বাজার। এই বাজারের পেঁয়াজের আড়তদার রাজা হোসেন জানান, সরবরাহের সংকটের কারণে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়।

শুক্রবার বোয়ালমারী বাজারে পাইকারিতে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকায় (প্রতি কেজি ১১২-১১৫ টাকা) বিক্রি হয়েছে। অথচ বুধবার ওই বাজারে পেঁয়াজের মণ ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

রাজা হোসেন বলেন, মূলত শুক্রবারে হঠাৎ করে স্থানীয় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যায়। এ কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গিয়েছিল। অবশ্য সরবরাহ বাড়ায় আজ শনিবার সাঁথিয়ার বাজারে পেঁয়াজের দাম আবার কমে সাড়ে ৩ হাজার হয়েছে।

এদিকে ১০-১৫ দিন পর থেকে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দাম বেশি দেখে অনেক কৃষক জমিতে থাকা অপুষ্ট মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনেছেন। এসব পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় সরবরাহ বেড়েছে। এটিও পুরোনো পেঁয়াজের দাম কমার আরেকটি কারণ।

নভেম্বর-ডিসেম্বর কেন দাম বাড়ে

প্রতিবছর কেন নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, তা নিয়ে পর্যালোচনা তৈরি করেছে ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির মতে, চার কারণে প্রতিবছর পেঁয়াজের দাম বাড়ে। প্রথমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য; দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব; তৃতীয়ত, মৌসুমের শেষ পর্যায়; চতুর্থত, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি।

পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব

পেঁয়াজ সংরক্ষণের মৌসুম হলো জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। সরকারি সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষকেরা নিজেরাই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকেন। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারিভাবে সংরক্ষণের অভাবকে চিহ্নিত করেছে ট্যারিফ কমিশন।

মৌসুমের শেষ পর্যায়

নভেম্বর ও ডিসেম্বর হলো পেঁয়াজের মৌসুমের শেষ পর্যায়। এ সময়ে কৃষকের ঘরে মজুত কম থাকে। সে কারণেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য

কৃষকের কাছ থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের একাধিকবার হাত বদল হয়। প্রতি ধাপে মুনাফা করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। প্রতিটি ধাপেই মধ্যস্বত্বভোগীরা তাঁদের নির্ধারিত মুনাফায় পেঁয়াজ বিক্রি করে থাকেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার কারণেও মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়ে।

বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট

পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, এমন জেলা যেমন পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মেহেরপুরসহ একাধিক জেলায় গত মাসে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ আগাম পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এটাও বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ