মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ড।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলে এই অভিযান। র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

আরো পড়ুন:

যৌতুক মামলায় স্বামী ‘খালাস পাওয়ায়’ আদালত ভবনে দুজনকে কোপালেন স্ত্রী

আদালতের বারান্দায় স্বামীকে ছুরিকাঘাত, স্ত্রী আটক

পুলিশ সূত্র জানায়, গত সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে জামালপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে গজারিয়া থানা ও নৌ-পুলিশের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় নদীতে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চার-পাঁচটি স্পিডবোট ও ট্রলারে করে চাঁদপুর জেলার বেলতলী বাজার লঞ্চঘাটের কাছাকাছি চলে যায় জলদস্যুরা। পরবর্তীতে বেলতলী ঘাট থেকে ৫০-৬০ জন জলদস্যু পুলিশের স্পিডবোট লক্ষ্য করে প্রথমে ককটেল নিক্ষেপ ও পরে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টাগুলি চালায়। এ সময় জলদস্যুরা পালিয়ে যায়।

গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‍“অভিযানে পুলিশ, র‍্যাব, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড মিলিয়ে মোট দুই শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য অংশ নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”

ঢাকা/রতন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য ন

এছাড়াও পড়ুন:

অপহৃত হওয়া জেলেরা কি ফিরবেন না পরিবারের কাছে

তখন করোনার কাল। কুড়িগ্রাম জেলার ২৬ জন জেলে তাঁদের কাজের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভারত থেকে বাংলাদেশের পথে রওনা দেন। কিন্তু করোনার কারণে হঠাৎ বিধিনিষেধ আসে। তাঁরা রাস্তায় আটকা পড়েন। তবু ঝুঁকি নিয়ে কয়েক দিন পর আবার বের হন। আসাম পুলিশ তাঁদের আটকায়।

মানববন্ধন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের শরণাপন্ন হয়ে ছাড়িয়ে আনতে আনতে একজন জেলখানায় মারা যান। এরপর বাকিরা বাংলাদেশে ফিরতে পারেন। কিছুদিন আগে সাতজন জেলে ভারতের মেঘালয়ে আটকা পড়েন। তাঁরা এখন ভারতের জেলে। ভারতের আদালত কী রায় দিয়েছেন জানি না। পরিবারগুলোর কান্না থামছে না। এটা গেল চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রপারের জেলেপাড়ার ঘটনা।

আগে বঙ্গোপসাগরের ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর প্রায়ই পত্রিকায় আসত। ভারতীয় কোস্টগার্ডও ধরে, ভারতীয় জলদস্যুরাও ধরে। এগুলো ‘ডাল-ভাত ব্যাপার’। ভারত বড় শক্তি। তারা স্থলে মারবে, পানিতে মারবে—এটাই নিয়তি। দয়া করে লাশ ফেরত দিলে তাতেই আমরা খুশি।

দুই.

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ দৈনিক ইত্তেফাক–এর খবর থেকে জানা যায়, ৪০ জেলেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি, উদ্ধার হননি আগের ৮১ জনও। কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের অদূরে সাগর থেকে মাছ ধরার পাঁচটি ট্রলারসহ ৪০ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। পাঁচটি ট্রলারের মধ্যে তিনটি টেকনাফ পৌর এলাকার, অন্য দুটির মালিক শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, জেলেদের উদ্ধারে কাজ চলছে। এ বিষয়ে বোট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলেও জানান সাজেদ আহমেদ।

কিন্তু বিজিবি, কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা দেশবাসী জানে না। শুধু জানা যাচ্ছে, জেলেরা এখনো উদ্ধার হয়নি। পরিবার–স্বজনদের অপেক্ষা বাড়ছে।

তিন.

১৫১৭ সালের কথা। পর্তুগিজরা বাংলার উপকূলে আসে। প্রথম দিকে এরা বাণিজ্য করলেও ধীরে ধীরে দস্যুতা, অপহরণ ও দাস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

হুগলি, চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন থেকে শুরু করে নোয়াখালী থেকে বরিশাল পর্যন্ত উপকূল এদের ডাকাতির শিকার হয়। গ্রামের পর গ্রাম আক্রমণ করে নারী, শিশু ও পুরুষদের ধরে নিয়ে যেত এবং দাস হিসেবে বিক্রি করত। এদের নিয়ে যেত পর্তুগিজ উপনিবেশে (গোয়া, মালাক্কা), এমনকি ইউরোপ পর্যন্ত। আর মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে আসা মগ জলদস্যুরা ডাকাতি চালাত বাংলার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, সীতাকুণ্ড ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের মানুষদের তুলে নিয়ে যেত। বিক্রি করা হতো আরাকানের রাজধানী ম্রাউক উ এবং চট্টগ্রামের কাছে দাসের হাটে।

ফরাসি পর্যটক সেজার ফ্রেডেরিক লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে দস্যুর হাতে ধরা পড়লে মুক্তি নেই, তারা মানুষ ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে।’ ডাচ পর্যটক ভ্যান ডেন ব্রুক ১৭ শতকে আরাকানিদের দাস ব্যবসার বর্ণনা দিয়েছেন। এই সময়কালে বাংলার উপকূল থেকে অপহৃত মানুষের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে কিছু জায়গা জনশূন্য হয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে যায়। গ্রামবাসীরা ভয়ে চলে যায় উপকূল ছেড়ে ভেতরের দিকে।

মোগল শাসকেরা জানতেন, তাঁদের সমৃদ্ধি এই জেলে, কৃষক ও কারিগরদের ওপর নির্ভরশীল। শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৬ সালে এই পর্তুগিজ ও মগদের দমন করেন। এখন কে করবেন দমন?

চার.

মিয়ানমার গৃহযুদ্ধে জেরবার। আগে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরা মাঝেমধ্যে বাহাদুরি দেখাতেন, আমরা নিরীহ বাঙাল হিসেবে মেনে নিতাম। ইদানীং তাঁদের তাড়িয়ে আরাকানের দখল নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। তারা আমাদের জেলেদের সেন্ট মার্টিনে যেতে দেয় না, মাছ ধরতে দেয় না। প্রতি সপ্তাহে জেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার টেরই পায় না।

উজানের ব্রহ্মপুত্র থেকে ভাটির সমুদ্র—সর্বত্রই জেলেদের জীবন কচুপাতার মতো টলমল। তাঁদের শ্রম ছাড়া আমাদের পাতে মাছ ওঠে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলেদের নৌকাই ছিল আমাদের ভরসা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গেছেন, তাঁদের ‘পল্লীতে ঈশ্বর থাকেন না’। রাষ্ট্র থেকে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর হলো বাংলাদেশের সদর দরজা; কিন্তু সেই সাগরেই আমাদের জেলেদের নিরাপত্তা নেই।

নাহিদ হাসান লেখক ও সংগঠক

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপহৃত হওয়া জেলেরা কি ফিরবেন না পরিবারের কাছে