জাকসু নির্বাচন: গ্রুপিংয়ের অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা ছাত্রদল নেত্রীর
Published: 28th, August 2025 GMT
অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, লেজুড়বৃত্তি ও স্বজনপ্রীতির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
এমনই অভিযোগ তুলে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
জাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা
জাকসু নির্বাচন: ডোপ টেস্টের দাবিতে আমরণ অনশনে সর্বকনিষ্ঠ ভিপি প্রার্থী
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জুলাই শহীদদের স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য-২৪’ এর সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। ফারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
অনন্যা ফারিয়ার দাবি, শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তাকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করা হয়নি। এ কারণে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অনন্যা ফারিয়া বলেন, “জাকসুতে প্রতিনিধিত্বের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—কোনো শিক্ষার্থীর অধিকার যাতে ক্ষুণ্ন না হয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কোনো প্যানেল থেকে অংশ নিলে নিজের নৈতিকতার জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যেত। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমার উপলব্ধি হয়েছে, নতুন দিনের রাজনীতি হতে হবে লেজুড়বৃত্তি ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার জন্য নিবেদিত।”
তিনি বলেন, “আমি প্রথমে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু যে প্যানেল শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারছে না, বরং ‘কে কার ম্যান’ এই গ্রুপিংয়ের মধ্যে ব্যস্ত, সেখানে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা সম্ভব নয়। তাই নৈতিকতার জায়গা থেকে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থিতা বেছে নিয়েছি।”
অন্যন্যা ফারিয়া জানান, তাকে ছাত্রদল থেকে জিএস ও এজিএস পদে মনোনয়ন ফরম তুলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসভিত্তিক গ্রুপিংয়ের কারণে প্যানেল শিক্ষার্থীবান্ধব হতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর ও জুলাইয়ের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, সংঘবদ্ধ প্রতারণা ও দলকে জিম্মি করার বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করছি। তাই আসন্ন জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে স্বতন্ত্র দাঁড়াচ্ছি।”
ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ফারিয়া পোস্টে উল্লেখ করেন, “আমি ভেবেছিলাম, যে দল একাত্তর ও চব্বিশের চেতনাকে ধারণ করে, তারা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনীতিতে এসে সিন্ডিকেট ও লেজুড়বৃত্তির কাছে হার মানবে না। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংগঠনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। যে প্যানেলের সূচনাই প্রতারণার রাজনীতি দিয়ে, ভোট দেওয়ার আগে ক্যাম্পাসের সবার জানা উচিত।”
তিনি আরো বলেন, “চব্বিশের রিফর্মেশন রাজনীতি পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু মেধার মূল্যায়ন ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনা উপেক্ষা করা হচ্ছে। তারেক রহমান ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ বললেও বাস্তবে ছাত্রদলের ভেতরে সিন্ডিকেট সেই জনমতকে পায়ে পিষে ফেলেছে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “জাকসুতে নির্বাচিত হলে কোনো শিক্ষার্থী যেন কোনো গোষ্ঠীর খেলার গুটি না হয় এবং কোনো সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করতে বাধ্য না হয়, সে বিষয়ে কাজ করব। আমরা যে কাঁচ ভেঙেছি জুলাইয়ে, সেই চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল স বতন ত র প র র থ ছ ত রদল র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।
এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।
এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।
‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।
এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।
তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমিনেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।
হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।
শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স