বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে থাকা গ্রহাণু বলয় থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। মহাকর্ষীয় শক্তি ও ঘন ঘন সংঘর্ষের কারণে এই মহাজাগতিক অঞ্চলটি ছোট হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন উরুগুয়ের ইউনিভার্সিড্যাড দে লা রিপাবলিকার জুলিয়ো ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। এই ক্ষয় পৃথিবীর অতীত ও ভবিষ্যতের উল্কাপিণ্ডের আঘাতের ঝুঁকির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানের গ্রহাণু বলয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার উপাদান হারাচ্ছে। ৪৬০ কোটি বছর আগে সৌরজগতের জন্মের সময় এই অঞ্চলে একটি গ্রহ তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও, তা হয়নি। মূলত বৃহস্পতি গ্রহের শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতি গ্রহ মহাজাগতিক বস্তুকে একত্র হওয়ার সুযোগ না দিয়ে উল্টো সংঘর্ষ ঘটিয়ে সেগুলোকে ভেঙে ফেলে।

বর্তমানে এই গ্রহাণু বলয়ে চাঁদের ভরের মাত্র প্রায় ৩ শতাংশ উপাদান অবশিষ্ট আছে। বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে এসব উপাদান। বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গল গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে এই মহাজাগতিক শিলার কক্ষপথ ক্রমেই প্রভাবিত হচ্ছে। কিছু শিলা সৌরজগতের ভেতরের দিকে থাকা পৃথিবীর কক্ষপথের কাছে চলে আসছে। আবার কিছু শিলা বৃহস্পতির দিকে ছিটকে যাচ্ছে। কিছু শিলা সংঘর্ষের ফলে ধুলায় পরিণত হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বলয়টি প্রতিবছর প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ৮৮ শতাংশ হারে ছোট হচ্ছে। এই হিসাব শুধু বলয়ের সেই অংশের জন্য, যেখানে এখনো সংঘর্ষ ঘটছে। এই হার ছোট মনে হলেও শত শত কোটি বছর ধরে এর বিশাল প্রভাব তৈরি হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া উপাদানের প্রায় ২০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত বড় খণ্ড হিসেবে ছিটকে যায়। সেসব বড় খণ্ডকে আমরা কখনো কখনো পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে দেখি উল্কাপিণ্ড হিসেবে। অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ সূক্ষ্ম ধুলায় পরিণত হয়। সেই ধুলার কারণে সূর্যাস্তের পরে বা সূর্যোদয়ের আগে আমাদের পৃথিবীর আকাশে এক ক্ষীণ আভা সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনসৌরজগতের শেষ সীমানায় কী আছে১১ আগস্ট ২০২৫

গ্রহাণু বলয়কে আমাদের সৌরজগতের একটি স্থায়ী অংশ মনে হলেও নতুন গবেষণা বলছে, এটি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই গবেষণায় সেরেস, ভেস্টা ও প্যালাসের মতো বড় ও স্থিতিশীল গ্রহাণুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলয় এলাকার চলমান ক্ষয়ের প্রক্রিয়া বোঝার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অতীত ইতিহাস নিয়ে আরও ভালোভাবে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

আরও পড়ুনপৃথিবী কি সত্যিই সৌরজগৎ থেকে বেরিয়ে যাবে২৩ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স রজগত র গ রহ র গ রহ ণ স ঘর ষ উপ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে লুকিয়ে আছে জীবনের রহস্য

নাসার ওসিরিস-রেক্স মিশন বেন্নু গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে। সেই নমুনাতে জীবনের বিল্ডিং ব্লক বা মূল উপাদান শনাক্ত করেছেন জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়োশিহিরো ফুরুকাওয়ার নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বেন্নু গ্রহাণুর নমুনা বিশ্লেষণ করে রাইবোজ ও গ্লুকোজের উপাদানের পাশাপাশি নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ পলিমারের সন্ধান মিলেছে। এ ছাড়া সুপারনোভা ধূলিকণার উচ্চ ঘনত্বের গঠন পরিবেশ ও আমাদের প্রাথমিক সৌরজগতের বিভিন্ন প্রিসোলার পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে গ্রহাণুটিতে, যা আদিম জীবনের রাসায়নিক উৎস সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে।

নাসার ওসিরিস-রেক্স মিশন বেন্নু গ্রহাণুর অক্ষত নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে। সেই নমুনা বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক সৌরজগৎ ও জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির নমুনা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন। বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে থাকা আণুবীক্ষণিক কণা আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশীকে রূপদানকারী প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সরবরাহ করছে। এসব উপাদান জীবনের উত্থানে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

নেচার জিওসায়েন্সেস ও নেচার অ্যাস্ট্রোনমি সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে ডিওক্সিরাইবোজ শনাক্ত করা যায়নি। এটি ইঙ্গিত করে প্রাথমিক সৌরজগতে রাইবোজ আরও বেশি প্রচলিত ছিল, যা আরএনএ ওয়ার্ল্ড ধারণাকে সমর্থন করে। ফলে জীবনের প্রথম অণু তথ্য সংরক্ষণ ও জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়া উভয়ের জন্যই আরএনএর ওপর নির্ভরশীল ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে একটি অস্বাভাবিক আঠার মতো উপাদানও শনাক্ত করা হয়েছে।

মহাকাশের কোনো শিলায় আগে কখনো এ ধরনের উপাদান দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, জৈবপদার্থটি সম্ভবত বেন্নুর মূল গ্রহাণুর প্রাথমিক উত্তাপের সময় গঠিত হয়েছিল। এই প্রাচীন স্পেস গাম নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন-সমৃদ্ধ পলিমার-সদৃশ যৌগ দিয়ে গঠিত, যা একসময় নরম ও নমনীয় ছিল কিন্তু শত শত কোটি বছর ধরে শক্ত হয়ে গেছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেন্নু গ্রহাণুর নমুনাতে লুকিয়ে আছে জীবনের রহস্য