চীনের ইমিগ্রেশনে বাংলায় নির্দেশনা
Published: 16th, October 2025 GMT
চীনের গুয়াংঝুতে নেমেই চমক। তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। ইমিগ্রেশনের তরুণটির মুখে কোনো কথা নেই। কাগজ, মানে আমার পাসপোর্টই কথা বলছে। আঙুলের ছাপ দেওয়ার পালা এল, দেখি যন্ত্র বাংলায় কথা বলছে। ‘আপনার ডান হাতের চার আঙুল চেপে ধরুন…’, ‘দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি এভাবে চেপে ধরুন।’ সামনের ট্যাবে ছবি দেখা যাচ্ছে আর বাংলায় নির্দেশনা শোনা গেল। যে দেশের পাসপোর্ট, সে দেশের ভাষায় এই যন্ত্র কথা বলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
বিষয়টা বেশ ভালো লাগল। হাইটেক দেশে এসেছি, এই বোধ দিয়ে শুরুটা হলো। বিমানবন্দরে দেখা গেল ষড়্ভুজাকৃতি ছোট ছোট বাক্স। সাদা রঙের, ভেতর থেকে নীল আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। এগুলো স্লিপিং পট। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি চার্জ করার ব্যবস্থা আছে। আর সঙ্গে শুয়ে থাকার সুবিধা। স্লিপিং পটে থাকা যায় ঘণ্টা হিসাবে। গুয়াংঝু বিমানবন্দরে ১৫টির মতো স্লিপিং পট আছে—ট্রিপ অ্যাডভাইজর এমনটাই জানাল।
আমরা চীনে এসেছি স্মার্টফোন নির্মাতা অনারের আমন্ত্রণে। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার শেনজেনে তাদের প্রধান কার্যালয়, গবেষণা উন্নয়ন কেন্দ্র দেখব। গতকাল বুধবার রাতে গুয়াংঝু থেকে শেনজেন আসার পথে রাতের খাবারের জন্য আমরা একটা রেস্তোরাঁয় থামলাম। রেস্তোরাঁর বাইরে একটা বুথের মতো। সেটার থাকে থাকে সারি সারি পাওয়ার ব্যাংক। যার যখন দরকার মোবাইলের পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাবে। পরে অন্য কোনো স্টেশনে রেখে দেবে। যে সময়টুকু পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করবে, সে সময়টার জন্য ভাড়া দিতে হবে। এখানে প্রযুক্তি ও আস্থার একটা ব্যাপার চোখে পড়ে। দুই বছর যাবৎ এই পাওয়ার ব্যাংক স্ট্যান্ড চীনে চালু হয়েছে।
বিওয়াইডি গাড়ি বেশি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ রেগে যাওয়া, দরজা বন্ধ করে থাকা বা চুপচাপ থাকা—কিশোররা কেন এমন করে
কিশোর বয়স একটা সেতুর মতো। শৈশব থেকে যৌবনে, নির্ভরতা থেকে স্বাধীনতায়, সরলতা থেকে বাস্তবতায় যাওয়ার সেতু। কিন্তু এই সেতু পার হওয়া অনেক কিশোর-কিশোরীর জন্য সহজ নয়। অনেকের এ সময়টাতে নীরবতা, বিরক্তি, জেদ বা আচরণের পেছনে লুকিয়ে থাকে অজানা চাপ, দুশ্চিন্তা আর মানসিক ক্লান্তি।
কৈশোরের সমস্যাগুলো সাধারণ। এই বয়সটা জীবনের সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তনের সময়। শারীরিক বৃদ্ধি, হরমোনের পরিবর্তন, আবেগের ওঠানামা, পরিচয় খোঁজা, সামাজিক চাপ—সব মিলিয়ে এই সময়টা তাদের জন্য মানসিকভাবে নাজুক। বিশেষ করে কিশোরীরা হরমোনের পরিবর্তন, মাসিক চক্র, শরীর নিয়ে মন্তব্য, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং সম্পর্কগত সংবেদনশীলতার কারণে অতিরিক্ত চাপে পড়ে।
যেসব পরিবর্তন ঘটেইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন ওঠানামা করে। মাসিক চক্র, ব্রণ, শরীরের গঠনগত পরিবর্তন, স্তনের আকার বৃদ্ধির মতো শারীরিক পরিবর্তন কিশোরীদের মধ্যে দ্রুত প্রভাব ফেলে। তীব্র অনুভূতি, আত্মপরিচয় খোঁজা ও সম্পর্কের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার মতো আবেগগত পরিবর্তনও দেখা যায়।
এ ছাড়া আজকের কিশোর-কিশোরীদের সবচেয়ে সাধারণ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো হলো দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ, মনমরা ভাব ও হতাশা, মনোযোগের সমস্যা বা শেখার অসুবিধা, বন্ধুবান্ধবের চাপ, বুলিং, একা হয়ে পড়া, ঘুমের সমস্যা। মুঠোফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গেমিংয়ে আসক্তি তৈরি হয়। মা-বাবার সঙ্গে বারবার তর্ক ও রাগ, হঠাৎ আবেগপ্রবণ আচরণ বা একাকিত্বের মতো সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।
আরও পড়ুনঘরবাড়ি, বইখাতা সব ডুবে গেল বন্যায়১ ঘণ্টা আগেআপনজনেরা কীভাবে কিশোরীদের বুঝবেকথার অন্তর্গত অনুভূতিটা বুঝতে হবে। হঠাৎ রেগে যাওয়া, দরজা বন্ধ করে থাকা বা চুপচাপ থাকা—এর মানে তারা উদ্ধত নয়। তারা হয়তো বিপদে বা সমস্যায় আছে। কথোপকথনের দরজা খোলা রাখতে হবে। বড় লেকচার বা উপদেশ নয়; বরং ছোট, স্বাভাবিক, কোমল বন্ধুসুলভ আলাপ এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। তাদের অনুভূতিকে সম্মান দিতে হবে। তাদের সমস্যা আপনার কাছে ছোট মনে হলেও তাদের কাছে সেটা কঠিন বাস্তব। ‘তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি’ বাক্যটি আশ্চর্যভাবে কাজ করে।
কিশোর মনের পরিবর্তনগুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। হঠাৎ ফলাফল খারাপ হওয়া, রাতে না ঘুমানো, বন্ধু এড়িয়ে চলা, খুব রেগে যাওয়া—এসব সতর্কসংকেত। দোষারোপ নয়, বরং সহযোগিতা করুন। অতিরিক্ত সমালোচনা কিশোরদের দূরে ঠেলে দেয়। ধৈর্য, উষ্ণতা ও সহানুভূতি তাঁদের কাছাকাছি আনে।
আরও পড়ুন১৩০০ টাকা নিয়ে অচেনা চট্টগ্রাম শহরে পা রেখেছিলাম৩ ঘণ্টা আগেকিশোর-কিশোরীরা যা করবেসাহায্য চাওয়া দুর্বলতা নয়, বরং শক্তির নিদর্শন। নিজের ভরসার মানুষকে সমস্যা খুলে বলো। ডায়েরি লিখতে পারো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সময়মতো বিরতি নাও। খেলাধুলা বা দলবদ্ধ হয়, এমন কাজে অংশ নাও। যখন মনে হবে ‘এটা আর সামলাতে পারছি না’, তখন অবশ্যই এ ক্ষেত্রে পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে।
ডা. টুম্পা ইন্দ্রাণী ঘোষ, শিশু কিশোর মনোরোগবিদ
আরও পড়ুনমন ও মস্তিষ্কের ১২টি গোপন সত্য, আপনি কয়টা মানেন?০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫