বরিশালে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি একসঙ্গে জন্মানো পাঁচ নবজাতক
Published: 26th, November 2025 GMT
বরিশালে অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া পাঁচ নবজাতক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। জন্মের দুই মাস পর তারা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিশুদের বাবা সোহেল হাওলাদার বলেন, কয়েক দিন ধরে পর্যায়ক্রমে তাঁর সন্তানেরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গতকাল তাদের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি মুদিদোকানি। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সোহেল হাওলাদারের স্ত্রীর নাম লামিয়া আক্তার। তাঁদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের সিংহেরকাঠি গ্রামে। গত ৬ অক্টোবর বরিশাল নগরের হেমায়েত উদ্দিন ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার ছাড়াই তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম দেন লামিয়া আক্তার। তাদের নাম রাখা হয়—হাসান, হোসাইন, মোয়াছিন, হাবিবা ও উমামা। একসঙ্গে পাঁচ শিশুর জন্মের খবরটি সারা দেশে ওই সময় আলোড়ন তোলে।
জন্মের পর পাঁচ নবজাতক সুস্থ ছিল। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচজনই একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। লামিয়া আক্তার বলেন, ‘প্রতিদিন তাদের দেখভাল করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। এক কৌটা দুধ দুই দিনের বেশি চলে না। প্রতিদিন ১০টি ডায়াপার লাগে। পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমাদের স্বল্প আয়ের পরিবার। এত ব্যয় করে শিশুদের চিকিৎসা করাটা দুরূহ হয়ে পড়েছে। জানি না কীভাবে কী করব?’
সোহেল হাওলাদার বলেন, ‘বাচ্চারা যত বড় হচ্ছে, খরচও তত বাড়ছে। আমার সামান্য আয় দিয়ে তাদের ভরণপোষণই কঠিন, চিকিৎসা ব্যয় তো আরও দূরের কথা। এখন সহায়তা না পেলে চিকিৎসা করানোর মতো কোনো উপায় দেখছি না।’
এদিকে পাঁচ নবজাতক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে হাসপাতালে যান বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এ কে এম আখতারুজ্জামান তালুকদার ও সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ। তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পাঁচ শিশুর চিকিৎসা এবং তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেন।
আরও পড়ুনএকসঙ্গে জন্মানো পাঁচ সন্তান লালন–পালনের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় মা–বাবা০৯ নভেম্বর ২০২৫সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ নবজাতক জন্মের পরও আমরা পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আসলে পরিবারটি স্বল্প আয়ের হওয়ায় পাঁচ নবজাতকের ভরণ-পোষণ তাঁদের জন্য অনেকটাই অসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরপর অসুস্থ হওয়ায় তাঁদের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। আমরা পাঁচ শিশু হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে গিয়েছিলাম। শিশুদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫ দিনের দুধ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এই পরিবারটির দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা দরকার।’
সোহেল হাওলাদার জানান, পাঁচ সন্তান জন্মের পর এসএসসি ৮৪ ব্যাচের গড়া মানবিক সংগঠন ‘ইভেন্ট ৮৪ ’–এর উদ্যোগে একটি গাভিসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তবে পাঁচ ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয় বহন করা এখন তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল পর ব র জন ম র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদের উৎপত্তি নিয়ে নতুন তত্ত্ব কতটা বিশ্বাসযোগ্য
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর সোলার সিস্টেম রিসার্চের বিজ্ঞানীরা চাঁদের উৎপত্তি নিয়ে চাঞ্চল্যকর নতুন তত্ত্ব প্রস্তাব করেছেন। তাঁদের মতে, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে থেইয়া নামের মঙ্গল গ্রহ আকৃতির একটি গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের পর চাঁদের জন্ম হয়েছে। সেই সংঘর্ষে থেইয়া সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে কেবল পৃথিবীর ভূত্বক ও চাঁদের মধ্যে খনিজের চিহ্ন হিসেবেই থেইয়ার প্রমাণ দেখা যায়।
পৃথিবী ও চাঁদের খনিজের অনুপাত সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে থেইয়ার রহস্যময় উৎস উন্মোচনের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী টিমো হপ জানান, গ্রহ গঠনের জন্য সংঘর্ষ হওয়া শত শত গ্রহাণুর ভ্রূণগুলোর মধ্যে থেইয়া সম্ভবত অন্যতম ছিল। থেইয়া একসময় অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের মধ্যে একটি স্থিতিশীল কক্ষপথে ছিল। সৌরজগতের বিকাশের প্রথম ১০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর একটি লুকানো প্রতিবেশী ছিল, যা এখন সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে। যখন থেইয়ার সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়, তখন সেই আঘাতে টিকে থাকা সব উপাদান হয় পৃথিবীর মধ্যে মিশে গেছে বা চাঁদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরজগৎ যখন গঠিত হয়, তখন বিভিন্ন উপাদানের আইসোটোপ সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। তখন থেইয়া গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করেছিল। সংঘর্ষের সময় থেইয়া ও আদি-পৃথিবী একসঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের গ্রহ ও চাঁদের জন্ম হয়। এই তথ্য সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে পাওয়া শিলা ও অ্যাপোলো মিশনের মাধ্যমে চাঁদ থেকে আনা শিলাসহ বেশ কয়েকটি গ্রহাণু থেকে লোহার আইসোটোপ পরিমাপ করেছেন। দেখা গেছে, চাঁদ ও পৃথিবীর লোহার আইসোটোপের অনুপাত একই রকম আছে। থেইয়া ও আদি-পৃথিবী এত ভালোভাবে একসঙ্গে মিশে গিয়েছিল, তাদের আর আলাদা করা সম্ভব না। তবে থেইয়ার ঠিক কতটা অংশ চাঁদে ও কতটা অংশ পৃথিবীতে মিশেছিল, তা বের করা অসম্ভব। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী হপ বলেন, আইসোটোপিক গঠনের এই সাদৃশ্য থেইয়ার প্রাথমিক গঠন সরাসরি পরিমাপ করাও অসম্ভব করে তুলছে।
যদি থেইয়া সৌরজগতের শীতল বাইরের প্রান্তে গঠিত উল্কাপিণ্ডের মতো হতো, তবে আদি-পৃথিবী সম্পূর্ণ ভিন্ন আইসোটোপের মিশ্রণ ধারণ করত। থেইয়া ও আদি-পৃথিবী উভয়ই সম্ভবত সৌরজগতের অভ্যন্তরীণ অঞ্চল থেকে আসা শিলাময় অ-কার্বনেশিয়াস উল্কাপিণ্ড দিয়ে তৈরি হতে পারে। ধারণা করা হয়, থেইয়া প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছিল। এরপরে বৃহস্পতির মহাকর্ষীয় আকর্ষণ কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করে পৃথিবীর দিকে ঠেলে দেয়। এটি সূর্যের চারপাশে একটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল কক্ষপথে ছিল।
সূত্র: ডেইলি মেইল