বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এখনো নগদ লেনদেনের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। এতে ছায়া অর্থনীতির আকার যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি ঘুষ লেনদেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অর্থায়ন, হুন্ডি, এমনকি কর ফাঁকির আশঙ্কাও রয়েই যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেনব্যবস্থার দিকে। যেখানে অর্থনীতি আরও স্বচ্ছ, নিরাপদ ও খরচসাশ্রয়ী হওয়ার পথে এগোচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ রূপান্তর কেবল সময়ের দাবি নয়; বরং অর্থনৈতিক দক্ষতা ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ের উদ্যোগগুলো এদিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এই পথে চ্যালেঞ্জের শেষ নেই।

বর্তমানে নগদ টাকার ব্যবস্থাপনায় সরকারের খরচ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। শুধু টাকা ছাপানো, সরবরাহ, পুরোনো নোট ধ্বংস ও ব্যাংকের নগদ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এটি এমন এক সময়, যখন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থসংকট ক্রমে দৃশ্যমান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে আর বাজেট–ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভর করছে। সে ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের অদক্ষতা কেবল একটি প্রশাসনিক সমস্যা নয়; বরং এটি অর্থনীতির সার্বিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করছে।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এ বাস্তবতা অনুধাবন করেই ধীরে ধীরে ক্যাশলেস সমাজ গড়ে তুলেছে। সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন বা দক্ষিণ কোরিয়া—সব দেশই প্রথমে জনগণকে সুবিধা দিয়েছে, প্রণোদনা দিয়েছে, একই সঙ্গে নগদ লেনদেনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশে নগদ লেনদেনে বাড়তি চার্জ বা কর আরোপ করা হয়েছে, আবার ডিজিটাল লেনদেনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এভাবে একদিকে ব্যবসায়ী ও গ্রাহক—উভয়কেই উৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বচ্ছতা ও কর সংগ্রহে বিপ্লব ঘটেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ অভিজ্ঞতা প্রাসঙ্গিক। কারণ, আমাদের অর্থনীতিতেও বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে রয়ে গেছে, যেখানে কর রাজস্ব হারিয়ে যায়, আর অর্থের গতিপথ থাকে অদৃশ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যেভাবে ‘বাংলা কিউআর’ কোড, ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং আন্তব্যাংক ডিজিটাল লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। দেশের সাত লাখের বেশি মার্চেন্ট এখন এ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে বাংলা কিউআর চালু করেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি স্থানীয় উদ্ভাবন। এর মাধ্যমে একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড ডিজিটাল লেনদেনকাঠামো গড়ে উঠছে। ইতিমধ্যে ৪৩টি ব্যাংক, ৫টি এমএফএস ও ৩টি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার এতে যুক্ত হয়েছে। এখন চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে শহর ছাড়িয়ে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া, যেখানে এখনো নগদ টাকাই প্রধান চালিকা শক্তি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে কিউআর পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করেছে, যা বাস্তবায়নের দিক থেকে বড় এক অগ্রগতি। এর পাশাপাশি আরটিজিএস, এনপিএসবি ও বিইএফটিএন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল লেনদেন ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনের ৩০ শতাংশ আর্থিক মূল্যে এবং প্রায় ৪৯ শতাংশ ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে। এটি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক, কিন্তু নগদ টাকার সামগ্রিক চাহিদা প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা স্পষ্ট বার্তা দেয় যে এখনো আমাদের পুরো ইকোসিস্টেম ডিজিটাল নয়।

এর মূল কারণ তিনটি। প্রথমত, পাড়া-মহল্লার কেনাকাটা বা ছোট ব্যবসায় এখনো ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ সীমিত। দ্বিতীয়ত, অনেকে চাইলেও ডিজিটাল পরিশোধ করতে পারেন না। কারণ, তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত নন। নগদ টাকার প্রতি আমাদের সাংস্কৃতিক অভ্যাসও বড় প্রতিবন্ধকতা। এসব পরিবর্তন করতে হলে শুধু প্রযুক্তিগত নয়, সামাজিক রূপান্তরও জরুরি।

এ জন্য দরকার শিক্ষিত জনশক্তির পাশাপাশি জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির উদ্যোগ, যাতে তারা ডিজিটাল লেনদেনকে সহজ, নিরাপদ ও লাভজনক মনে করে। তৃতীয়ত, গ্রাহকেরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, ছোট দোকানগুলোতে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের সময় ১ দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ করে থাকে কিংবা নগদ লেনদেনে ১ দশমিক ৫ শতাংশ ছাড় দেয়, যা ক্যাশলেস সমাজ বিনির্মাণের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে বাংলা কিউআর চালু করেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি স্থানীয় উদ্ভাবন। এর মাধ্যমে একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড ডিজিটাল লেনদেনকাঠামো গড়ে উঠছে। ইতিমধ্যে ৪৩টি ব্যাংক, ৫টি এমএফএস ও ৩টি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার এতে যুক্ত হয়েছে। এখন চ্যালেঞ্জ হলো এটিকে শহর ছাড়িয়ে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া, যেখানে এখনো নগদ টাকাই প্রধান চালিকা শক্তি।

এ ছাড়া গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চালু হতে যাওয়া ‘মোজোলুপ’ ব্যবস্থা ক্যাশলেস ইকোসিস্টেমে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। বর্তমানে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা পাঠানো গেলেও এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএসে অর্থ স্থানান্তর কঠিন। মোজোলুপ কার্যকর হলে বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে নির্বিঘ্ন সংযোগ তৈরি হবে, যা সত্যিকারের ইন্টার–অপারেবল ডিজিটাল অর্থনীতির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, যা একটি বড় উদ্যোগ। ২০২৩ সালে এ উদ্যোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হলেও কার্যকর হয়নি, কিন্তু এখন নতুন করে এটি বাস্তব রূপ পাচ্ছে।

ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন, সম্পূর্ণ ভার্চ্যুয়াল অবকাঠামো এবং অনলাইন ক্রেডিট স্কোরিংয়ের ব্যবস্থা রাখার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তিনির্ভরতা যেমন বাড়বে, তেমনি শাখা বা এজেন্টনির্ভর ব্যয়ও কমবে। ক্রেডিট ব্যুরোর মাধ্যমে গ্রাহকের লেনদেন ইতিহাস বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঋণ অনুমোদনের ব্যবস্থা তৈরি হলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।

তবে এ পথ মোটেও সহজ নয়। বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তাহীনতা, প্রতারণা, ফিশিং ও সাইবার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করবে সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো কতটা শক্তিশালী তার ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে ডিজিটাল ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য একক সাইবার সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা এবং তাতে বাধ্যতামূলক অডিট চালু করা। এ ছাড়া গ্রাহক আস্থার জায়গাটি টেকসই রাখতে হলে জালিয়াতি বা সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত ও কার্যকর প্রতিকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

নগদবিহীন অর্থনীতির আরেকটি দিক হলো করকাঠামো। বর্তমানে অনেকে ডিজিটাল লেনদেনে অংশ নিতে চান না। কারণ, এতে করযোগ্য আয়ের হিসাব বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, এটি সময়োপযোগী। করকাঠামো এমন হওয়া উচিত, যাতে ডিজিটাল লেনদেনে কর–সুবিধা পাওয়া যায়। আবার নগদ লেনদেনে অতিরিক্ত ফি বা সারচার্জ আরোপ করা যেতে পারে, যা নগদ লেনদেনের প্রতি নির্ভরতা কমাতে কার্যকর হবে।

একই সঙ্গে দরকার জনসচেতনতা ও প্রণোদনা। ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা জমা রাখার পর মানুষ যদি প্রতিটি কেনাকাটায় সহজে ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারে, তাহলে অভ্যাস বদলানো কঠিন নয়। এ জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যৌথভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা তহবিল গঠন করতে পারে। যেমন নগদ ভর্তুকির মতোই ডিজিটাল লেনদেনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নগদ প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ এখন এমন এক অর্থনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও প্রযুক্তিনির্ভরতা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে ১৮ কোটি ৮৮ লাখ মোবাইল সংযোগ, ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৯ কোটি ৩০ লাখ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী থাকাটা একটি বিশাল সুযোগ। এই জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে যদি ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় আনা যায়, তবে নগদ টাকার ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।

অতএব বাংলাদেশের ক্যাশলেস ভবিষ্যৎ কেবল প্রযুক্তিগত নয়, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও রাজস্ব বৃদ্ধির পথও খুলে দিতে পারে। কিন্তু এর জন্য দরকার সমন্বিত ইকোসিস্টেম। যেখানে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসরকারি খাত ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করবে। রাতারাতি নয়, ধাপে ধাপে হলেও যদি এই যাত্রা এগোয়, তবে একদিন হয়তো আমরাও দেখতে পাব নগদবিহীন অর্থনীতির এক আধুনিক বাংলাদেশ। যেখানে নগদ টাকার সঙ্গে সঙ্গে সময়, খরচ ও দুর্নীতি কমবে। অর্থনীতির মূলধারায় পদার্পণের প্রক্রিয়াও হবে বেগবান।

মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড জ ট ল ল নদ ন নগদ ট ক র র উদ য গ ল নদ ন র ক র যকর ন র ভরত র ব যবস ব যবস থ ন র ভর র অর থ র জন য গ র হক ক উআর র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে বিনা নোটিশে বন্ধ হবে গণমাধ্যমের পোর্টাল: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের পোর্টালে এখনো জুয়া ও অনিরাপদ কনটেন্টের বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ কথাগুলো বলেন।

জুয়ার প্রচার বন্ধে গণমাধ্যমকে ‘ধরার’ কথা উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, তাঁরা গত পরশু দিন পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। গতকাল পর্যন্ত তাঁদের তালিকা যেটা আছে, সেখানে তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন, যুগান্তর, ভোরের কাগজ, ইনকিলাব, মানবকণ্ঠ, জাগো নিউজ, বাংলাদেশ ২৪ অনলাইন, আওয়ার নিউজ ২৪—এ ধরনের অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না। এগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি সভার শুরুতে জানান, সরকার ওয়েব ক্রলিং (ইন্টারনেট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি) করে দেখেছে, কোনো কোনো এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্টের সঙ্গে জুয়ার সম্পর্ক আছে। প্রতি সপ্তাহেই এ ধরনের অ্যাকাউন্টের তালিকা হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন দেয়, তা বন্ধ করার একটা এসওপি তৈরি হচ্ছে। সরকারের হিসেবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েবলিংক বন্ধ করার পর এই চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড না, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, এসব গ্রুপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের প্লেয়ার হয়ে যুক্ত করতে হবে। যাতে কারা এসব চালায়, তাদের ধরা যায়, কী হচ্ছে জানা যায়। দেশে জুয়া, পর্নোগ্রাফি বন্ধে সব পক্ষের সক্রিয় ভূমিকা লাগবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে বিনা নোটিশে বন্ধ হবে গণমাধ্যমের পোর্টাল: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • ইন্টারঅপারেবিলিটির পথে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেরিতে হলেও ভালো শুরু