ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড, প্রথমবার ৫০ ওভার করলেন স্পিনাররা
Published: 21st, October 2025 GMT
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লিখা হয়ে গেল। ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ স্পিন বোলিং করার রেকর্ড গড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫০ ওভার করেছেন ৫ স্পিনার। এর অর্থ, ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবার এক ইনিংসে পেস বোলার হাত ঘোরালেন না ২২ গজে। এমন না যে তাদের একাদশে পেস বোলার ছিলেন না। জাস্টিন গ্রেভস একাদশে থাকলেও অধিনায়ক শেই হোপ তার হাতে বল তুলে দেননি।
১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি ওয়ানডে ক্রিকেটের পথ চলা শুরু। মিরপুরে আজ হচ্ছে ৪৯১২তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন কোনো ম্যাচ হয়নি যেখানে কোনো পেসার এক ওভারও করেননি। ১৯৯৬ সালে এক ইনিংসে শ্রীলঙ্কা স্পিনারদের দিয়ে করিয়েছিল ৪৪ ওভার। আজ সেই রেকর্ড চুরমার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভার করাল স্পিনারদের দিয়ে।
আরো পড়ুন:
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ৫ বোলার
টি-টোয়েন্টিতে ৩৪ বলে সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়লেন ভারতের ব্যাটার
একাদশে গ্রেভস থাকায় পেস বোলার বোলিংয়ে আসবেন এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২২ গজে চমক হয়ে আসেন আলিক আথানজে। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন ডোমিনিকার ডানহাতি অফস্পিনার আথানজে। এর আগে তার ১৪ ওয়ানডেতে দুইবার বোলিং করেছিলেন। ২০২৩ সালে ভারতের বিপক্ষে ব্রিজটাউনে ১ ওভার। ২০২৪ সালে পাল্লেকেল্লেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ওভার।
মাত্র ৪ ওভার বোলিং করার অভিজ্ঞতা থাকা আথানজে আজ করলে ১০ ওভার। রান দিলেন মাত্র ১৪। উইকেট পেলেন ২টি। বোলিং স্পেলে ৫০টিই ছিল ডট। ১.
গতকাল রাত আড়াইটায় বাংলাদেশে এসে পৌঁছান আকিল। মিরপুরের উইকেট দেখে তাকে দ্রুত উড়িয়ে আনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গভীর রাতে এসে আজ দুপুরে মাঠে নেমে পড়েন বাঁহাতি স্পিনার। ১০ ওভারে ৪১ রানে ২ উইকেট নেন তিনি।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২১৩ রান করেছে। ৭ ইনিংস পর বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারল। বাংলাদেশও এক পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছে, মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া নাসুম আহমেদ, তানভীর ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন আছেন।
স্পিনে স্পিনে এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জেতে, কার মুখে হাসি ফোটে সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক র ক ট র কর ড উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
হাজার প্রদীপে আলোকিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়
সন্ধ্যার আকাশ ঢেকে গেছে নরম কুয়াশায়। আকাশের বুক জুড়ে নরম কুয়াশার পরত, আর মাটির উপর ঝলমলে হাজার প্রদীপের সারি। সব মিলিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যা যেন আজ অন্যরকম।
ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে শুরু করে বাদামতলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট প্রদীপ—যেন কারো সূক্ষ্ম আঁচড়ে আঁকা আলোর নদী। প্রতিটি শিখা যেন অন্ধকারকে ভাঙতে চায়, হৃদয়ের অজানা এক অদৃশ্য পথ দেখায়।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের ৫ রুট, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে বসেছে প্রতিমার হাট
প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে দীপাবলি উদযাপন করা হয়। দীর্ঘ সময় পর সোমবার (২০ অক্টোবর) দ্বিতীয়বারের মতো এবার শ্যামা কালীপূজাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করে ‘বাণী অর্চনা সংঘ’। শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি আলপনা আর মাটির প্রদীপে আজ আলোকিত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
এর আগে, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন ট্রান্সপোর্ট চত্বরে। কেউ হাতে প্রদীপ নিচ্ছেন, কেউ ঝাড়বাতি জ্বালাচ্ছেন, কেউবা বন্ধুর সঙ্গে হাসিতে মেতে উঠছেন।
সন্ধ্যা নামতেই এক জাদুকরী দৃশ্যে রূপ নেয় পুরো ক্যাম্পাস। সারি সারি প্রদীপের আলোয় ক্যাম্পাসের লাল ইটের পথ হয়ে ওঠে সোনালি। বাতাসে ভেসে আসছে ধূপের গন্ধ। হাসির ঝলক আর আলোর মায়ায় মুহূর্তগুলো থেকে যায় স্মৃতির ভাঁজে।
এক শিক্ষার্থী বললেন, “সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষা, ব্যস্ততা— আজকের এই সন্ধ্যা যেন একটু থেমে থাকার দিন। প্রদীপ জ্বালানোটা শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটা উপলক্ষ।”
বাণী অর্চনা সংঘের সভাপতি অনিক মালো বলেন, “ক্যাম্পাসে দীপাবলীর উৎসব উদযাপন করতে পেরে নিজের কাছে খুব উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সব অপশক্তি দূর হবে, এটা আশা করি।”
মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি প্রদীপের আলো বাতাসে কাঁপছে, যেন এক জীবন্ত শিখা। কেউ বাজি ফুটাচ্ছে, কেউ কেউ শাড়ি পরে এসেছে–মনোযোগ ভালো ছবির ফ্রেমে। সেলফি তুলছে। তবে উৎসবের মধ্যে কোথাও নেই বিশৃঙ্খলা— আছে শুধু উচ্ছ্বাস আর আলোর স্নিগ্ধতা। মিষ্টিমুখ চলছে, কেউ মিষ্টি মুখে তুলে বলছে, “এত সুন্দর ক্যাম্পাস আগে দেখিনি!”
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ঋতু রানী বলেন, “পরিবারের বাইরে প্রথমবারের মত দীপাবলি পালন করছি। সবারর অংশগ্রহণে বেশ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হচ্ছে।”
ট্রান্সপোর্ট চত্বরে তখন চলছে আরেক দৃশ্য। গানের আসর বসেছে ছোট করে। কেউ গিটার হাতে, কেউ তাল দিচ্ছে তালি দিয়ে। লালন গীতির সুরের ভেলায় মিলেমিশে যাচ্ছে দীপের আলো আর তারুণ্যের হাসি। রাত যত গভীর হচ্ছে, প্রদীপগুলো তত নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চোখে তখনও জ্বলছে আলো। সেই আলো শুধু প্রদীপের নয়। একাত্মতার, সৌন্দর্যের, আর জীবনের প্রতি ভালোবাসার আলো।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন, “শ্যামা পূজায় পৃথিবীর সকল অশুভ শক্তি বিরুদ্ধে আমরা প্রদীপ প্রজ্বলন করি। আমরা চাই এই প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সব খারাপ শক্তির বিনাশ হোক।”
আজকের এই এক হাজার প্রদীপের সন্ধ্যা যেন শুধু আলোর উৎসব নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অন্তরের এক দীপান্বিত যাত্রা। প্রতিটি শিখা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, জীবন ছোট ছোট আলোয় পূর্ণ, আর সেই আলোর উষ্ণতায় আমরা সবাই এক।
ঢাকা/মেহেদী