স্পিনারদের আনন্দে সুপার ওভার রোমাঞ্চ
Published: 21st, October 2025 GMT
নিজেদের স্বর্ণযুগে কার্টলি এমব্রোজ, কোর্টনি ওয়ালস ভাগ্যিস বাংলাদেশ সফর করেননি! নয়তো পেসার হওয়ার খেসারত দিতে হতো নিশ্চিতভাবেই। একাদশে থাকতেন। কিন্তু বোলিং করার সুযোগ পেতেন না। যেমনটা জাস্টিন গ্রেভস এখন করছেন। কিংবা শেফরন রাদারফোর্ড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট মানেই আক্রমণাত্মক বোলিং, ভয়ংকর বাউন্সার, গতি ও সুইংয়ের সুন্দর প্রদর্শনী। যা দিয়ে তারা বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করেছে লম্বা সময়। অথচ এমন একটা সময় আসল যখন তাদের একাদশে পেসার খেললেও, তার হাতে বল দেওয়ার সুযোগ হলো না অধিনায়কের! মিরপুরের স্পিন রাজ্যে পেসার খেলানো মানে বিলাসিতা! অন্তত শেই হোপ এই বার্তাই ক্রিকেট বিশ্বকে দিতে চাইলেন।
আরো পড়ুন:
এশিয়া কাপ ট্রফি নিয়ে নতুন নাটক: নাকভিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠালো বিসিসিআই
শেষ বিকেলের দুই আঘাতে এগিয়ে গেল পাকিস্তান
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং ইনিংসের ৫০ ওভার মধ্যে ৫০ ওভারই করলেন স্পিনাররা। গতি দিয়ে হাত ঘুরাতে পারেন এমন বোলার একাদশে আছেন দুজন। কিন্তু স্পিন দূর্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই সাহসটা দেখাল না। তাতে প্রায় ৫৫ বছরের ওয়ানডে ক্রিকেট নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো।
মিরপুরের ২২ গজে ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪৯১২তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলো। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় ওয়ানডে ক্রিকেটে ম্যাচে এক ইনিংসে হয়নি যেখানে কোনো পেসার এক ওভারও করেননি। ১৯৯৬ সালে এক ইনিংসে শ্রীলঙ্কা স্পিনারদের দিয়ে করিয়েছিল ৪৪ ওভার। আজ সেই রেকর্ড চুরমার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভার করাল স্পিনারদের দিয়ে।
অতিথিদের এমন বোলিং আক্রমণের একমাত্র কারণ মিরপুরের উইকেট। যেখানে বল এদিক-ওদিক ছোবল দিল। চিরায়িত উচুঁ-নিচু বাউন্স হয়নি অবশ্য। বাংলাদেশের বোলিংয়ে একই চিত্র। চার স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানো বাংলাদেশের একমাত্র পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। মিরাজ অবশ্য তাকে দিয়ে ৮ ওভার বোলিং করিয়েছে। দুই পক্ষের স্পিনারদের মধ্যকার লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসতে চরম নাটকীয়তা হয়েছে।
বাংলাদেশের করা ২১৩ রানের জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজও করে ২১৩ রান। তাতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সুপার ওভারের অভিজ্ঞতা পায়। বাংলাদেশের মাটিতেও হয় প্রথম সুপার ওভার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ওভারে ৫ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি। হিসেবের অমিলে শেষ ওভার মিরাজ কাকে দিয়ে করাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু সাইফ বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। প্রথম দুই বল আকিলকে ডট খেলান। পরের দুই বলে আকিল ও হোপ ২ রান নেন। পঞ্চম বলে আকিল আউট হলে উত্তেজনা ছড়ায়। শেষ বলে ৩ রানের প্রয়োজেন পিয়েরে ব্যাট চালালেও মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন। দৌড়ে সোহান সেই ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু গ্লাভস ফসকে বেরিয়ে যায়। ওই সুযোগে ২ রান নিয়ে ম্যাচ টাই করেন হোম ও পিয়েরে।
সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০ রান তোলেন। মোস্তাফিজ রাদারফোর্ডের উইকেট পাওয়ার পরও হোপের শেষ বলে বাউন্ডারিতে পুঁজি দুই সংখ্যায় যায়। জবাবে বাংলাদেশ দুইটি ওয়াইড-একটি নো বল পাওয়ার পরও ৯ রানের বেশি করতে পারেনি। ১ রানের জন্য ম্যাচ জিততে পারেননি বাংলাদেশ। সুপার ওভার জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ এ সমতা আনল ক্যারিবীয়রা।
তবে যতই উত্তেজনা ছড়াক, যত নাটকীয়তা হোক প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। উদ্দেশ্যহীন, স্পিনারদের আনন্দের দিনে নিশ্চিতভাবেই নিরানন্দ হচ্ছে ক্রিকেট। আধুনিক ক্রিকেট যে ধাঁচে এগিয়েছে, যে গতিতে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে সেখানে নিরাপদ ক্রিকেট নষ্ট করে দিচ্ছে ক্রিকেটীয় আমেজ। যেখানে সাফল্য কেবলই একটি সংখ্যা। যা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে সামান্য সময়ের জন্য। কিন্তু বড় পরিসরে, ক্রিকেটের বিশাল ক্যানভাসে রং ছড়াতে পারবে সামান্যই। বারবার যার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
দুই দল মিলিয়ে ১০০ ওভার বোলিং করেছে (সুপার ওভার বাদে)। যেখানে স্পিনাররা করেছেন ৯২ ওভার। এর আগে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭৮.
উইকেটে রান তোলা কঠিন ছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ কবে শর্ট লেগ, দুই স্লিপ নিয়ে ফিল্ডিং সাজাতে দেখেছেন। মিরপুর সেই স্বাদ ফিরিয়ে এনেছে। ডট বলের মহড়া ছিল দুই ইনিংসেই। আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসে ডট ছিল ১৯৩টি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৭৩টি।
বাংলাদেশের পুঁজি দুইশ ছড়ায় রিশাদ হোসেনের শেষের ঝড়ে। নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৯ রান করেন। স্ট্রাইক রেট ছিল ২৭৮.৫৭। তাতে দল বলার মতো পুঁজি পায়। সেই সঙ্গে একটি রেকর্ডও করেন তিনি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের অন্তত ২৫ রানের ইনিংসে এর চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে আর কেউ ব্যাট করতে পারেননি। এর আগের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট ছিল সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার, কেনিয়ার বিপক্ষে ২০০৬ সালে করেছিলেন ১৬ বলে ৪৪ রান। স্পিন বান্ধব উইকেটে বাকিরা পরীক্ষা দিয়েছে। সৌম্য ৮৯ বলে ৪৫, মিরাজ ৫৮ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন।
আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে রাখেন অধিনায়ক হোপ। ৬৭ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাকি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেসি কার্টি ৩৫, গ্রেভস ২৬ রান করেন। ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে রিশাদ ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন।
স্বল্প পুঁজিতে দুই দলই তীব্র লড়াই করেছে। ম্যাচ টাইয়ের পর সুপার ওভারে বিজয়ী নিষ্পত্তি হয়েছে। মূল ম্যাচে সহজ একটি ক্যাচ হাতছাড়া করে ম্যাচ টাই করার পর, সুপার ওভারে ৯ বল খেলার সুযোগ পেয়েও ১১ রান করতে না পারা নিশ্চিতভাবেই চরম ব্যর্থতা। তাতে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা আরো বাড়ল।
একদিন পর বৃহস্পতিবারই সিরিজের শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। দুই ওয়ানডের মতো শেষটায় স্পিনাররাই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় নাকি দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর য় র পর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
এক ঘন্টায় ২০ লাখ রিয়্যাক্ট! প্রথমবার কন্যার মুখ দেখালেন দীপিকা–রণবীর
এ যেন উৎসবের চমক, দীপিকার ভক্তদের জন্য এক বড় উপহার। দীপাবলির দিনেই অবশেষে প্রকাশ্যে এল দীপিকা পাড়ুকোন ও রণবীর সিংয়ের কন্যা দুয়া। প্রায় এক বছর আগে প্রথম দীপাবলিতেই মেয়ের নাম জানিয়েছিলেন এই তারকা দম্পতি। এ বছর উৎসবের আবহে দেখালেন মেয়ের মুখও।
আজ (মঙ্গলবার) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঁচটি ছবি শেয়ার করেছেন দীপিকা ও রণবীর। ছবি প্রকাশের পর যেন অপেক্ষায় ছিলেন ভক্তরা—মুহূর্তেই ভাইরাল হয় পোস্টটি। মাত্র এক ঘন্টায় রিয়্যাক্ট পড়ে ২০ লাখলাখের বেশি! মন্তব্যের বন্যা বইছে ইনস্টাগ্রামে।
দীপাবলির সাজে মা-মেয়ে
ছবিতে দেখা যাচ্ছে দীপিকার সঙ্গে রং মিলিয়ে সেজেছে ছোট্ট দুয়া। দুজনের পরনেই লাল রঙের জমকালো চুড়িদার, সঙ্গে মানানসই সোনার গয়না। দুয়ার মাথার দুই দিকে ঝুঁটি বেঁধেছেন দীপিকা। পাশে রণবীর সিং, সাদা ও ঘিয়ে রঙের শেরওয়ানিতে দীপাবলির ভাবনায় সাজা।
ছবিগুলোয় কখনো দুয়া হাসছে, কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখাচ্ছে—মা-বাবার আদরে মাখামাখি প্রতিটি ফ্রেম। শেষ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দীপিকার কোলে বসে মা-মেয়ে দুজনেই জোড়হাতে প্রার্থনা করছেন। ছবির ক্যাপশনে লেখা, ‘দীপাবলির শুভেচ্ছা’।
ভক্তদের কেউ লিখেছেন, ‘দুয়া ঠিক দীপিকার মতো,’ কেউ বলছেন, ‘রণবীরের ছাপ স্পষ্ট।’ নেট দুনিয়ায় ছোট্ট দুয়াকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের ঝড়।
২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন দীপিকা পাড়ুকোন। গত বছর গণেশচতুর্থীর পরের দিনেই ইনস্টাগ্রামে মেয়ের নাম ‘দুয়া’ জানিয়েছিলেন তিনি, দিয়েছিলেন ছোট্ট পায়ের ছবি। ঠিক এক বছর পর দীপাবলিতেই মুখ প্রকাশ করে যেন পূর্ণতা দিলেন সেই মুহূর্তকে।
প্রেম থেকে পরিবার
রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোন ২০১৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ প্রেমের পর তাঁদের জীবনে এসেছে ছোট্ট দুয়া, ভালোবাসার পরিপূর্ণ প্রতীক হয়ে। দীপাবলির আলোয় তাঁদের পরিবারে এই খুশির রোশনাই ছড়িয়ে দিয়েছে বলিউডজুড়ে আনন্দের আলো।