নওগাঁর ৬ আসন: অসন্তোষ থাকলেও প্রচারণায় বিএনপি
Published: 21st, November 2025 GMT
নওগাঁ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনুসারীরা। বাকি দুটি আসনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে এখনো মাঠে নামেননি মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতাদের অনুসারীরা।
তবে একাংশের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা কর্মী–সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আগে থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে আছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জেলার সব কটি আসনে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বললেও মাঠে দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) দুটি আসনে এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) একটি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা নেই জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক ইফতারুল ইসলাম।
তবে একাংশের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা কর্মী–সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আগে থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে আছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জেলার সব কটি আসনে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বললেও মাঠে দৃশ্যমান তৎপরতা নেই।নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার)
নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রার্থী করেছে দলটি। নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, মোস্তাফিজুর ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এমপি ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছালেক চৌধুরী। ছালেক ও তাঁর অনুসারীদের পাশে পাচ্ছেন না মোস্তাফিজুর।
ছালেক চৌধুরী বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাহবুবুল আলম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল হক শাহ চৌধুরী, এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব নিশাত আহমেদ মাঠে সক্রিয় আছেন।
নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, মোস্তাফিজুর ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এমপি ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছালেক চৌধুরী। ছালেক ও তাঁর অনুসারীদের পাশে পাচ্ছেন না মোস্তাফিজুর।নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট)
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আরও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী। মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন নাজিবুল্লাহর অনুসারী নেতা–কর্মীরা।
সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘এখানে বিএনপি সব সময় ঐক্যবদ্ধ ছিল। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য এখনো সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে।’
জেলা শাখার কর্মপরিষদ সদস্য এনামুল হককে এখানে প্রার্থী করেছে জামায়াত। নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি ভোট চাইতে মানুষের কাছে যাচ্ছেন। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
দীর্ঘ সময় ধরে আমি এলাকায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি। মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সবখানেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদানওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী)
দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে আসনটিতে বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা। মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকীও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ফজলে হুদার নাম ঘোষণা করার পর থেকে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন রবিউল ও পারভেজের কর্মী-সমর্থকেরা।
ফজলে হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমি এলাকায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি। মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সবখানেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য মাহফুজুর রহমান। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলটির জেলা কমিটির সদস্য মুফতি নাসির বিন আসগর।
নওগাঁ-৪ (মান্দা)
১৯৯১ সালে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী নাছির উদ্দিন বিজয়ী হন। তবে হেরে যান ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ আসনে জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। এবার প্রার্থী করেছে জেলার আমির খন্দকার আব্দুর রাকিবকে। আব্দুর রাকিব বলেন, ‘দাঁড়িপাল্লার জয় নিশ্চিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। নিয়মিত গণসমাবেশ, সভা-সমাবেশ করছি। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
বিএনপি এখানে প্রার্থী করেছে উপজেলা বিএনপির সদস্য ইকরামুল বারীকে। তবে পাশে পাচ্ছেন না দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের। মান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম মতিন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে তাঁর অনুসারীরা বিক্ষোভ করছেন। এম এ মতিন বলেন, ‘সব আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। দুর্দিনে তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। পুনর্বিবেচনা হলে মনোনয়ন পেতে পারি। তবে দলই সবার আগে।’
এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে সংগঠনটির জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহরাব হোসাইন ওয়ারেস মাঠে আছেন।
নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর)
এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান, কেন্দ্রীয় সহ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক নজমুল হক, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান এবং সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান। মাঠে আলোচনা আছে, নির্বাচনী জোট হলে অন্য একটি দলকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।
এখানে এনসিপির প্রার্থী হিসেবে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন দলের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। মনিরা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপি এই নির্বাচনকে দল গোছানোর উপলক্ষ হিসেবে নিয়েছে। ব্যানার, পোস্টারের মাধ্যমে শিগগিরই প্রচারণা শুরু হবে। বিএনপির প্রার্থী না দেওয়ায় তৈরি হওয়া গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আসনটিতে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ স ম সায়েম দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা আব্দুর রহমান মাঠে আছেন।
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য খবিরুল ইসলাম। ইসলামী আন্দোলন তাদের প্রার্থী হিসেবে এখানে মুফতি রফিকুল ইসলামকে চূড়ান্ত করেছে।নওগাঁ-৬ (রানীনগর ও আত্রাই)
তিনবারের সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির এবারও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দল মনোনয়ন দিয়েছে আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলামকে। তাঁরা ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন।
শেখ রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সাধারণ মানুষ মনেপ্রাণে ধানের শীষে ভোট দিতে চায়। নির্বাচন হলে এখানে ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।’
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য খবিরুল ইসলাম। ইসলামী আন্দোলন তাদের প্রার্থী হিসেবে এখানে মুফতি রফিকুল ইসলামকে চূড়ান্ত করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দল য় প র র থ ন য় মতপ র ব এনপ র স প রস ত ত র পর থ ক র অন স র র সদস য র রহম ন র উপজ ল ল ইসল ম এই আসন কম ট র র কর ম করছ ন এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
পিসিবির নির্বাচক ও যুব উন্নয়নপ্রধানের পদ ছাড়লেন আজহার আলী
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নির্বাচক ও যুব উন্নয়ন বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আজহার আলী। পিসিবি কিংবা আজহার নিজে ব্যাপারটি প্রকাশ না করলেও এ খবর নিশ্চিত করেছে ইএসপিএনক্রিকইনফো। ১২ মাস এই পদে দায়িত্ব পালনের পর সরে দাঁড়ালেন আজহার।
ইএসপিএনক্রিকইনফো জানতে পেরেছে, পিসিবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মতপার্থক্যের জেরে পদত্যাগ করেছেন আজহার। বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নেয় সরফরাজ আহমেদকে পিসিবি পাকিস্তান শাহিনস (এ দল) ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর। যদিও সরফরাজের এ নিয়োগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি পিসিবি। সফর আয়োজন, পরিচালনা, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প—এসব সরফরাজের দায়িত্বের আওতাভুক্ত।
ক্রিকেটবিষয়ক খবরের এই পোর্টাল তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, আজহারের সম্ভবত মনে হয়েছে, সরফরাজের নিয়োগটি তাঁর দায়িত্বের সঙ্গে মিলে যায় এবং এ কারণে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরফরাজ আহমেদ