“বাজার ব্যবস্থা যদি মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বাসযোগ্য বা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে। দিতে হবে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করার স্বাধীনতা।”

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। আলোচনায় তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আরো পড়ুন:

আতিউর-বারাকাতসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি বোর্ড গঠনে নীতিমালা অনুমোদন

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ হলো দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীল রাখা। প্রবৃদ্ধিকে সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। একইসঙ্গে আর্থিক খাতে সুশাসন ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।”

তিনি আরো বলেন, “অতীতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সুদহার ও ডলারের দাম ঠিক হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে কয়েকটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমলাদের গভর্নর করা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা দিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার, ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনসহ অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, ব্যবসায়িরা উপস্থিত ছিলেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, “ব্যাংক খাতের সব সূচক খারাপ হয়ে পড়েছে। আগে থেকেই আমরা তা বলেছি। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর বিষয়টি আনুষ্ঠানিক হয়েছে। ব্যাংক খাতের প্রকৃত চেহারা বেরিয়ে এসেছে। এতদিন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করে দিতে হবে। ব্যাংক খাতে দ্বৈত শাসন চলবে না। পাশাপাশি এই বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। পরবর্তী সরকার তার স্বীকৃতি দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা কার্যকর হবে।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যাংক কোম্পানি আইন রয়েছে। কিন্তু আইনে যা থাকুক না কেন ব্যাংক খাতের উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা বেশি জরুরি।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা দিলেও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। আগে গ্রাহক খেলাপি হত, এখন ব্যাংক খেলাপি হয়ে পড়েছে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমরা কখনো বাংলাদেশ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় রাজনৈতিক নিয়োগ দেইনি। বাংলাদেশের ব্যাংকে স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতা দিতে হবে। অর্থনীতির সবকিছু অটোমেশন করে ফেলতে হবে। তাহলে দেশের দুর্নীতি কমবে।”

ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক র স ব ধ নত র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

দিল্লির অদূরে বিপুল বিস্ফোরক, একে ৪৭ উদ্ধার, ধৃত কাশ্মীরি চিকিৎসক

ভারতের রাজধানী দিল্লির অদূরে হরিয়ানার ফরিদাবাদে বিপুল বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ, হরিয়ানা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ অভিযানে এই বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। পুলিশের অনুমান, নাশকতামূলক কাজের জন্য এই বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ জড়ো করা হয়েছিল।

উদ্ধার করা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১৪টি থলেবোঝাই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট যার পরিমাণ ১০০ কেজির বেশি, একটি একে ৪৭ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, ৮৪টি কার্তুজ, ৫ লিটার রাসায়নিক, টাইমার ও অন্যান্য পদার্থ, যা দিয়ে অন্তত ৩৫০ কেজি আইইডি বিস্ফোরক তৈরি করা যায়।

ফরিদাবাদের পুলিশ কমিশনার সত্যেন্দ্র গুপ্ত সংবাদমাধ্যমকে জানান, জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফরিদাবাদ পুলিশ এই অভিযান চালিয়েছে। সোমবার তাঁদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। কোথায় নাশকতার ছক করা হচ্ছিল, কাশ্মীর না অন্যত্র, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, এই বিপুল বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এক ডাক্তারের বাড়ি থেকে।

সেই ডাক্তারের নাম মুজাহিল শাকিল। তিনি জম্মু–কাশ্মীরের বাসিন্দা, যদিও ডাক্তারি পাস করেছেন ফরিদাবাদের আল ফালাহ্ স্কুল অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে। ফরিদাবাদের ধাউজ গ্রামে তিন মাস আগে তিনি এক বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই যাবতীয় সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।

ডা. শাকিলকে গত ৩০ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গ্রেপ্তার করা হয় আর এক কাশ্মীরি ডাক্তার আদিল আহমদ রাঠেরকে। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র পাচার করার অভিযোগ আছে। এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ডা. শাকিলকে নিয়ে জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ আসে ফরিদাবাদে। পুলিশ কমিশনার সত্যেন্দ্র গুপ্তা জানান, উদ্ধার করা সামগ্রী আরডিএক্স নয়। আগে যদিও তেমনটাই সন্দেহ করা হয়েছিল।

প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, দুজনেই এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। উত্তর ভারতের কোনো এক স্থানে নাশকতার চক্রান্ত করা হচ্ছিল। তাঁরা সেই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। সেই জন্য এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জড়ো করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার করা সামগ্রীর ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে।

নাশকতার এই ছক কোন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন করছিল, সেই সংগঠনের ‘স্লিপার সেল’ জম্মু–কাশ্মীরসহ আর কোথায় সক্রিয়, আরও কে কে এর সঙ্গে জড়িত, বিস্ফোরক তৈরির এত সামগ্রীই–বা কীভাবে দিল্লির অদূরে জড়ো করা হলো, সবকিছু তদন্ত করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ। এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের সঙ্গে কাশ্মীরের যোগের খবর ইদানীং পাওয়া যায়নি। পুলওয়ামা–কাণ্ডের পর কাশ্মীরি যোগাযোগের মাধ্যমে এত বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনাও এই প্রথম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ